ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে স্পর্শ করলেন তামিমকে, রানে ছাড়িয়ে গেলেন আশরাফুল ও রিয়াদকে

কথার সঙ্গে কাজে মিল রাখলেন মুমিনুল

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

কথার সঙ্গে কাজে মিল রাখলেন মুমিনুল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জিম্বাবুইয়ে টেস্টে নামার আগে চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল বাংলাদেশ দল। নেতৃত্বের ব্যর্থতা ও ব্যাট হাতে রান খরায় কোণঠাসা ছিলেন মুমিনুল হক সৌরভ। তবে দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে দলগতভাবে বাজে সময় কাটিয়ে ওঠার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে দীর্ঘদিন দলের ব্যাটসম্যানরা টেস্টে বড় ইনিংস খেলতে না পারার যে আক্ষেপে ভুগছিল সেক্ষেত্রেও তিনি কথা দিয়েছিলেন, ‘আমাদের দলের কেউ ১০০, ২২০ বা ৩০০ করবে, কথা দিলাম যে কেউই হোক বড় ইনিংস খেলবে ইনশাআল্লাহ।’ মাঠের বাইরে বলা কথার সঙ্গে কাজের প্রমাণটা, মাঠের ভেতরে করে দেখানোর অভাব বরাবরই দেখা গেছে। কিন্তু এবার কথা রেখেছেন মুমিনুল। নিজেই আগে শতক হাঁকিয়েছেন, আউট হয়েছেন ১৩২ রানে। তার দেয়া কথাটিকে সত্য করেছেন পরে মুশফিকুর রহীম অপরাজিত ২০৩ রানের ইনিংস খেলে। মুমিনুলের এখন টেস্টে ৯ সেঞ্চুরি, সবই দেশের মাটিতে। টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বাধিক ৯ সেঞ্চুরি এখন তামিম ইকবাল ও তার। তবে এই শতকটি বাড়তি মাত্রা পেয়েছে অধিনায়ক হিসেবে প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকানোর কারণে। তাছাড়া টেস্ট রানের ক্ষেত্রেও এখন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মোহাম্মদ আশরাফুলকে পেছনে ফেলেছেন তিনি। ৭ বছর আগে যখন টেস্ট ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন, তখন থেকেই নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছিলেন মুমিনুল। অচিরেই ‘টেস্ট স্পেশালিস্ট’ তকমাও পেয়ে যান। কারণ অভিষেকের বছর থেকে শুরু করে ২০১৫ পর্যন্ত টানা ১১ টেস্টেই একটি করে অর্ধশতক বা তার বেশি রান করেছিলেন। যা টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় সেরা নৈপুণ্যের রেকর্ড। সম্প্রতি যেন নিজের সেই পারফর্মেন্স হারিয়ে ফেলেছিলেন মুমিনুল। হুট করেই দলের অধিনায়ক হওয়ার চাপেই হয়তো ব্যাট হাতে সহজাত কাজটা করতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। সর্বশেষ সেঞ্চুরিটি (১২০ রান) ২০১৮ সালের নবেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রামে। এরপর ৭ টেস্ট ও ১৪ ইনিংস ব্যাট করে সেঞ্চুরি দূরের কথা, অর্ধশতকই পেয়েছেন মাত্র একটি। ২৪৪ রান করেছেন এই ১৪ ইনিংসে মাত্র ১৮.৭৭ গড়ে। সর্বোচ্চ ৫২ রানের ইনিংস গত বছর সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে। তারপর ৭ ইনিংস পেরিয়েছে কোন অর্ধশতকও হাঁকাতে পারেননি। অধিনায়ক হওয়ার পর ৬ ইনিংসে ১১৫ রান করেছেন মাত্র ১৯.১৭ গড়ে। তাই জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে নামার আগে মুমিনুল বলেছিলেন, ‘সত্যি বলতে গেলে আমার কাছে মনে হয় এত ইনিংসে একটা ১০০ না থাকা মানে হয়তো আপনি নিচের দিকেই আছেন। আমার কাছে মনে হয় দেখেন মানুষের মাঝে মাঝে একটু খারাপ সময় যায়। খুব শীঘ্রই কথা দিচ্ছি কথাই দিয়ে দিলাম আপনাকে আমাদের দলের কেউ ১০০, ২২০ বা ৩০০ করবে।’ সেই কথা রাখার লক্ষ্যেই হয়তো দ্বিতীয় দিন শেষে দলের পক্ষে প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ ৭৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। তৃতীয় দিন সকাল থেকেই দুর্দান্ত খেলেন মুমিনুল। পেয়ে যান মাত্র ১৫৬ বলে ক্যারিয়ারের নবম শতক। মুশফিকের সঙ্গে ২২২ রানের বিশাল জুটি গড়ে দলকে বড় সংগ্রহ গড়ে দিয়েছেন। তারপরই তিনি ২৩৪ বলে ১৪ চারে ১৩২ রান করার পর সাজঘরে ফেরেন। এটি মিরপুরে মুমিনুলের তৃতীয় সেঞ্চুরি। দেশের হয়ে এই ভেন্যুতে টেস্টে ২টি করে সেঞ্চুরি আছে মুশফিক, তামিম ও মাহমুদুল্লাহর। এই ভেন্যুতে এখন মুমিনুলের রান চতুর্থ সর্বাধিক ৮২৮। তিনি ছাড়িয়ে গেছেন ১১ টেস্টে ৭৯৬ রান করা রিয়াদকে। এখন ৪০তম টেস্টে মুমিনুলের রান মোট ২৮৬০। সেদিক থেকে তার পেছনে পড়ে গেছেন মাহমুদুল্লাহ (৪৯ টেস্টে ২৭৬৪) ও আশরাফুল (৬১ টেস্টে ২৭৩৭)। এখন টেস্টে দেশের পক্ষে পঞ্চম সর্বাধিক রানের মালিক তিনি। এছাড়া সর্বাধিক সেঞ্চুরির যে রেকর্ড তামিম গড়েছেন সেটিকে স্পর্শ করেছেন মুমিনুল। উভয়ের সেঞ্চুরি এখন ৯টি করে। তবে মুমিনুল তা করেছেন ৪০ টেস্টে আর তামিম খেলেছেন ৬০ টেস্ট। এর মাধ্যমে দেশের মাটিতে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি ২ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন। এখন দেশে ২৩তম টেস্টে তার রান ৫৭.৪০ গড়ে ৯ সেঞ্চুরি ও ৭ ফিফটিতে ২১২৪। তার ওপরে আছেন তামিম ৩৫ টেস্টে ২৫১৭, সাকিব ৩৭ টেস্টে ২৪৭৭ ও মুশফিক ৪১ টেস্টে ২৪৫৮ রান করে।
×