ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন সরকার

অবাক ভঙ্গি অদ্ভুত মূকাভিনয়!

প্রকাশিত: ০৯:২২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

অবাক ভঙ্গি অদ্ভুত মূকাভিনয়!

বর্তমান সমাজ আধুনিকতার ছোঁয়ায় চলে গেছে অনন্য প্রান্তে। আধুনিকতার বদৌলতে ছোট বড় প্রায় সকলের হাতেই আছে স্মার্ট ফোন। তরুণ তরুণীরা আজকাল স্মার্ট ফোন ছাড়া নিজেকে বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে বেমানান মনে করেন। শুধু তাই নয় ছোট বড়, বয়স্ক, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলেই চায় আধুনিকতার ছোঁয়া গায়ে লাগাতে। আর তাই বয়সের দিকে না তাকিয়ে বন্ধুবান্ধব, সহপাঠী, পরিবার পরিজন নিয়ে আড্ডা, ঘোরাফেরা, খেলাধুলাসহ দৈনন্দিন ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা সব কিছুকেই আজ ফ্রেমে বন্দী করে সেলফি তুলে রেখে দিচ্ছে নিজেদের কাছে। সেলফি আজ এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে উঠতে, বসতে, খেতে, হাঁটতে, চলতে, খেলতে, হেলতে-দুলতে, নাচতে, গাইতে, চলন্ত বাসে, ট্রেনে সব জায়গাতেই লোকজন সেলফি তোলাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। সেলফি তোলার যেমন ভাল দিক রয়েছে তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক। আজকাল সেলফি তোলাটা প্রায় সকলের কাছেই আত্ম অভ্যাসে পরিণত হয়েছে যেটাকে সহজে ত্যাগ করতে চাইলেও বর্তমান তরুণ তরুণীরা পারছে না বরং এটার প্রকোপ বেড়েই চলেছে। মুখ বাঁকিয়ে বিভিন্ন আকার আকৃতি, অঙ্গি ভঙ্গিতে সেলফি তোলা একটা ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে যার প্রতিকার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বন্ধুবান্ধব বা পরিবার পরিজন নিয়ে কোন ঐতিহাসিক নিদর্শন দেখতে গেলে আজকাল সেখানে শুধু সেলফি তুলতেই দেখা যায়। সেলফি তোলা নিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতার যা সেলফি তোলা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে ঐতিহাসিক নিদর্শন সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করা আর হয়ে ওঠে না সব কিছু যেন হয়ে গেছে সেলফি কেন্দ্রিক। আবার অনেক তরুণ তরুণীদের দেখা যায় চলন্ত বাসে বা ট্রেনে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখলে মাথা বের করে সেলফি তোলে এটা যে জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কোন একটা দুর্ঘটনা যে ঘটতে পারে সেটা লক্ষ্যই করে না। সব বয়সের মানুষই আত্মতৃপ্তি চায় এছাড়াও নিজেকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে কত কিছুই না করে কিন্তু সেই আত্ম তৃপ্তির বিষয়টি যে কখনও অপব্যবহার হয়ে নিজের বা আশপাশের মানুষের বিপদ ডেকে আনে সেটা কেউ চিন্তাও করে না। দেখা যাচ্ছে কোন রোড এক্সিডেন্টে মা-ছেলে রাস্তায় পড়ে আছে চিৎকার করছে হাসপাতালে নিয়ে বাঁচানোর জন্য অথচ কেউ এগিয়ে আসছে না। না এসে দুর্ঘটনার সাক্ষী হতে কেউ ছবি তুলছে, কেউ সেলফি তুলছে এমন নজিরও কম নয়। এছাড়াও দেখা যায় বন্ধু-বান্ধবী একসঙ্গে কোন ভাল রেস্টুরেন্টে খেতে গেছেন সেখানে খাবার সামনে নিয়ে, না খেয়ে তারা সেলফি তোলা নিয়ে ব্যস্ত। কোন বন্ধুর ক্ষুধাকে গুরুত্ব না দিয়ে তারা সেলফি তোলাকে গুরুত্ব দিচ্ছে যেখানে বন্ধুর চেয়ে সেলফি তুলে আপলোড করে শো অফ করাটা বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। বই মেলায় গেলেও দেখা যাচ্ছে কোন লেখক কোন স্টলের সামনে আসলে বই সম্পর্কে জানার ইচ্ছাকে প্রাধান্য না দিয়ে লোকজন তার সাথে সেলফি তুলতে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। আবার কোন সেলিব্রিটি সদ্য লেখক হয়েছে তার বইয়ের ভেতরে কি আছে সেটা না দেখে বই কিনে তার সঙ্গে সেলফি তোলা নিয়ে সকলে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে এমন নজিরও বর্তমান খুবই লক্ষণীয়। আমাদের জন্য সেলফি খুব আনন্দদায়ক একটা ব্যাপার কোন বিখ্যাতজনের সঙ্গে নিজেকে ফ্রেমে বন্দী করতে পারলে আমরা নিজেকে ধন্য মনে করি। শুধু যে সেলফি তুলবো তাই নয় সেলফি তোলার সময় পারিপার্শ্বিকতা অবস্থাও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রিয়জনের সঙ্গে প্রিয় মুহূর্তগুলোকে যেমন সেলফি তুলে ফ্রেমবন্দী করা সুখকর তেমনি অসচেতনতায় কোন মুহূর্তে দুর্ঘটনার শিকার হওয়াও ভয়ঙ্কর। এজন্য আমাদেরও এ বিষয়গুলোতে সচেতন হতে হবে। সেলফি তোলাকে প্রাধান্য না দিয়ে ভাল দিকগুলো গ্রহণ করতে হবে। তাই আমাদের যেখানে সেখানে যখন তখন যেকোন মুহূর্তকে দেখে তার সঙ্গে নিজের সেলফি তোলার আত্ম অভ্যাসকে ত্যাগ করে সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে হবে। দিনাজপুর থেকে
×