ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আবৃত্তি ও বর্ণমালা প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ১১:২৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আবৃত্তি ও বর্ণমালা প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মঞ্চ থেকে মাইকে ভেসে আসছে কবি শামসুর রাহমানের কালজয়ী কবিতার পঙ্ক্তিমালা ‘নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছো আমার সত্তায়। মমতা নামের প্রুত প্রদেশের শ্যামলিমা তোমাকে নিবিড় ঘিরে রয় সর্বদাই। কালো রাত পোহানোর পরের প্রহরে’। পিন পতন নীরবতায় বাংলা ভাষার এ কবিতার মর্মার্থ উপলব্ধি করার চেষ্টা করছে মিলনায়তন ভর্তি দর্শক-শ্রোতা’। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার কক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আবৃত্তির অনুষ্ঠানে এমনই এক ভাব-গাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে মঙ্গলবার বিকেলে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ভাষার আবৃত্তি ও বর্ণমালার প্রদর্শনী হয়। প্রদর্শনীতে বাংলাসহ ৮টি ভাষার কবিতা আবৃত্তি হয়। মূলভাষার পাশাপাশি বাংলায় অনূদিত কবিতা পাঠ করেন দেশের বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পীরা। অমর একুশের স্মৃতিবিজড়িত ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। বাঙালী জাতির জীবনে গৌরবোজ্জ্বল দিন ‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ করার অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন বাংলা মায়ের অকুতোভয় সন্তানেরা। এই অন্যান্য ইতিহাসকে স্বীকৃতি দিয়ে ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালে দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরও মাসব্যাপী নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। তারই অংশ হিসেবে এ আবৃত্তি ও বর্ণমালা প্রদর্শনী। জাদুঘর লবিতে নানা বর্ণমালায় সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। বাংলা বর্ণমালার পাশাপাশি দেশের চাকমা, মনিপুরী, ত্রিপুরা, মান্দি, সাঁওতাল, হাজং, ¤্রাে-সহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষার বর্ণমালা। ২৫ ভাষার বর্ণমালা নিয়ে প্রদর্শনী সাজানো হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থী ছুটে এসেছেন প্রদর্শনী দেখতে। অনেকে বলছেন ভাষার মাসে বিভিন্ন ভাষার এ বর্ণমালা প্রদর্শনীর আয়োজন সত্যিই দারুণ। এর মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের দেশেরই বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর ভাষা সম্পর্কে যেমন জানতে পারছি, তেমনই তাদের ভাষার বর্ণমালাগুলোও দেখে নিতে পারছি। প্রদর্শনীর পাশপাশি দিনব্যাপী এ আয়োজনে অন্যতম আকর্ষণ ছিল দেশের বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষার মূল কবিতার সঙ্গে বাংলায় অনূদিত কবিতা আবৃত্তি। কবি শামসুর রাহমানের ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’ কবিতা আবৃত্তির মধ্যে দিয়ে শুরু হয় এই আবৃত্তি অনুষ্ঠান। কবিতাটি আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কর্মসূচী ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম। এরপর একে একে দেশের বিভিন্ন আবৃত্তিশিল্পী আবৃত্তি করেনÑ মনিপুরী, মান্দি, সাঁওতাল, হাজং, ¤্রাে, মাহাত, ককবরক ও চাকমা ভাষার বিভিন্ন কবিতা। এতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর মূল ভাষার পাশাপাশি বাংলায় অনূদিত কবিতা পরিবেশন করেন দেশের বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পীবৃন্দ। মনিপুরী ভাষার কবিতা আবৃত্তি করেন চন্দ্রদ্বীপ। কবিতাটি বাংলা ভাষার অনুবাদ পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী ইকবাল খোরশেদ। মান্দি ভাষার কবিতা পাঠ করেন মেহেদী ক্যাটরিনা, বাংলায় পাঠ করেন আহসানউল্লাহ তমাল, শান্তাল ভাষার কবিতা পাঠ করেন মাহমুদা আখতার, হাজং ভাষার কবিতা পাঠ করেন বিনয় হাজং বাংলা ভাষায় পাঠ করেন আজিজুল বাশার, ¤্রাে ভাষার কবিতা বাংলা অনুবাদ পাঠ করেন ফয়জুল আলম পাপ্পু, মাহাত ভাষার কবিতা মূল ভাষায় আবৃত্তি করেন কবি পলাশ মাহত বাংলা অনুবাদ পাঠ করেন ফয়জুল আলম পাপ্পু। ককবরক ভাষার কবিতা পাঠ করেন মলয় চন্দ্র ক্রিপুরা বাংলা অনুবাদ পাঠ করেন জিএম মোরশেদ। চাকমা ভাষার কবিতা পাঠ করেন রুহি চাকমা বাংলা অনুবাদ পাঠ করেন জিএম মোরশেদ। জবি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন জবি সংবাদদাতা জানান, ‘জাগো সত্যের শুভ্র আলোয়, জাগো হে মিলিত প্রাণ’ স্লোগান সামনে রেখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবের প্রথম দিন মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে থেকে আনন্দ র‌্যালি উপাচার্যের নেতৃত্বে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। র‌্যালি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে পুনর্মিলনী এবং নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি ছাড়া একটি দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। শিল্প ও সংস্কৃতির হাত ধরেই সকল দেশের বড় বড় পরিবর্তন এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি ফাইয়াজ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ।
×