ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মহাস্থানগড়ের ইট খুুলে নিয়ে বাড়ি নির্মাণ

প্রকাশিত: ১১:৫০, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 মহাস্থানগড়ের ইট  খুুলে নিয়ে বাড়ি নির্মাণ

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ দেশের সবচেয়ে প্রাচীন বগুড়ার মহাস্থানগড়ের দুর্গ নগরীর ভূমি দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। এলাকার প্রভাবশালীর অনেকেই পুন্ড্রবর্ধন ভুক্তির রাজধানী পুন্ড্রনগরীর ধ্বংসাবশেষের ইট (যা প্রত্ন সম্পদ) খুলে নিয়ে নিয়ে এইসব বাড়ি নির্মাণ করছে। প্রত্ন অধিদফতরের লোকজন বাধা দিতে গেলে প্রভাবশালীদের লাঠিয়ালরা তাদের ওপর চড়াও হয়। মারপিট করে। এই বিষয়ে মামলাও হয়েছে। দিন কয়েক আগে পুলিশের গাড়িতেও তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা জানান, ২০১২ সালে হাইকোর্টের এক রায়ে মহাস্থানগড়ের দুর্গ নগরীর ভূমিতে সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরকে দুর্গ নগরীর ভূমি অধিগ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপর প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর দুর্গ ভূমি সংরক্ষণ করতে গিয়ে বাধা পাচ্ছে। এলাকার প্রভাবশালী লোকজন তাদের ঘরবাড়ি থেকে সরে যাচ্ছে না। উল্টো হুমকি ধমকি দিচ্ছে। তারা ভূমি দখল করে সেচ পাম্প বসিয়ে চাষাবাদ করছে। তবে সাধারণ মানুষ চাইছে কোন না কোন সময় তো ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। সরকার দ্রুত এই ভূমি অধিগ্রহণ করুক। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের হিসেবে মহাস্থানগড়ের দুর্গ নগরীর ভূমির পরিমাণ ৩৯৩ দশমিক ৩১ একর। এর মধ্যে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণে আছে ৪২ দশমিক ৭৪ একর। কথিত ব্যক্তিমালিকানায় দখলে আছে প্রায় ৩২০ একর। প্ত্ন আইনে তারা এই ভূমি দখলে রাখতে পারে না এবং কোনভাবেই অবকাঠামো নির্মাণও করতে পারে না। ১৯৬৮ সালে এান্টিকুইটিজ এ্যাক্টে (প্রত্ন সম্পদ সংরক্ষণ আইন) বলা আছে, কোন পুরাকীর্তি ধ্বংস, প্রত্নসম্পদ ভূমির ওপর কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ এবং কোনভাবেই প্রত্ন সম্পদ আড়াল করা যাবে না। মহাস্থানগড় এলাকায় বহুদিন ধরে প্রত্ন সম্পদের ভূমি দখল করে তার ওপর স্থাপনা নির্মাণ (ইটের পাকা বাড়িঘর বাথরুম) নির্মাণ করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। এই অবৈধ নির্মাণকে সরিয়ে নেয়ার জন্য বহু নোটিস দেয়া হয়েছে। বেশিরভাগই নোটিস গ্রহণ করে না। অনেকে নোটিস হাতে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। অবৈধ দখলে এ পর্যন্ত ২১টি মামলা করা হয়েছে। এলাকার কয়েকজন বলেন, তারও চান এই প্রাচীন নগরী সরকার নিয়ে পর্যটক আকর্ষণের উপযুক্ত করুক। মহাস্থানগড়ে এই অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কারণে পর্যটকরা এসে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে না। ইতোমধ্যে মহাস্থানগড় ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের প্রত্ন স্থানগুলো সংরক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
×