ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাপিয়ার পরিচয় যাই হোক অপরাধী হিসেবে বিচার হবে

প্রকাশিত: ১০:৫১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

   পাপিয়ার পরিচয় যাই হোক অপরাধী হিসেবে বিচার হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়ার পরিচয় যাই হোক, অপরাধী হিসেবে তার বিচার হবে এবং তার পেছনে যারা আছে তাদেরও খুঁজে বের করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সব অপরাধীর বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। তাই অপরাধ করে পার পাওয়ার আর কোন সুযোগ নেই। সোমবার সচিবালয়ে এডিবি কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন পারকাশকের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল এক্সপ্রেস ও ঢাকা-সিলেট ৮ লেন রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগের কথাও জানান। পাশাপাশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। গত শনিবার ঢাকার বিমানবন্দর থেকে স্বামী ও দুই সহযোগীসহ গ্রেফতার করা হয় নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামীকে। তাদের বিরুদ্ধে ‘অস্ত্র ও মাদকের কারবার, চাঁদাবাজি, চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণাসহ বিভিন্নভাবে মানুষের অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া নারীদের দিয়ে ‘অনৈতিক কাজ’ করানোর অভিযোগও তুলেছে র‌্যাব। পাপিয়ার ঢাকা ও নরসিংদীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ অ¯্রসহ বিপুল সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা জানায় র‌্যাব। এরপর থেকে পাপিয়াকে নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা। পাপিয়া এখন আলোচিত চরিত্র। গ্রেফতারের পর পাপিয়াকে ইতোমধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয় সংগঠন থেকে। সোমবার পাপিয়া দম্পতিকে আদালতে হাজির করে ১৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। আলোচিত পাপিয়াকে দেখতে আদালতে বিপুল সংখ্যক উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা গেছে। তাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখা হচ্ছে নেপথ্যের কর্মকা- নিয়ে নানা সংবাদ। পাপিয়ার বিষয়ে মন্ত্রিসভায় কোন আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অপরাধী অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি পাবে। এ সরকার দলের হোক দলের বাইরের হোক অপরাধীকে পার পেয়ে যেতে দেয়নি। সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। পাপিয়ার পরিচয় যাই হোক অপরাধী হিসেবে, অপরাধ অনুযায়ী তার বিচার হবে। তার পেছনে যারা আছে তাদের খুঁজে বের করা হবে কিনা সাংবাদিকদের প্রশ্নে কাদের বলেন, অপরাধের বিচার করতে গেলে তো পেছনের লোক খোঁজা হয়, হবে না কেন? পাপিয়াকে মদদদাতা বা জড়িতরা সামনে আসবে কিনা জানতে চাইলে কাদের বলেন, তারা সামনে আসবে না এটা মনে করার কোন কারণ নেই। এ সরকারের আমলে এ ধরনের বিচার প্রক্রিয়ায় সবই এসে গেছে। যখন আদালতে বিষয়টি যাবে তখন আদালতে সব কিছুই আসবে। পাপিয়া যে অপরাধে জড়িয়ে ছিলেন তা বুঝতে পেরেছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বুঝতে পারলে তো এটা হতো না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী না দলের শুদ্ধি অভিযানে পাপিয়াকে ধরা হয়েছে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধের জন্য যাদেরকে গ্রেফতার করছে, শাস্তি দিচ্ছে, আদালতে যাচ্ছে সেটি কি সরকারের ইচ্ছার বাইরে হচ্ছে? সরকার এ বিষয়টাতে সায় আছে বলেই, সরকার এসব বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে বলেই আজ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে- অপরাধ যারা করবে, অপকর্ম যারা করবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে কোন সরকারের আমলে দলীয় অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে এমন কোন নজির নেই। দলের ভেতর এ ধরনের অপরাধী আরও আছে কিনা জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এদেশে আওয়ামী লীগের আগেও সরকার ছিল। ২১ বছর পাওয়ারে ছিলাম না, তখনও গবর্নমেন্ট ছিল। পার্থক্য এই, অন্যান্য সরকার অপরাধী ও অপকর্মকারীদের বিচার বা তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা অবহেলা- উপেক্ষা করেছে। তারা কখনও নিজেদের দলের তো প্রশ্নই উঠে না অপরাধীদের বিষয়ে তাদের এ্যাটিচুড ছিল দুর্বল। সে কারণে অপরাধীরা, অপকর্মকারীরা শাস্তি পায়নি। এ সরকারের আমলে অপরাধী যদি অপরাধ করে তার পরিচয় দলীয় হলেও এ সরকারে পক্ষ থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেয়া আছে, যে পরিচয়ই হোক, যেন প্রয়োজনীয় অপকর্মের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল এক্সপ্রেস, ঢাকা-সিলেট ৮ লেন রাস্তা এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন পারকাশের সঙ্গে আলোচনার বিষেয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা-সিলেট ফোর লেনে দুটি সার্ভিস লেনসহ ৬ লেনের জন্য আগামী মার্চ মাসের মধ্যে ডিপিপি প্রণয়ন হয়ে প্ল্যানিং কমিশনের অনুমোদনের পর আগামী জুলাই থেকে ফিজিক্যাল কন্সট্রাকশন শুরু করা যাবে। এখানে ঢাকা-সিলেটে ৬ লেন এক্সপ্রেসওয়ে হবে ২০৯ কিলোমিটার। ফ্লাইওভার থাকবে ৮টি, ওভারপাস ২২টি এবং রেলওভার পাস ৫টি, ব্রিজ ৬৯টি, আন্ডারপাস ১০টি, ফুটওভার ব্রিজ থাকবে ২৯টি।’ এ প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়ে কোন অনিশ্চয়তা নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ফান্ডিং ম্যাক্সিমাম এডিবি করবে, আগের বাজেট পরিবর্তন হয়েছে ডিজাইন পরিবর্তন হওয়াতে। আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে দুই বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ২০ হাজার কোটি টাকার মতো। তবে বাস্তবায়নের সময় নিয়ে আলোচনা হয়নি। সাসেক-২ এর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এলেঙ্গা থেকে রংপুর, আটটির মধ্যে সাতটি প্রজেক্টের কাজ শুরু হয়েছে। সাসেক-৩ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, রংপুর থেকে বুড়িমারি ও অন্যদিকে রংপুর থেকে গাইবান্ধা হবে। এ ছাড়া এডিবি নেক্সট ফান্ডিং করার জন্য ভাবছে ফরিদপুর-বরিশাল। ঢাকা-চট্টগ্রাম যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সড়কে কোন এক্সপ্রেসওয়ে না করে রেল এক্সপ্রেসওয়ের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রাম রেলওয়ে এক্সপ্রেসওয়ে করার চিন্তা-ভাবনা আছে, রোডে আর কোন কিছু করার চিন্তা-ভাবনা করছি না। রোডের দুটি এক্সপ্রেসওয়ে করার পরিবর্তে রেল এক্সপ্রেসওয়ে করা সুবিধাজনক মনে করা হচ্ছে। যদিও সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন প্রকল্প শেষে একটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। প্রায় শত কোটি টাকা খরচও হয়েছিল প্রকল্পের প্রস্তুতি পর্বে। সবশেষ এ প্রকল্প থেকে পিছু হটে বিকল্প কিছু করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, আজ এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টরের সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে এবং সেখানে ঢাকা-সিলেট ছয় লেন ও অর্থায়নের বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে।
×