ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

‘সিক্রেট এজেন্ট’ বাপ্পারাজ

প্রকাশিত: ১২:১৭, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

‘সিক্রেট এজেন্ট’ বাপ্পারাজ

নব্বইয়ের দশকের সুপারহিট চিত্র নায়ক বাপ্পারাজ। ১৯৮৬ সালে বাবা নায়করাজ রাজ্জাকের পরিচালনায় ‘চাঁপাডাঙ্গার বউ’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে তার। প্রয়াত কিংবদন্তি নায়ক রাজ রাজ্জাকের ছেলে হিসেবে নয়, বরং অভিনয় প্রতিভা দিয়েই চলচ্চিত্রে স্থায়ী আসন গেড়ে বসেছেন তিনি। ত্রিভুজ প্রেমের ছবিতে ব্যর্থ প্রেমিকের চরিত্রে বাপ্পারাজ অদ্বিতীয়। তবে বর্তমানে এই নায়ককে খুব একটা অভিনয়ে দেখা যায় না। তাকে শেষ দেখা গেছে ২০১৮ সালের জুনে মুক্তি পাওয়া সিয়াম-পূজা জুটির ‘পোড়ামন টু’ ছবিতে। এরপর কোন ছবিতে অভিনয় করেননি। না করার কারণ হিসেবে জানান ভাল ছবির অফার পাননি বলে এতদিন অভিনয়ে অনিয়মিত ছিলেন। বিরতি ভেঙে দেড় বছর বাদে সম্প্রতি আবার অভিনয়ে ফিরেছেন বহু ছবির ব্যর্থ প্রেমিক বাপ্পারাজ। তবে এবার তিনি পর্দায় হাজির হচ্ছেন পুলিশ কমিশনার হয়ে। সাফি উদ্দিন সাফি পরিচালিত ‘সিক্রেট এজেন্ট’ ছবির মাধ্যমে আড়াল ভেঙে ফিরলেন তিনি। সেখানেই বাপ্পারাজকে দেখা যাবে ঢাকার পুলিশ কমিশনারের চরিত্রে। যদিও ছবিতে খুব কম সময়ের জন্য হাজির হবেন তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে একাধিক বার তিনি পুলিশের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তবে এবারই প্রথম পুলিশ কমিশনারের চরিত্রে। এ ব্যাপারে বাপ্পারাজ বলেন, ‘সিক্রেট এজেন্ট’ ছবিটিতে পুলিশ কমিশনারের চরিত্রে অভিনয় করছি। তাও অতিথি চরিত্রে। এটাই প্রথমবার। এই ছবির গল্পটা দারুণ। এ্যাকশন, থ্রিলার মিলিয়ে পুরো প্যাকেজ। আশা করছি দারুণ কিছু হবে।’ বাপ্পারাজের কাছে জানতে চাই আপনার পরবর্তী সময়ে কার অভিনয় আপনাকে বেশি মুগ্ধ করেছে? বর্তমানে যারা কাজ করছেন সবাই নিজেদের জায়গা থেকে ভাল করছেন। সেভাবে কেউ মুগ্ধ করতে পারেনি। আপনাদের সময়ে এফডিসিতে সমিতি চর্চা কতটা ছিল? সমিতি ছিল সমিতির মতো। মাঝ দিয়ে সমিতি ডমিন্যান্ট ছিল। সমিতি ডুবে যাচ্ছিল বিষয়টি আমাদের জন্য খারাপ হয়েছিল। সেই বিষয়টি পরবর্তীতে যারা নেতৃত্বে এসেছেন তারা পরিবর্তন করেছেন। সমিতি থাকা শিল্পীদের জন্য ভাল। তবে সমিতি যখন সব কিছুর মধ্যে নাগ গলায় তখন বিরক্তকার হয়। ক্রমেই সিনেমার সংখ্যা ও সিনেমা হল কমে যাচ্ছে। বিষয়টি কতটুকু ভাবায়? এখন সারা বিশ্বের সিনেমার অবস্থা একই। আমাদের ঢাকার শহরে যাতায়াত সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। তাছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির ফলে সবার হাতে মোবাইল ফোন চলে এসেছে। টিভি চ্যানেল বেড়ে গেছে। আগে সিনেমা দেখার একমাত্র মাধ্যম ছিল সিনেমা হল। কিন্তু এখন অনেক মাধ্যমের কারণে সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার প্রবণতা কমে গেছে। যার ফলে বিশেষ কোন ছবি না হলে দর্শক হলে যেতে চান না। যাতায়াত সমস্যা, হলের পরিবেশ সমস্যা। সবকিছু মিলিয়ে সিনেমার পরিবেশ আমাদের অনুকূলে নেই। যার ফলে মানুষজন সিনেমা দেখায় আগ্রহী হচ্ছেন না। আপনার দৃষ্টিতে বর্তমান চলচ্চিত্রে কি সমস্যা বা সঙ্কট রয়েছে? সঙ্কট তেমন একটা নেই। সবকিছুর মধ্যে কোয়ালিটি বেড়ে যাওয়ায় কোয়ালিটি মিনিমাস হয়ে গেছে। যেমন আগে একটা নাটকের জন্য দুই লাখ টাকা বাজেট ছিল। সেটি এখন কমে এক লাখ টাকায় এসেছে। সিনেমার অবস্থাও তাই। সিনেমা হল যেখানে ১২০০ ছিল সেখানে তা কমে ৬০-৭০ এসে ঠেকেছে। এত কম সংখ্যাক হলে ছবি চালিয়ে টাকা উঠানো ডিফেকাল্ট। তাছাড়া দুই কোটি টাকার ছবি ১ কোটি টাকা দিয়ে বানালে ছবির মেরিট নষ্ট হয়ে যায়। সবকিছুর মান কমে যায়। আর দর্শক এখন ইউটিউব চ্যানেলে বিদেশী সিনেমা দেখে। যার ফলে তাদের প্রত্যাশা অনেক উঁচু। আমরা যা তৈরি করছি সেগুলো তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয় না। যার ফলে তারা হলবিমুখ। ভাল ছবি যা হচ্ছে সেগুলো দর্শক দেখছেন। চলচ্চিত্র নিয়ে এখন আপনার প্রত্যাশা কি? একজন চলচ্চিত্র শিল্পী হিসেবে আমি চাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সব সময় ভাল থাকুক। ফিরে পাক হারানো সেই সোনালি অতীত। এই অতীত ফেরাতে আমাদের সবাইকে চেষ্টা করে যেতে হবে। হাল ছেড়ে দিলে তো আরও ডুবে যাবে। আশা করতে দোষ নেই। সব সমস্যার একটি সমাধান আছে। আশা করছি আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সমস্যা সমাধান হবে। এখন আমাদের খারাপ সময় যাচ্ছে আজ অথবা কাল ভাল সময় আসবে, আসতেই হবে। যদি আমরা চেষ্টা করি। সবাই সেই সুদিনের অপেক্ষায়। নায়ক বাপ্পারাজ এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলোÑ প্রেমের সমাধি, জীবন সীমান্তে জর্জ ব্যারিস্টার, হেড মাস্টার, ভালবাসা সেন্টমার্টিনে, কাকতারুয়া, জীবন যন্ত্রণা, মোস্ট ওয়েলকাম, বাবা কেন চাকর উল্লেখযোগ্য। একজন বাপ্পারাজের কোন অপূর্ণতা নেই। যা কিছু পেয়েছেন তাতেই তিনি তৃপ্ত। একজন বাপ্পারাজ কেন তৈরি হচ্ছে না? শিল্পী তৈরির যে পরিচালক দরকার তার অভাব আছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে। যে আমাকে তৈরি করবে সে নিজেই যদি কিছু না জানে তাহলে আমাকে তো তৈরি করতে পারবে না। আমাদের মেধাবী নির্মাতার সঙ্কট রয়েছে। চিত্রজগতের বর্তমান যে অবস্থা এখানে নতুন শিল্পীদের সম্ভাবনার কোন জায়গা দেখছেন? অভিনয় শিল্পীর সম্ভাবনা সব সময় ছিল। এখন তাদের অভিনয়ের দিকে মনোযোগী হতে হবে। অনেকেই আসেন নামের আগে নায়ক-নায়িকা তকমা লাগাতে তারা আসলে অভিনয়ের প্রতি সিরিয়াস না। অভিনয়ে আসলে শেখার আগ্রহ থাকতে হবে। সব প্রকারের গুণাবলী তার মধ্যে থাকতে হবে। তাহলেই সে একজন পরিপূর্ণ শিল্পী হতে পারবেন। চলচ্চিত্রর জন্য অভিনয় শেখার কোন প্লাটফর্ম আমাদের নেই। -বললেন বাপ্পারাজ।
×