ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দীপংকর গৌতম

ব্রাত্যজনের ভাষা

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ব্রাত্যজনের ভাষা

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মানুষ ভাষার স্বাধিকার পেলেও মুক্তি আজও পেয়েছে কিনাএটা ভাবনার বিষয়। দেশে ব্রাত্যজনের ভাষাসহ ভাষাও বহু ডাল পালা শাখা প্রশাখা রয়েছে সেগুলো সংগ্রহের কোন উদ্যোগ আজ অবধি নেয়া হয়নি। নেয়ার কোন লক্ষণও নেই। অথচ ভাষা মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। ভাষা মানুষ কিংবা জীবজগতের অন্য কোন প্রজাতির স্বাতন্ত্র্যসত্তা প্রকাশের অন্যতম নিদর্শন। গ্রিকরা মানুষের ভাষাকে লোগস্ (Lo’gos) বলত। ইতিহাস সে কথাই বলে। কিন্তু কেন বলত সেটা জানা খুবই জরুরী। লোগস্ (Lo’gos) শব্দের বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘চিন্তাশক্তি’। মানুষের চিন্তাশক্তির প্রকাশ যেহেতু ভাষার মধ্য দিয়ে, তাই হয়তো ভাষা শব্দের উৎপত্তি। এমনকি ইতর প্রালীও তার প্রয়োজন নানা প্রকার ধ্বনির সাহায্যে প্রকাশ করে। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, এসব ধ্বনি ভাষা নয়। ইতর প্রাণীর সঙ্গে তারা মানুষের পার্থক্য করেছেন এভাবেই। তবে এক সময় মানুষ ও পশুর ভাষার ভেতরে যে প্রভেদ ছিল না তা সত্য। মানুষের ভাষা সৃষ্টি হয়েছে মানসিক উৎকর্শের ফলে। চিন্তাশক্তির বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাষাও ক্রমশ রূপ পেতে থাকে। ভাষাতাত্ত্বিকগণ মনে করে যে, ক্রমবিকাশের ফলে পৃথিবীতে ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। এ বিষয় অবশ্য নানা মুনির নানা মত রয়েছে। প্রাচীন যুগের মানুষের ধারণা ছিল ভাষা ভগবানের সৃষ্টি বলে এখনও মানুষের বিশ্বাস রয়ে গেছে। বাইবেলে ভাষা সৃষ্টির জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছার কথা বর্ণিত রয়েছে। ধর্মবিশ্বাসীদের ধারণা, ঈশ্বরের ইচ্ছাই ভাষার সৃষ্টির মূল কারণ। তাদের যুক্তি হচ্ছে, ঈশ্বরের সৃষ্ট বৈচিত্র্যের মধ্যে মানুষের মনই শ্রেষ্ঠ। মন ধাতু হতে মানুষ শব্দের সৃষ্টি হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে-যার বুদ্ধিবৃত্তি আছে। ভাষাতত্ত্ববিদগণ এ যুক্তি মানতে নারাজ। তাদের কথা হচ্ছেÑ পৃথিবীর অন্যান্য বস্তুর মতো সভ্যতারও ক্রমবিকাশ ঘটেছে। ঘটেছে ভাষারও। তবে আদিম যুগে মানুষ যে ইশারা-ইঙ্গিতের কিংবা সঙ্কেতের সাহায্যে কথা বলত তার বহু নিদর্শন রয়েছে। ও সব ইঙ্গিতময়ী ভাষার পরবর্তী অবস্থাই কণ্ঠোচ্চাবিত অর্থবান ভাষার সৃষ্টি করেছিল। আধুনিক ভাষাতত্ত্বে ভাষার বিভিন্ন স্তরের ধ্বনি, রূপ ও পদের সংগঠন বিশ্লেষণ করা হয়। এখন ভাষা বলতে প্রধানত মুখের ভাষাকেই বোঝায়। কিন্তু ভাষার এই পরিণত অবস্থায় আসতে তিনটি স্তর পার হয়ে আসতে হয়েছে বলে ভাষাতাত্ত্বিকরা মনে করেন। এই তিনটি স্তর হচ্ছে- ১. সঙ্কেত ও ইঙ্গিত, ২. কথ্য ভাষা, ৩. লেখ্য ভাষা। কিন্তু তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, যদি ভাষা বিবর্তন একই পথে আসে তাহলে বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে ভাষার পার্থক্য কেন? অর্থাৎ ইতিহাসে ভিন্ন ‘ভাষা সম্প্রদায়ের’ উল্লেখ পাওয়া গেলেও কেন এ ঘটনা ঘটল তার কোন ইঙ্গিত আমাদের হাতে আসেনি। তবে যতদূর চিন্তার ভেতরে টানা যায় তা হচ্ছে আলাদা ভাষা অর্থাৎ একই ভাষার মধ্যে আলাদা ‘ভাষা সম্প্রদায়’ গড়ে উঠেছে ভূ-প্রকৃতিগত কারণে। সাধারণত যেটা বিবেচ্য তা হচ্ছে- শ্রমজীবী মানুষের ভাষাই সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা। শ্রমজীবীদের সঙ্গে শ্রমজীবীদের সম্পর্কের কারণে তাদের ভাষাটা ক্রমশ জনগণের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে ভদ্রলোক (বিত্তশালী) সম্প্রদায়ের ভাষা ভদ্র হলে মূল টেকচারটা গড়ে ওঠে শ্রমজীবীদের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে আমরা একটা প্রভেদ সহসাই দেখতে পারি। শ্রমজীবীরাই মূল ভাষার নিয়ন্ত্রক। কিন্তু শিক্ষার সঙ্কট তাদের ভাষাকে ভিন্ন রকমের করতে বাধ্য করেছে। সেক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, সারা দেশের শিক্ষিত ভদ্রলোকের ভাষা এক কিন্তু শ্রমজীবীদের ভাষা এক নয়। শিক্ষিত লোকেরা চিঠি লেখে পঠিত বইয়ের অনুসারে পাওয়া শিক্ষা থেকে আর শ্রমজীবী ভাষাকে গঠন করে ভাব আদান-প্রদানের জন্য। শ্রমজীবী মানুষেরা যে ভাষার চর্চা করে তা ছড়ায় না বলেই আঞ্চলিক ভাষার ভিন্নতা দেখা যায়। তবে এই ভিন্নতার কারণ একদম ভৌগোলিক। ভূ-প্রকৃতিগতভাবে বাংলাদেশ নদীমাতৃক হলেও বিরান সমতলভূমি, পাহাড় ও সাগরসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাচার এখানে বিদ্যমান। ভাষার ’পরে এর প্রভার পড়ে। ফলে একটি অঞ্চলব্যাপী হলেও সুরে, বাচনে এর ব্যাপক প্রভার লক্ষ্য করা যায়। সবই হয় শ্রমজীবী মানুষের শ্রমকালীন সময়ের ভাষার আদান-প্রদানের মধ্যে দিয়ে। এখানে শ্রম দেবার স্থান মানে পেশাও একটি বিষয়। স্থানভেদে সুরে বিবর্তন আসে, আসে ভাষায়। যেমন- আমরা লক্ষ্য করি বরিশার অঞ্চলের ভাষা যশোর অঞ্চলের চেয়ে ভিন্ন সুরের। এক্ষেত্রেও কারণটি ভৌগোলিক। বরিশাল নদী বিধৌত অঞ্চল। এখানের শ্রমজীবীরা জেলে। বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন নদীতে মাছধরা কিংবা নৌপথে মালামাল নিয়ে বাণিজ্য করা এদের পেশা। এরা এক নৌকা থেকে অন্য নৌকায় কথা বলে- মনের ভাব প্রকাশ করে। খবর নেয় বাজারের চলতি দ্রব্যমূল্যের। খবর নেয় গ্রামের। প্রমত্তা নদীতে দুলতে থাকে নৌকা আর এরা জোরালো কণ্ঠে হাঁক দিয়ে জিঞ্জেস করে- এ-মনু স্বরূপকাডি গ্যাছেলা? সেখানে মাইক নেই, কণ্ঠ দিয়ে বোঝাতে হচ্ছে কথা। কথা বলতে বলতে নৌকা দোলে। ভেঙে যায় সুর। তৈরি হয় ভাষার ভিন্ন আঙ্গিক। আঞ্চলিকতা অভিধা পেয়ে ভাষা পূজ্য হয় কিংবা অবহেলার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। একই অবস্থা উত্তরবঙ্গের। বিরান সমতল ভূমিতে দাঁড়িয়ে এক কৃষক আরেক কৃষককে জিঞ্জেস করেÑ বাহে কোন যাইবেন? সাইরেনের চেয়েও জোরে একথা পৌঁছে যায় অন্য শ্রমজীবীর কানে। দূর-দূরান্ত মাইকের ব্যবহার ছাড়া সুরের এই বৈচিত্র্যের সঙ্গে শব্দকেও তারা সহজ ও সংক্ষিপ্ত করে নিয়েছে সুবিধামতো। শেষ শব্দটি যাতে বোঝা যায় সে জন্য তারা ভারি একটি শব্দ বা ‘উ’কার যুক্ত করেছে ভাষার সঙ্গে, যেমন- খাবু (খাবেন) কিংবা যাইবেন। ময়মনসিংহ অঞ্চলে আবার অবস্থা ভিন্ন তাদের কথায়ও সুর রয়েছে, বলা যায় সুর প্রধান। যেমন- খাইছুন দাদা বা কোথায় গেছিলাইন। কী সরল সুরেলা গলায় তার এই উপস্থাপন। একই বিষয়গত ধারণা আমাদের পোক্ত হয় নদী-হাওর-কিংবা সমতল এলাকার পেশাজীবীদের গানের বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেও। কিন্তু ভাষার ব্যাপ্তি এবং এত সমৃদ্ধ ভা-ার যে, এ বিষয়ে এ সহজেই কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না। যেমন বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে বিভিন্ন ভাষার মানুষের সম্মিলন এবং পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্যের ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের ভাষার সংমিশ্রণ এ অঞ্চলের ভাষাকে দিয়েছে স্বাতন্ত্র্যসত্তা। বহু ভাষার সম্মিলন ঘটেছে এ ভাষায়। আমরা যে বিষয়ে আলোচনা করব তার গৌরচন্দ্রিকা দিতে গিয়ে ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে ফেলেছি। এবারে আমরা মূল আলোচনায় চলে যাচ্ছি। যেখানে বাংলা ভাষার ভেতরে বয়েছে আরও বৈচিত্র্য, সেসব বৈচিত্র্যকে তুলে ধরার জন্যই এ প্রচেষ্টা। দুই. ‘ঠার’। অর্থ সাঙ্কেতিক ভাষা। ভাষা জন্মের আগে মানুষ সঙ্কেত বা ইঙ্গিতের মধ্যে দিয়ে তার ভাষা প্রকাশ করত। কিন্তু ভাষা পূর্ণাঙ্গ রূপে প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও মানে ১৯৫২ সালে একটি সফল ভাষা সংগ্রাম হওয়ার পরেও ঠারের কেন প্রয়োজন হলো বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। আমাদের দেশের হাওর অঞ্চল মানে অষ্টগ্রাম, ইটনা প্রভৃতি অঞ্চলে ‘সুহুম’ নামে একটি ভাষার অস্তিত্ব আমরা দেখতে পাই। ‘সুহুম’ নামটি এসেছে ফার্সি সুকুন থেকে। যার অর্থ কথাবার্তা। এ ভাষার মধ্যে ফার্সি ছাড়াও আরবি, পসতু, অহমিয়া, নাগরি, সংস্কৃত, হিন্দি, উর্দু ও বাংলা ক্রিয়াপদের সমন্বয় রয়েছে। ফলে এ ভাষা সহজবোধ্য নয়। তথাকথিত অশিক্ষিত মানুষের মধ্যেই সুহুম প্রচলিত। ধারণা করা হয়-প্রাথমিকভাবে জমিদার পরবর্তী সময় সরকারী কর্তা ও প্রভারশালী ব্যক্তিদের কাছ থেকে আত্মক্ষার জন্য শ্রমজীবী হতদরিদ্র মানুষেরা এসর ভাষা তৈরি করেছিল। ঠারের সবচে’ লক্ষণীয় দিক যেটা, এর আলাদা কোনো বর্ণমালা নেই। কিন্তু মুখে মুখে যেসব ভাষা চালু আছে, সীমিত এসব শব্দের ব্যবহারে সব কথাই বলা সম্ভব। আর এ ভাষা নিজে নিজের বলে সবার সামনে না বলা কথাগুলো বলে যেমন মনে আবেগ ঝাড়তে পারে তেমনি তাদের কথাবার্তা শুনে যে, কেউ কিছু মনে করবে তারও সুযোগ নেই। ফলে ‘ঠার’ হয়ে উঠেছে নিম্নবর্ণের মানুষের আত্মরক্ষার প্রতিবেদন। এ ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে একটু ইতিহাসের কাছে যেতে চাই। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে সমাজে কাজ থেকে পেশা এবং পেশা থেকে বিভাজন শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। এরপরে আসে ধর্মীয় প্রসঙ্গ। এ অঞ্চলে হিন্দু ও বৌদ্ধ থেকে বিশাল এক জনগোষ্ঠী মুসলিম ধর্মে দীক্ষিত হবার কথা সবারই জানা। বিশেষত, ৭১১ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির মাধ্যমে বাংলার নবদ্বীপ থিকে উত্তরবঙ্গের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী ধর্মান্তরিত হয়। চতুর্দশ শতক থেকে ধর্মান্তরিত হবার হিড়িক পড়ে যায়। এবং পঞ্চদশ শতকে এটা আরও ব্যাপক রূপ লাভ করে রাজা গণেশের পুত্র যদু’র ইসলাম গ্রহণের মধ্য দিয়ে। এখানে এসব কাহিনী বিধৃত করার লক্ষ্য মাত্র একটা। তাহলো ধর্মান্তরিত হয়েও নিম্নবর্ণের হিন্দু কোথাও উচ্চবর্ণের মুসলমান হতে পারেনি। ফলে পেশা ঠিক থেকে গিয়ে ধর্ম পরিবর্তন হয়েছে। এ কারণে ধর্মান্তবিত হবার একটা বিপ্লব সাধিত হলেও সাংস্কৃতিক মানের সামান্য বদল হয়নি। এ অবস্থা থেকে গেছে সর্বত্র। ফলে আমরা দেখতে পাই ‘নাগার্সি’ সম্প্রদায়ের দুরবস্থা। নাগার্সিরা মুসলমান কিন্তু অধিকাংশের নাম হিন্দুয়ানি। তাদের এমন নাম কেন জিজ্ঞেস করলে নাগার্সি সম্প্রদায়ের বয়োবৃদ্ধ গোপালগঞ্জের মুকুন্দ নাগার্সি বলেছে ভিন্ন কথা। তাদের যুক্তি হচ্ছে- বাদ্য বাজানোর অনুষ্ঠান তো হিন্দুদেরই। ১৯৪৭-এর দেশভাগ, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং বিভিন্ন নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ফলে হিন্দুগোষ্ঠী পরিবারেরই কাজ করতে হতো- এ কারণে নামও তার দিয়েছে হিন্দুয়ানি নাম। এতে হিন্দুরাও খুশি থাকত। কিন্তু এখন এরা পেশা ছেড়ে দিচ্ছে এতে হিন্দুরাও খুশি থাকত। কিন্তু এখন এরা পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। নাম বদলাচ্ছে। মুসলমান হতে ব্যস্ত এরা। কিন্তু সারা দেশের বিভিন্ন আঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে এদের মধ্যে ঠার রয়েই গেছে। যদিও বয়োবৃদ্ধদের মধ্যে তবুও ঠার আছে। ‘ঠার’ কেন ব্যবহৃত হয়, কবে এর উৎপত্তি সে সম্বন্ধে সঠিক সনের উল্লেখ না পাওয়া গেলেও একটা বিষয় বোঝা গেছে- সেটা হচ্ছে নিম্নবর্গের হিন্দু বা মুসলিম হওয়ায় এরা যে পেশায়ই থাকুক, বর্ণ হিন্দু বা মুসলমানদের বাড়িতে এদের যে আপ্যায়ন করা হতো তাতে খুশিও হতো না। ফলে রাগ ক্ষোভের কথা এরা বলত ঠারে। আবার গণক সম্প্রদায় ঠার ব্যবহার করত ভিন্ন কারণে দেখা গেল কোন জমিদারের গৃহ সঙ্কট। সেরা গণককে তার সমাধান বলতে ডেকে পাঠানো হয়েছে। গণক তার এক সহকারীকে পাঠিয়ে দিল আগে মূল ঘটনা জানতে। জেনে ওই গহকারী বহুলোকের সামনেই হয়তো গণককে মূল ঘটনার বিবরণ দিয়ে দিতো ঠারে। ফলে গণকের শেষ রক্ষা হতে কোন সমস্যাই হতো না। বেদেদের ভেতরেও ঠার প্রচলিত রয়েছে। তবে সেটা বের করা খুরই কষ্টসাধ্য। বললে সমাজচ্যুত হবে, এই ভয়ে কেউ বলে না। কিন্তু বেদেদের ঠারের ব্যবহারের মূল কারণ হচ্ছে-কোন বাড়িতে গিয়ে একটা ফল পাকড়াও করা, হাঁস থাকরে হাঁস। আবার লোকজন আসলে তাড়াতাড়ি সটকে পড়া। কারণ বেদেদের যারা গ্রামে পায়া তাদের অধিকাংশই নারী। পুরুষরা এদের বিভিন্নভাবে বিরক্ত করে। ফলে তারা আসার আগেই এরা কেটে পড়ে। এসব কথা ঠারেই বলে। তবে অধিকাংশের ঠারই এরা জানে। এবং যেসব সম্প্রদায়ের মধ্যে ‘ঠার’ প্রচলিত আছে তারা অধিকাংশই একে অপরের ঠার বোঝে। যদিও সরার ঠার এক নয়। তবে একজন অন্যজনেরটা কথা বলে না বা ঠার বলে না। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে যেসব সম্প্রদায়ের মধ্যে ঠার পাওয়া গেছে তার হচ্ছে-নাগার্সি, বেদে, সান্দার, গণক, সন্দীপের কুইচ্চা ঠার, বাঙালী সুইপারদের ও হিজড়াদের ঠার, সুহুম, রাজবংশীদের ঠার ইত্যাদি হবে ঠার ব্যবহার বেশি করে নাগার্সি, বেদে ও গণক সম্প্রদায়। নাগার্সি ও গণকদের ঠার প্রায় এক। ঠারের অনেকটাই শব্দ উলটে দিয়ে বলে। তবে ভঙ্গিমায় শব্দ বোঝা দায়। সুইপার, নাগার্সি ও গণক সম্প্রদায়ের ঠার। মানুষের ঠার হচ্ছে-নুষমা, মহিরাকে এরা বলে-তোপন্ন্।ি খাচ্ছে-খেড়ছে। কিন্তু এরা যখন কোন বাড়ি গিয়ে সুন্দরী একটি মেয়েকে দেখে ভয়ে তার দিকে তাকিয়ে অশ্লীল কোন কথা ছুড়ে না দিলেও একজন আরেকজনকে বলে, ‘তোপন্নি খেড়ছে’। টাকাকে এরা বলে-মাংতা (বোতে), গণক ও নাগার্সিরা বলে-নহি, সুইপার বলে-ভিম। কাউকে মারা বলতে এরা বলে-কাদুনি, খায়াকে বলে-হোরা, চাওয়াকে বলে-চোলা, বিয়েকে বলে-আবি। দিচ্ছে বা করছেকে বলে-হেলছে। ঘরকে বলে-খোঁয়ারে, ঢোকা মানে-খুনছে। অর্থাৎ মানুষটা ঘরে ঢুকেছে বলতে এরা বোঝায়-নুষমা খোঁয়ারে খুনছে। দৌড়াও-এর ঠার হচ্ছে-ঠেলো। প্রতারণা বা ঠকানোর ঠার হচ্ছে-গাডু। ফাজিল, বদ, খারাপ বলতে এরা বলে-তানসো, মাংস হচ্ছে-ঘষমা, যাওয়া মানে-খোনছে। কথা বলার ঠার হচ্ছে-চোলানো। কথা বলিস না মানে এরা বোঝায়-চোলইস না। শয়তানের হাড্ডির ঠার হচ্ছে- ভান্ড। যেমন- লোকটা শয়তানের হাড্ডি বলতে তারা বলে- নুষমায় তানসোর ভান্ড। হালকা কথা মানে-বিলা। পুরুষাঙ্গের ঠার বলে-কপ্পো। পার্টির ঠার হচ্ছে-মক্কেল বা রোগী। মার খাওয়াকে ঠারে বলে-ভোগছে। লোকটা মারা গেছে ঠারে বলে-নুমষায় ভোগছে। মাছকে বলা হয়-চোমা, নাই এর ঠার হচ্ছে-ঠেহে না। আমার-মোনসে, তার-তুনসে। ভাত-সুর। লোকটা ভাত খাচ্ছে-একে ঠারে বলে-নুষমায় সুর খেডছে। মুখ মানে-খোম, তামাক হচ্ছে-টেকনা। স্তন-চলনা। বড়-রবো। মুসলমান (গৃহস্থ ঘরের এবং উচ্চবর্গের) বাইক্কা, ডাসু, কুইতকা। নমশুদ্রকে ঠারে বলে-চাইটগা। ব্রাহ্মণকে-মুরো, ধোপাকে-ছিটকা, নাপিতকে-পিতনা। ‘লোকটা নমশুদ্রের ব্রাহ্মণ’- এ কথাটিকে ঠারে বলা হয়Ñনুষমায় চাইটগার মুরো। সরানো বা পাঠিয়ে দেয়াকে এরা বলে-খোনানো। খারাপ কথা-বিলা চোল, আনা-খিনা, তেল-চিকসা, খ্রিস্টান-টানকো। এক-হিক, দুই-গারজু, তিন-কের, চার-গেমার, পাঁচ-পালো, দেখা-ঝোপা, খচ্চর-খচাই। বেতাল-অফি/টাপসি, বোকা-টাবা। ‘লাকটা বোকা এবং বিপদজনক’ বলতে ঠারে বলা হয়-নুষমায় অফি ও টাবা। বেদে এবং সওদাগর শ্রেণী একই সম্প্রদায়ভুক্ত হলেও একদল সাপ খেলে, ধরে, বিক্রি করে এবং চিকিৎসা করে। অন্যদল চুড়ি, মালাসহ বিভিন্ন প্রসাধন বিক্রি করে। এদের ঠারের সংখ্যা খুবই কম। তবে এর মধ্যেই এরা স্বাবলম্বী। টাকাকে এরা বলে-ভিংগা। বলা মানে কথা বলাকে বলে-খোমঠাস। যেমন কথা বলিস না এটা ঠারে এরা বলে-খুমঠাইস না। নিষেধ করা অর্থে এরা বোঝায় আরেকটি ঠার বলে সেটি হচ্ছে-কফাইস না। স্ত্রী বলতে এরা বোঝায়-বেনি (খারাপ অর্থে), পুরুষ বলতে বলে-নাইর। অন্য সম্প্রদায়ের ঠার হচ্ছে-কান্দা। নিজ সম্প্রদায় হচ্ছে-মাংতা। তাড়াতাড়ি চলে যাও (বিপদ বোঝাতে)-নিঠুক বা চিলাইয়া যাও। ধরতে আসছে ঠারে বলে-বেতাক আসছে। ইদানীং পুলিশের যে ঠোলা বলা হয় এটা বেদেবের ঠার। ব্রিটিশের সময় পুলিশরা মাথায় ঠুলি পরত বলে এদের ঠোলা বলা হয়। কিস্তু কান্দার (অন্য সম্প্রদায়) শব্দটি শিখে ফেলার জন্য এখন তারা ঠোলা শব্দের পরিবর্তে বলে-শার্ট (মানে শার্ট অর্থাৎ বিশেষ রকমের জামা)। বেদেরা অতিথিপরায়ণ এবং এদর কথাবার্তা খুবই মার্জিত। তবে ঠারের প্রশ্নে তারা কাউকে শেখাতে নারাজ। খাওয়াকে তারা ঠারে বলে-দুতফিলাই বা টাইগালাই। ছেলেকে-ছাবাল। ভাতকে বলে-বতুন। ফলকে ঝলপই। হয়ত বলবে-‘ঝলপই টইগলা পাগলাম’। অর্থাৎ এক ফল পেলাম। বেদেদের বহরকে এরা ঠারে বলে-চ্যাহোরে। ভিন্ন সম্প্রদায়ের কোনো মানুষ গেলে এরা ঠারে বলে-একটা গের খাসপাইছে টপপাতি ডিগলা। অর্থাৎ একটা লোক আসছে বসতে দে। বেদের অনেক ঠার স্বাভাবিকভাবে ঝ ও চ- এর ব্যবহারে চলে। কিন্তু উচ্চারণের কায়াদায় সেটা ধরা বড় দুষ্কর। যেমন মানুষকে ঠারে বলে চেনুস, জলকে-চেনি, পাতাকে বলে-চ্যাতা, বহরকে বলে-চ্যাহোর, এমনি রাজহাঁসকে-ঝাস। আবার ছোট হাঁসকে বলে প্যাকপ্যাকি। কোনো বাড়িতে ঢুকে ভাল কোন জিনিস পছন্দ হলে বলে-ঝ্যাতো সুন্দর জিনিসটা বন্নিরে (গৃহস্ত বউ) তাল দিয়া লিগলাবো। মানে এত সুন্দর জিনিসটা, বাড়ির বউকে বলে-লিগালাবো। কারো ঘরে নুন না থাকলে কোন বাড়ি থেকে নেবার জন্য এরা জিঞ্জেন করে-নুন কি খাচোড়ে। মানে ঘরে কি নুন আছে? এক বেদে আরেক বেদেকে দেখলে বলে-সান্দার মান্থা। অর্থাৎ তাদের লোক। পাড়াকে এরা বলে-চিউডিডি। যেমন এই চিউডিডি সব ঝিন্দু। অর্থাৎ এই পাড়ার সবাই হিন্দু। পানিকে এরা ঝানি বলে। এদের নৌকায় নৌকায় দিন কাটে। তাই পানীয় জল বাইরে থেকে এনে খেতে হয়। অনেক গৃহস্থ বেদেদের পানি দিতে চায় না। এরা রাগ হয়ে গালি দেয়। কিন্তু বুঝলে তো রক্ষা নেই, তাই বলতে বলতে আসে-নালার ঘরে নালা একটু ঝানিও ডিগলাইলো না। অর্থাৎ শালার ঘরের শালা একটু পানিও দিলো না। অন্য বাড়ির সুন্দর একঠা মেয়ে দেখরে এরা ঠারে সুন্দর বলে, কারণ সাধারণভাবে সুন্দর বলার অধিকার তাদের নেই। তাই বলে-আইচ্ছা নেমড়িডাওরে। অর্থাৎ কী সুন্দর মেয়েগো। বেদেদের পেশায় অনেক চাতুরতা আছে। মুন্সীগঞ্জ বেদে বহরের এক তরুণ সাপুড়ে সমীর মিয়া জানাল, তারা যে চিকিৎসা করে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে চাতুরতা করে এরা চিকিৎসা চালিয়ে যায়। কিন্তু এখন সেখানেও শিক্ষার বাতাস লেগেছে। ফলে চিকিৎসা করতে গেলে ‘ঠার’ তাদের ব্যবহার করতেই হয়। সব পেশার মানুষের সাথেই কথা বলে দেখা গেছে-পুলিশ ভীতির একটা বিষয় এদের আছেই। রাজকর্মচারীও কখনো কখনো পুলিশের ঠারেই চিহ্নিত করা হয়। এক্ষেত্রে নাগার্সি এবং গণক সম্প্রদায়ের বক্তব্য হচ্ছে- রাজা বা সামন্তরা শিল্পী বা সাধারণ মানুষকে সম্মান দিতো না। দিত না টাকাও। হয়তো একটা জমি ও থাকার বাড়ি দিত। তার বিনিময়ে কাজ করতে হত পুরুষানুক্রমে। এসব তাদের পছন্দ হতো না বলেই রাজকর্মচারী দেখলেই এরা পালাত। আর বেদেদের মেয়েদের ওপরে নির্যাতন জলে আসতো বিভিন্ন সময়। অযথা বিনা পয়সায় সাপ খেলা দেখাতে হতো। না দেখালে নিস্তার নেই। ফলে সংকট থেকেই যেতো। রাজকর্মচারী দেখলে তাই সবাই পালাতো। সুতরাং নিম্নবর্গের এসব মানুষের ভেতরে পুলিশ ভীতি যে রয়েছে সেটা প্রমাণ করে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ঠার থেকে। বাংলাদেশে এখন ৫ হাজারের বেশি হিকড়ে আছে বলে সরকারি একটি তথ্যমতে জানা গেছে। হিজড়েরা কী সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলার অবকাশ নেই এ লেখায়। শুধু এটুকু বলব, তারা ঠার ব্যবহার করে। যেমন হিজড়েরা জুতোকে বলে-খোলপি আর মারাকে বলে-টানডানো। অর্থাৎ জুতা মার মানে-খোলপি টানডা। পুলিশকে তারা বলে-ডিঙুর। আসাকে বলে-ঠেকা। পুলিশ আসছে মানে-ডিঙুর ঠিকা। পারিক মানে-দালাল, টোলনা মানে-খদ্দের। চামান মানে-যোগাড় করা। অর্থাৎ পারিক টোলনা চামানছে মানে দালাল খদ্দের যোগার করছে। নেশা দ্রব্য মানে-খেলুয়া। খাওয়া অর্থেও চামান ব্যবহৃত হয়। নেশা করা মানে-‘খেলুয়া চামান’। এছাড়াও ‘কুতকো’ হচ্ছে পতিতালয়ের ঠার। পয়সাকে ঠারে বলে-কোনকি। চিস্- হচ্ছে ভালবাসা। চিজ- মানে সুন্দরী। চিপটি-মহিলা। চিসসা- হচ্ছে শরীর। গিরিয়া- মানে পুরুষ। গজ- মানে শত। কট্- মানে পুরুষত্ত্বহীন। ইনচি- মানে আফিম। উঠাওবাজ- মানে চোর, গব্বাবাজ- মানে মাস্তান। খজুর- মানে হিজড়ে, খুটনি- মানে কথাবার্তা। আকুয়া- মানে বিপরীত সাজসজ্জাকামী। আড়িয়াল- মানে বড়। রংগিলি- হচ্ছে চায়ের ঠার। সওগা- হচ্ছে হিজড়ে বা হিজড়েদের সঙ্গে থাকতে ভালোবাসে যে ব্যক্তি। মিনসে- হিজড়েদের পুরুষসঙ্গী। অর্থাৎ একটা বিষয়ে আমরা স্পষ্ট যে, সমাজের নিগৃহীত ও নিম্নবর্গের জনসমাজ তাদের প্রয়োজনেই ঠার-এর ব্যবহার শুরু করে ছিল। যারা করেছিল তারা কারা, নিরক্ষর বা অশিক্ষিত কিনা আমরা জানি না। তবে স্বশিক্ষিত যে, একথা বলতেই হবে। বিভিন্ন মানবগোষ্ঠী বিভিন্ন প্রয়োজনে ঠার ব্যবহার শুরু করলেও এর সময়কাল জানা সম্ভর হয়নি। তবে দশম থেকে দ্বদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত ‘চর্যাগীতিকোষ’ কে সন্ধা ভাষা বলা হয়। যেটা প্রকৃতপক্ষে সাংকেতিক ভাষার নামান্তর মাত্র। জানা যায়, ব্রাহ্মণ্য সম্প্রদায়ের শ্যেনদৃষ্টি থেকে ধর্মীয় আচার-আচরণকে রক্ষা করা জন্য বৌদ্ধ সহজিয়া সিদ্ধাচার্যগণ হেঁয়ালি ভাষায় চর্যাগীতি রচনা করেন। কোনো সাংকেতিক ভাষাই সহজে অনুধাবন করা যায় না। এ হলো রহস্যাবৃত ভাষা। এব্যাপারে প্রখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ সুকুমার সেন বলেছেন-‘গোগনীয় তথ্য সরবরাহের জন্য বা অসৎ উদ্দেশ্য দলের লোকের কাছে প্রকৃত এবং অন্যের অবোধ্য অথচ প্রয়োজনীয় সংলাপ স্বাভাবিকভাবে চালাইয়া যাইবার জন্য বিশেষ শব্দ (এক বা একাধিক ভাষা হতে সংগৃহীত) ব্যবহার করে। বাগব্যবহারকে অগার্থ ভাষা অথবা সংকেত ভাষা (Code Language) বলা হয়। সন্ন্যাস বিদ্রোহের বিপ্লবীরা নিজেদের মধ্যে সাংকেতিক ভাষায় কথা বলতো। এই সাংকেতিক ভাষাকে বলে ‘রামসিয়ানা’। দেশের অপরাধ জগতেও ঠারের প্রচলন রয়েছে। সেখানে ঠারের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু নিম্নবর্গের মানুষের পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। অর্থাৎ কেউ হিন্দু কেউ মুসলমান হতে ব্যস্ত। পেশা ছেড়ে এখন আর কেউ ঠার বলে না। বললে যদি ছোট হয়ে যায় এই ভয়ে। শুধুমাত্র অর্থনৈতিকভাবে নয়, শ্রেণী বিভাজনের কারণে সমাজে শোষণ ও দলন প্রক্রিয়ার যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে নিম্নবর্গের মানুষেরা বহু আগে থেকে। ঠার হচ্ছে ভাষা আগ্রাসনের দলিল। অর্থাৎ সামন্ত জমিদাররা পাকিস্তানের চেয়ে কম ছিলো না। অবদমনের ক্রোধের ফসল ভঙ্গ হলেও ফসল চুরি হয়ে গেছে। কারণ ঠারের সমাজ বদল হয় নি। বদলাচ্ছে স্টাইল। অথচ অবহেলা-অযত্নে স্বশিক্ষিত মানুষের আত্মরক্ষায় তৈরি এ ভাষাটি তাই হারিয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে। ভাষাটিকে তুলে আনার জন্যই কাজ করা দরকার ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে। নতুবা সমৃদ্ধ এবং রীতিমতো তাজ্জব বনে যাওয়ার মতো এই সৃষ্টি হারিয়ে যাবে অবলীলায় চোখের সামনে। যেভাবে হারিয়ে যাচ্ছে পদ্মা, মেঘনা, গোমতী, ধলেশ্বরী, মধুমতী, জারিসারি আরো কত কি!ব্রাত্য জনের এই ভাষাই শুধু না, দেশে প্রচলিত সবচ ধরনের ভাষাই সংগ্রহ করতে হবে । সে জন্য প্রয়োজনে আলাদা ইনস্টিটিটিউট গঠন করতে হবে। নতুবা এসব ভাষা হারিয়ে যাবে একদিন। ভদ্দরলোকে ভাষা দিয়ে ভাষাকে রক্ষা করা যায় না, ভাষা আন্দোলন আমাদের সে শিক্ষাই দিয়েছে।
×