ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;গোপালগঞ্জে এদের বিরুদ্ধে লুট হত্যাসহ ৪ অভিযোগ

৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত

প্রকাশিত: ১১:২৭, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গোপালগঞ্জের ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এটি তদন্ত সংস্থার ৭৭তম প্রতিবেদন। মঙ্গলবারই প্রতিবেদনটি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সেকশনে দাখিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা ও লাশগুমসহ চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিরা হলেন, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বাসিন্দা মোতাহার উদ্দিন সিকদার (৬৫), ইনায়েত হোসেন মিয়া ওরফে মোল্লা (৬৫), নিজামুল হক মিয়া ওরফে লুৎফর রহমান ওরফে লুথু মোল্লা (৬৮)। তদন্তের স্বার্থে বাকি দুই জনের নাম প্রকাশ করা হয়নি। ৫ আসামির মধ্যে চারজন পলাতক রয়েছেন। আসামিদের মধ্যে একজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আটক রয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে ধানম-ির তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানান, প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান ও জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক এম সানাউল হক। প্রধান সমন্বয়ক এম এ হান্নান সাংবাদিকদের বলেন, মামলায় আইওসহ ৩৫ সাক্ষীর জবানবন্দী ও দালিলিক প্রমাণ চার ভলিউমে মোট ৩৯৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের ১৬ নবেম্বর তদন্ত শুরু করে শেষ হয় ২৫ ফেব্রুয়ারি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা ও লাশগুমসহ চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামিরা গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার বাসিন্দা। আসামিরা সবাই একাত্তর সালে মুসলিম লীগের সমর্থক ছিলেন। বতর্মানে অধিকাংশ আওয়ামী লীগের সমর্থক। আসামিদের বিরুদ্ধে চার অভিযোগের (চার্জ) মধ্যে রয়েছে, চার্জ -১: ১৯৭১ সালের ২৮ জুন সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পাকিস্তানী সেনাদের সহযোগী রাজাকার সদস্য আব্দুল মান্নান মিয়ার নেতৃত্বে রাজাকার মোঃ ইনায়েত হোসেন মিয়া নিজামুল হকসহ সশস্ত্র ১২-১৩ জন নৌকাযোগে সাবেক মহকুমা ও বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীর ছোট বাহিরবাগ গ্রামের আউয়াল হক মিয়ার বাড়ির পাশে ঘাটে নামে। নেমেই এলোপাতাড়ি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। তখন আওয়াল মিয়ার জামাতা মুক্তিযোদ্ধা মাসুমের খোঁজ করেন। তাকে না পেয়ে আওয়াল হক মিয়া ও তার ছেলে সিরাজ মিয়াকে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক আটক ও অপহরণ করে নৌকায় তুলে আর্মিদের কাছে নিয়ে যায়। পরে জামাতা মাসুমকে হাজির করার শর্তে আওয়াল হককে ছেড়ে দেয়। আর সিরাজ মিয়াকে আর্মিদের সহায়তায় গোপালগঞ্জে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যে কোন সময় হত্যা করে লাশ গুম করে। চার্জ -২ ॥ একাত্তর সালের ৩ জুলাই কাশিয়ানী থানার ওরাকান্দি ইউয়ননের আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আব্দুস ছালাম মিয়াকে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক আটক ও অপহরণ করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর সদস্যদের নিকট হাজির করে। রাজাকার আব্দুল মান্না মিয়া, ইনায়েত হোসেন, নিজামুল হকের সহায়তায় আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে আব্দুস ছালামকে হত্যা করে, লাশ গুম করে। চার্জ -৩ ॥ ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই রাজাকার আব্দুল মান্নান মিয়ার নেতৃত্বে রাজাকার ইনায়েত হোসেন মিয়া, নিজামুল হকের একটি সশস্ত্র দল গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীর সিতারামপুর গ্রামে যায়। সেখানে ৯টি বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই গ্রাম ও আশপাশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আব্দুল কাদের মোল্লা, মকবুল হোসেন, মোঃ রওশন আলী মোল্লা, আনোয়ার মীর ও আজাহার শেখদের ধরে নিয়ে যায়। আর্মিদের সহায়তায় রাজাকাররা কাদের মোল্লাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এবং মুকবুল হোসেনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখে। চার্জ -৪ ॥ ১৯৭১ সালের ২৫ নবেম্বর বেলা ১১টার দিকে রাজাকার আব্দুল মান্নান মিয়ার নেতৃত্বে এই রাজাকাররা ও পাকিস্তানী বাহিনীর সশস্ত্র দল নিয়ে কাশিয়ানীর রামদিয়া বাজারে প্রবেশ করে। সেখানে স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনদের অন্তত ৫০-৬০টি দোকান লুটপাট করে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এরপর প্রিন্সিপাল আয়ুবুর রহমানের বাড়িতে লুটপাট করে, অগ্নিসংযোগ করে।
×