ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সৃষ্টির আলোয় উজ্জ্বল প্রয়াত লেখকরা

প্রকাশিত: ১১:২২, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সৃষ্টির আলোয় উজ্জ্বল প্রয়াত লেখকরা

মনোয়ার হোসেন ॥ চিলেকোঠার সেপাই নামের উপ্যাসের আশ্রয়ে এখনো পাঠককে কাছে টানেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। বইটির প্রকাশনা সংস্থা ইউপিএলের বিপণনকর্মী জরিফ হোসেন জানান, কিংবদন্তি এই কথাশিল্পীর কালোত্তীর্ণ উপন্যাসটি প্রতিদিনই কম-বেশি বিক্রি হয় বইমেলায়। আগে পড়েননি এমন পাঠকরা আগ্রহভরে কিনছেন বইটি। ১৯৮৬ সালে প্রথম প্রকাশিত বইটির ২৮তম মুদ্রণ চলছে। সেই সুবাদে মেলার শুরু থেকেই কাটতি রয়েছে বইটির। একই প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত শওকত আলীর আরেক কালজয়ী উপন্যাস ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ও সমানভাবে আচ্ছন্ন করছে পাঠক। ১৯৮৪ সালে প্রথম প্রকাশিত বইটির ১৪তম সংস্করণ চলছে। বাংলা সাহিত্যের উর্বরভূমি সৃষ্টি করে দেয়া এই লেখকদ্বয়ের মতোই বেশ কিছু প্রয়াত লেখক না থেকেও সগৌরবে বিচরণ করছেন আপন সৃষ্টির আলোয়। গ্রন্থমেলায় প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে বের হওয়া অসংখ্য বইয়ের মধ্যে তাদের বইগুলোর প্রতি রয়েছে পাঠকের টান। মঙ্গলবার ঝিরিঝিরি বৃষ্টিঝরা মেলার চব্বিশতম দিনের বিকেলে চিলেকোঠার সেপাই সংগ্রহ করতে দেখা যায় আনিকা ফেরদৌসকে। কথা প্রসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, এই বইটি আমার আগে পড়া হয়নি, এ কারণেই এটি আমার কাছে নতুন বই। ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাসটির কথা শুনেছি অনেকের মুখে। বইটি কেনার ফলে যেমন পাঠের সুযোগ হলো তেমনিভাবে আমার সংগ্রহে যুক্ত একটি ভাল বই। গ্রন্থমেলায় প্রয়াত লেখকদের প্রভাব প্রসঙ্গে তরুণ কবি ও লেখক পিয়াস মজিদ বলেন, শক্তিশালী ও স্বাতন্ত্র্য লেখনীর কারণেই পাঠকরা খুঁজে নেয় তাদের। এসব লেখকের অবিনাশী সৃৃষ্টিসমূহে সহজেই আচ্ছন্ন হয় গ্রন্থানুরাগীরা। আনোয়ার পাশার কালোত্তীর্ণ উপন্যাস ‘রাইফেল, রোটি, আওরাত’। ১৯৭৪ সালে স্টুডেন্ট ওয়েজ থেকে প্রকাশিত বইটির সপ্তম সংস্করণটি আগ্রহ নিয়ে সংগ্রহ করছেন অনেকে। এ বছর মেলায় এসেছে সৈয়দ শামসুল হকের কাব্যগ্রন্থ ‘নুন-পূর্ণিমা’। বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত বইটি চলছে ভাল। মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রতিদিন কম-বেশি বিক্রি হয় আহমদ ছফার প্রবন্ধগ্রন্থ ‘যদ্যপি আমার গুরু’। সাহিত্য প্রকাশ থেকে আগ্রহ নিয়ে পাঠকরা সংগ্রহ করছেন মাহমুদুল হকের দুই কালোত্তীর্ণ উপন্যাস ‘জীবন আমার বোন’ ও ‘কালো বরফ’। একইভাবে প্রয়াত লেখকদের মধ্যে পাঠকের কাছে সমাদর পাচ্ছে আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হুমায়ূন আজাদের ‘নারী’, ‘কত নদী সরোবর’, ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ ও ‘লাল নীল দীপাবলি’। পাঠক সমাবেশ থেকে প্রকাশিত শহীদুল জহিরের ‘গল্পসমগ্র’ ও ‘উপন্যাসসমগ্র’ ভাল বিক্রি হচ্ছে। চারুলিপি প্রকাশনের সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের তালিকায় রয়েছে জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’। পাশাপাশি শহীদুল্লা কায়সারের ‘সংশপ্তক’ ও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচনাবলীও ভাল বিক্রি হচ্ছে। পাঠক সমাবেশ থেকে প্রকাশিত শহীদুল জহিরের ‘গল্পসমগ্র’ ও ‘উপন্যাসসমগ্র’ ভাল বিক্রি হচ্ছে। অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত বহুল বিক্রীত বইয়ের মধ্যে এখনো শীর্ষে আছে হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’ এবং ‘জ্যোৎ¯œা ও জননীর গল্প’। আহমদ শরীফের ‘বাঙালী ও বাংলা সাহিত্য’ বইয়ের খোঁজে অনেকেই ঢুঁ মারেন আগামী প্রকাশনীতে। বিদ্যাপ্রকাশ থেকে এখনও বিক্রি হয় আবুল হাসানের রচনাসমগ্র। শামসুর রাহমানের রচনাসমগ্রের টানে অনেকেই ছুটে আসেন অনন্যায়। বৃষ্টিতেও খেই হারায়নি মেলা সকাল থেকেই ঝরেছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সাধারণতম এমন মেঘলা দিনে ছন্দপতন হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলার। প্রতিবছর তেমনটাই ঘটে। মেলা প্রাঙ্গণে কাদা জমে যায় কিংবা বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ফিরে যায় পাঠক। কিন্তু মঙ্গলবার টিপটিপ বৃষ্টিতে বিঘিœত হয়নি বইমেলা। পাঠকের সমাগমে স্বাভাবিকতা বিরাজ করেছে মেলা। শুধু তাই নয় বিক্রিও ছিল ভাল। ছোট বড় সব স্টল ও প্যাভিলিয়নে ছিল আনাগোনা। এদিন বেলা ৩টায় বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে প্রবেশ করে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ স্টল ও প্যাভিলিয়ন প্লাস্টিকের ত্রিপল দিয়ে ঢাকা। পাঠকরা আসলেও সেই সময়ে বই কিনতে পারেননি। এমন অবস্থা চলে প্রায় এক ঘণ্টা। তারপর বৃষ্টি কমলে সবাই পসরা সাজাতে শুরু করেন। এর মধ্যেই চলেছে বইয়ের বিক্রি। সন্ধ্যানাগাদ বৃষ্টি পুরোপুরি থেমে গেলে আরও বেড়ে যায় বই বিক্রি। এলো চার সহ¯্রাধিক নতুন বই বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্যনুযায়ী মঙ্গলবার বইমেলার চব্বিশতম দিন পর্যন্ত নতুন বই বেরিয়েছে ৪ হাজার ৮৩টি নতুন বই। আর মঙ্গলবার এসেছে ৯১টি নতুন বই। এর মধ্যে জার্নিমান বুকস থেকে রফিকুন নবী চিত্রিত এবং তারিক সুজাতের লেখা কাব্যগ্রন্থ ‘সুরের পথে একলা হাঁটি। একই প্রকাশনী থেকে এসেছে মুর্তজা বশীরের ‘চিত্রচর্চা’। কবিতাচর্চা এনেছে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর ‘মধুময় দুপুর মেখেছি’। দোয়েল প্রকাশনী এনেছে স্বপন কুমার সাহার কবিতাগ্রন্থ ‘মানবতার পঙ্ক্তিমালা’। দেশ পাবলিকেশন্স এনেছে সীরাজুম মুনিরের ‘নিষিক্ত’। ঐতিহ্য এনেছে আফজাল হোসেনের ‘ইশ^রের ঐশ^র্য দাপট’। মিজান পাবলিশার্স এনেছে আনিসুল হকের ‘সে’। শিশুগ্রন্থকুটি এনেছে জ্যোতির্ময় সেনের ছড়ার বই ‘ভূত নিয়ে খুঁত খুঁত’। আজকের মেলা আজ বুধবার গ্রন্থমেলার ২৫তম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেলে মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে কামরুল হক রচিত বঙ্গবন্ধু ও সংবাদপত্র : ছয় দফা থেকে গণঅভ্যুত্থান শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ পাঠ করবেন সোহরাব হাসান। আলোচনায় অংশ নেবেন মোরশেদ শফিউল হাসান এবং হারুন হাবীব। সভাপতিত্ব করবেন কামাল লোহানী। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
×