ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণাঞ্চলের অবৈধ জলযানে বাড়ছে দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৯:০৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 দক্ষিণাঞ্চলের অবৈধ জলযানে বাড়ছে  দুর্ঘটনা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ নদীবেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলে প্রকাশ্যেই চলছে অনুমোদনবিহীন অবৈধ ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের জলযান। এরমধ্যে বাল্কহেড নিয়েই আতঙ্কে থাকেন এ অঞ্চলে যাত্রীবাহী নৌযানগুলোর চালক ও মাস্টাররা। কারণ অহরহ নদীতে যেসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে তার বেশিরভাগ ঘটনাতেই বাল্কহেডের সঙ্গে। এরপর রয়েছে কার্গোর অবস্থান। বৈধ নৌযানের চালক ও মাস্টারদের দাবি, সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে কার্যকরী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না নদীপথে চলাচলরত অবৈধ নৌযানগুলোর বিরুদ্ধে। তবে নৌপরিবহন অধিদফতর বরিশালের কর্মকর্তাদের দাবি, তারা অনুমোদনবিহীন ও অবৈধ জলযানের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখে জরিমানার পাশাপাশি মেরিন আইনে মামলা দিচ্ছেন। সূত্রমতে, জনবল সঙ্কট এবং যথেষ্ট তদারকির অভাবে অবৈধ বাল্কহেডের পাশাপাশি কার্গোসহ ছোট-বড় বিভিন্ন মালবাবাহী নৌযান দেদারছে যাতায়াত করছে বরিশালের নদী পথগুলোতে। জানা গেছে, বরিশালের সন্ধ্যা, সুগন্ধা, আঁড়িয়াল খা, কারখানা, পায়রা, ইলিশা, কীর্তনখোলা, মেঘনা, লোহালিয়া, তেঁতুলিয়া, আগুনমুখা, বিষখালি, বলেশ্বর, কালাবদর, বুড়াগৌড়াঙ্গ, আন্ধারমানিকসহ বেশ কয়েকটি নদ-নদী রয়েছে বরিশাল বিভাগে। যেসব নদী ব্যবহার করে শুধু অভ্যন্তরীণ রুটেই নয়, দূরপাল্লা এবং ভারতের যাত্রীবাহী ও মালবাহী নৌযানগুলো চলাচল করে থাকে। বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার পাশাপাশি দেশের একস্থান থেকে অন্যস্থানে পণ্য পরিবহন করার কাজে বড় আকারের ট্রলার, বাল্কহেড ও কার্গোগুলো ব্যবহার হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, রাতের বেলা এমনকি অনেক সময় দিনের বেলায়ও কৌশলে অবৈধ (সার্ভে সনদ বিহীন) কার্গো ও বাল্কহেড চলাচল করে থাকে বরিশালের বিভিন্ন নদ-নদী দিয়ে। আর এসব নৌযানের বিরুদ্ধে অভিযানে নামলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবৈধগুলো চোখের আড়ালে চলে যায়। নৌপরিবহন অধিদফতরের একটি সূত্রের দাবি, অভিযানগুলো দিনের বেলা চালানো হয় কিন্তু অবৈধ এসব নৌযান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাতের বেলা চলাচল করে। আবার অভিযানিক দফতরে রয়েছে জনবল সঙ্কট। সেক্ষেত্রে বিভাগের কোন এক নদীতে অভিযান চালিয়ে যদি অবৈধ নৌযানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাহলে অন্য রুট দিয়ে অবৈধ জলযানগুলো চলে যায়। তাই নিরাপত্তাবাহিনীর সমন্বয়হীনতার অভাবে চালানো অভিযানগুলো হয় ধীরগতিতে। জানা গেছে, নৌ-মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা অবৈধ নৌযানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার রয়েছে যে দফতরটির (নৌপরিবহন অধিদফতরে) তার একটি কার্যালয় রয়েছে বরিশাল নদী বন্দর সংলগ্ন এলাকায়। যেখানে বিআইডব্লিউটিসি’র ভবনের একটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে আঞ্চলিক কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আর বরিশাল সদর ছাড়া বিভাগের অন্য কোন জেলায় অভিযান পরিচালনা করতে হলে এখান থেকেই কর্মকর্তাদের ছুটে যেতে হয়। এছাড়া জালের মতো ছড়িয়ে থাকা বিশাল নদী বেষ্টিত এলাকায় দফতরটির ইন্সপেক্টরও রয়েছেন মাত্র দুইজন। নৌ-পরিবহন অধিদফতরের আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত একবছরে পুরো বরিশাল বিভাগে আটটি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। বছরব্যাপী অভিযানগুলোতে ১৮০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২২ লাখ টাকা। তাছাড়া ১০০টি কার্গো এবং বাল্কহেড আটক করা হয়েছে। যার বেশিরভাগেরই কোন সার্ভে সনদই ছিল না। অভিযানে গিয়ে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় কর্মকর্তাদের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, অবৈধ নৌযানের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে নৌযানগুলোর মালিকরা।
×