ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে রোহিঙ্গাদের হুমড়ি

আবারও ১৫ রোহিঙ্গা উদ্ধার, ক্যাম্পে সক্রিয় দালাল চক্র

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আবারও ১৫ রোহিঙ্গা উদ্ধার, ক্যাম্পে সক্রিয় দালাল চক্র

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ প্রতিটি ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের বের করে আনতে দালাল চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পথে মালয়েশিয়া না যেতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও এসব মানছে না রোহিঙ্গারা। এতগুলো ক্যাম্পে আশ্রিত লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে সামলানো ও বুঝানো আসলে কঠিন বিষয়। গত ৫-৬ বছর আগে সাগরে তাজা যুবকদের নিথর দেহ ভাসছে দেখে স্থানীয়রা তখন থেকেই অবৈধ পথে বিদেশ গমনে অনিচ্ছুক হয়ে পড়েছে। তবে বাংলাদেশী নয়, বর্তমানে দালালরা টার্গেট করেছে রোহিঙ্গাদের। তাই প্রত্যহ বঙ্গোপসাগরের কোন না কোন পয়েন্ট দিয়ে বোট বোঝাই করে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার করছে দালাল চক্র। প্রশাসন ইতোমধ্যে কিছু কিছু রোহিঙ্গাকে উদ্ধারও করেছে। আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে ধৃত দালালদেরও। সোমবার রাতে উখিয়ার উপকূলীয় এলাকা ইনানী থেকে পুলিশ দুই দালালসহ ১৫ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১০ মহিলা, ৪ পুরুষ ও এক শিশু রয়েছে। তারা কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা বলে জানিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে উদ্ধার রোহিঙ্গাদের হস্তান্তর করা হয়েছে স্ব স্ব ক্যাম্পে। আটক দালালরা হচ্ছে, উখিয়ার জালিয়াপালং দক্ষিণ নিদানিয়ার লোকমান হাকিমের পুত্র নুরুল আমিন (৪২) ও বড় ইনানীর ছলিম উল্লাহর পুত্র শোয়েব (৩০)। উখিয়া থানার ওসি জানান, আটক দালালদের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মানব পাচারের অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, প্রায় প্রতি রাতে বঙ্গোপসাগরের কোন না কোন পয়েন্ট দিয়ে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার হচ্ছে। প্রসাশনের লোকজনকে পাহারা দিয়ে দালাল চক্র রোহিঙ্গাদের তুলে নিচ্ছে বোটে। সাগরে অসংখ্য মানুষের সলিল সমাধি, থাইল্যান্ডের জঙ্গলে নির্যাতন ও গণকবরের সংবাদে বাংলাদেশীরা থমকে যায়। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পথে আর মালয়েশিয়া যেতে চাইছে না। তাই মানব পাচারকারীরা এবার টার্গেট করেছে রোহিঙ্গাদের। সাগরপথে যাত্রা করতে গিয়ে বারবার বোট ডুবির ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ ১১ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে দক্ষিণে ছেড়াদ্বীপে রোহিঙ্গা বোঝাই মালয়েশিয়াগামী ট্রলার ডুবির ঘটনায় মারা গেছে ২১ জন। নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ৭৩ জনকে জীবিত ও ২১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। রোহিঙ্গাদের একাধিক সূত্র মতে, ৪০ জনের মতো এখনও নিখোঁজ রয়েছে। এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর মিয়ানমার নৌবাহিনী গভীর সমুদ্র এলাকা থেকে ক্রুসহ ১৮১ জনকে আটক করেছিল। এদের মধ্যে ৮২ পুরুষ, ৬৯ মহিলা, ১৪ বালক, ৯ বালিকা ও ৭ ক্রু। তারা আশ্রয়ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে এসে মালয়েশিয়া যাচ্ছিল বলে জানা গেছে। গত কয়েক মাসের মধ্যে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাবার সময় সহস্রাধিক রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আগে স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় অনেক রোহিঙ্গা পাসপোর্ট তৈরি করে বাংলাদেশী সেজে আকাশপথে মালয়েশিয়াসহ মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছিল। বর্তমানে সে সুযোগ আর নেই। সরকারের কঠোর নজরদারির কারণে রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট করতে না পেরে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাচ্ছে। উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের নুর হোসেন, নুরুল বশর ও মৌলবি জাফর আলম নামে একাধিক রোহিঙ্গা জানায়, আমরা বাংলাদেশে এসেছি, বার্মায় (রাখাইন রাজ্য) ফিরে যাবার আগ্রহ আর আমাদের নেই। মালয়েশিয়া গিয়ে যদি কোন ধরনের সুযোগ করা যায়, তাহলে পরিবারের সবাই চলে যাব সাগরপথে। আর যদি সম্ভব না হয়, তাহলে মালয়েশিয়া থেকে পাঠানো মোটা দাগের টাকায় এখানে ভিটা কিনে বাংলাদেশেই বসবাস করার ইচ্ছা রয়েছে। এজন্য রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ ও বিজিবির যৌথ প্রচেষ্টায় জালিয়াপালং ইউপি কার্যালয়ে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার প্রতিরোধে গণসচেতনতামূলক এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
×