ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয়দিন শেষে বাংলাদেশ ২৪০/৩, জিম্বাবুইয়ে ২৬৫/১০

বড় সংগ্রহের পথে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 বড় সংগ্রহের পথে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ মিরপুর টেস্টের প্রথমদিনে স্বস্তি যোগ হয়েছিল। দ্বিতীয়দিন ম্যাচের নিয়ন্ত্রই নিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে বড় স্কোরই গড়তে চলেছে মুমিনুলের দল। মুমিনুল হকের অপরাজিত ৭৯ ও নাজমুল হোসেন শান্তর ৭১ রানে প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৪০ রান করে বাংলাদেশ। ২৫ রানে পিছিয়ে আছে স্বাগতিকরা। তবে সাত উইকেট এখনও হাতে আছে। মুমিনুলের সঙ্গে মুশফিকুর রহিমও (৩২*) ব্যাট করছেন। আজ তৃতীয়দিনে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিতে মুমিনুল ও মুশফিক ব্যাট হাতে নামবেন। জিম্বাবুইয়ে প্রথম ইনিংসে ২৬৫ রানের বেশি করতে পারেনি। তাতে টেস্টে বাংলাদেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে যাচ্ছে। উইকেট যে ব্যাটিংনির্ভর তা বোঝাই গেছে। ভুল না করলে ব্যাটসম্যানকে আউট করা কঠিন। বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সাইফ হাসানের আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিংয়ে শুরুটাও হয়। সাইফ নিজের অভিষেক টেস্টে ভাল করতে না পারলেও জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে সম্ভাবনা দেখান। আত্মবিশ্বাসী শটে দুটি বাউন্ডারিও হাঁকান। কিন্তু দলের যখন ১৮ রান হয় তখন ভিক্টর নিয়াউচির অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়ে যান সাইফ (৮)। খুব বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি। সাইফের আউটের পর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে পথ চলতে থাকেন তামিম। দুইজন মিলে দলকে সহজেই ১০০ রানের কাছে নিয়ে যান। ৫০ রানের জুটিও গড়া হয়ে যায়। এর মধ্যে দলের ৭৪ রানের সময় ৩৫ রানে থাকা তামিম স্লিপে ক্যাচ হওয়া থেকেও বাঁচেন। ‘নতুন জীবন’ পাওয়ার পর নির্ভরযোগ্য, অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস খেলার চেষ্টা করেন। তামিমও তাই করতে চান। সেই সম্ভাবনাও দেখা হয়। কিন্তু দলের যখন ৯৬ রান হয় ডোনাল্ড তিরিপানোর দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে উইকেটরক্ষক রাগিস চাকাভার হাতে ক্যাচ আউট হয়ে যান তামিম (৪১)। তামিম আউট হলেও ভরসা থাকে। উইকেটে বোলারদের জন্য বিশেষ কিছু নেই। তাই শান্ত, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন কুমার দাসের মধ্যে একাধিক ব্যাটসম্যান বড় ইনিংস খেলতে পারবেন, সেই আশাও থাকে। শান্ত ও মুমিনুল মিলেই তো যেন দিনটি শেষ করে দেবেন এমন মনে হয়। দুইজন মিলে কি সহজভাবে ব্যাটিং করতে থাকেন। সাবলীলভাবে এগিয়ে যেতে থাকেন। রান তুলতে থাকেন। দলকে অনায়াসেই ১৫০ রানে নিয়ে যান। ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। দ্বিতীয় সেশন শেষ করেন। এর আগেই শান্ত আবার ১০৮ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরিও তুলে ফেলেন। শান্ত সেঞ্চুরি করে ফেলতে পারেন, সেই আশাও দেখা হয়। সেইভাবে আশার আলোও দেখান শান্ত। কিন্তু ধৈর্য ধরে খেলে, উইকেট আঁকড়ে থেকেও সেঞ্চুরি আর করা হয়নি। দলের যখন ১৭২ রান হয় তখন ১৩৯ বলে ৭ চারে ৭১ রান করে ফেলেন শান্ত। এরচেয়ে বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি। চার্লটন টিসুমার বুদ্ধিদীপ্ত স্লো বাউন্সযুক্ত অফস্টাম্পের বাইরের বলটিতে খোঁচা দিতে গিয়েই নিজের বিপদ ডেকে আনেন শান্ত। চতুর্থ টেস্ট খেলতে নেমে ক্যারিয়ার সেরা ৭১ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় শান্তকে। সেইসঙ্গে শান্ত-মুমিনুলের ৭৬ রানের জুটি ভেঙ্গে যায়। মুমিনুল এরপর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে দিন শেষ করেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টে মুশফিক ছিলেন না। তিনি নিরাপত্তা শঙ্কায় পাকিস্তান সফরে যাননি। তবে দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে টেস্টে আবার ফিরেন। টেস্ট মেজাজে ব্যাাটিংও করতে থাকেন। মুমিনুল এর মধ্যে হাফ সেঞ্চুরিও করে ফেলেন। সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যে টেস্ট শুরুর আগে সেঞ্চুরি করার কথা দিয়েছিলেন; বলেছিলেন, ‘এতগুলো ইনিংসে একটা সেঞ্চুরি না থাকা মানে আপনি নিচের দিকেই আছেন। আমার কাছে মনে হয় দেখুন খেলোয়াড়দের কখনও কখনও বাজে সময় যায়। দল হিসেবে আমরা হয়তো সেই খারাপ সময়টা পার করছি। আমরা এটা কাটিয়ে ওঠার কাজ করছি। খুব শীঘ্রই, কথা দিচ্ছি, কথাই দিয়ে দিলাম আপনাদের।’ সঙ্গে যোগ করেছিলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় মানুষের মাঝে মধ্যে একটু খারাপ সময় যায়। দল হিসেবে আমরা হয়তো খারাপ সময় পার করছি। ইনশাআল্লাহ আমরা এটা ওভারকামের জন্য কাজ করছি। কথা দিচ্ছি, আমাদের টিমের কেউ না কেউ ১০০, ২০০ বা ৩০০ করবে।’ মুমিনুল সেই কথা রাখার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন। দ্বিতীয়দিন শেষে যখন মুশফিককে (৩২*) নিয়ে মাঠ ছাড়ছেন, তখন মুমিনুলের ব্যক্তিগত স্কোরে লেখা ৭৯ রান। ১৩৯ বলে ৭ চারে এই রান করে অপরাজিত থাকেন। আর ২১ রান হলে সেঞ্চুরিও করে ফেলবেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। মুমিনুল-মুশফিক মিলে চতুর্থ উইকেটে ৬৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিও গড়েন। প্রতি সেশনেই একটি করে উইকেট পড়ে বাংলাদেশের। তবে মুমিনুল ও মুশফিক মিলে দৃঢ়ভাবে ব্যাটিং করে চলেছেন। আজ যদি এ দুই ব্যাটসম্যানের সঙ্গে মিঠুন, লিটনও ভাল ব্যাটিং করতে পারেন তাহলে ৩৫০ রান এমনিতেই করবে। আর যদি ৪০০ রান করা যায় তাহলে জিম্বাবুইয়ের হারের সম্ভাবনা তৈরি হয়ে যাবে। বাংলাদেশ যে নতুন শুরুর আশা করছে। হারের বৃত্ত থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। জয়ের ধারায় ফিরতে চাচ্ছে, সেই আশা পূরণ হবে। জিম্বাবুইয়ে প্রথমদিন ৬ উইকেটে ২২৮ রান করে। আরভিন ১০৭ রানের অসাধারণ ইনিংস উপহার দেন। সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ওপেনার প্রিন্স মাসভাউরেকে (৬৪) নিয়ে ১১১ রানের জুটি গড়েন। তাতেই এই রান হয়। নির্ভরযোগ্য কোন ব্যাটসম্যান বাকি না থাকায় বোঝাই যাচ্ছিল, বেশিদূর আর যেতে পারবে না তারা। তাও দিনের প্রথম ৬ ওভার পর্যন্ত প্রথমদিনে ৯ রানে অপরাজিত থাকা চাকাভার সঙ্গে তিরিপানো টিকে থাকেন। দলের রান ২৪০ হতেই শুরু হয়ে যায় জিম্বাবুইয়ের উইকেট পড়া। আবু জায়েদ রাহী এমনই দুর্দান্ত সুইং দিতে থাকেন, জিম্বাবুইয়ের নিচের সারির ব্যাটসম্যানরা ছন্নছাড়া হয়ে পড়েন। তিরিপানোকে (৮) দ্রুতই আউট করে দেন রাহী। পেসার রাহী একপাশে, আরেকপাশে স্পিনার তাইজুল ইসলামকে দিয়ে বোলিং করান অধিনায়ক মুমিনুল। রাহীর সুইং ও গতি এবং তাইজুলের স্পিনে ছারখার হয়ে যান জিম্বাবুইয়ে ব্যাটসম্যানরা। প্রথমদিন ৪ উইকেট নেয়া স্পিনার নাঈম হাসান দেখান ঝলক। তাইজুল কোন উইকেট পাননি। কিন্তু দ্বিতীয়দিন তাইজুলের স্পিন জাদু দেখার মিলে। তিরিপানোকে আউট করার পর ৪ রান যোগ হতেই এ্যান্সলি এনডিলোভুকে এলবিডব্লিউ করে দেন রাহী। প্রথমদিন ২টি ও দ্বিতীয়দিনও ২টি উইকেট শিকার করে নেন। এবার তাইজুল ঝলক শুরু হয়। চার্লটন টিসুমা ব্যাট হাতে নামেন আর তাইজুলের স্পিন ফাঁদে পড়েন। শেষ উইকেট তুলে নিতে অবশ্য বাংলাদেশকে ২০ রান অপেক্ষা করতে হয়। চাকাভা একাই লড়ে যেতে থাকেন। তাকে ভাল সঙ্গ দিয়ে যেতে থাকেন ভিক্টর নিয়াউচি। যখন দলের রান ২৬৫ রানে যায়, তখন তাইজুলের বাড়তি ঘুরে আসা বলটিতে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে নাঈমের কাছে ক্যাচ আউট হয়ে যান চাকাভা (৩০)। তিনিই নিয়াউচিকে (৬*) সঙ্গে নিয়ে দলকে শেষদিকে কিছুটা রান এনে দেন। তবে চাকাভা আউট হতেই জিম্বাবুইয়ের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায়। রাহী ৭১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন। প্রথমদিনের সঙ্গে আর ৩৭ রান যোগ করতে পারে জিম্বাবুইয়ে। দ্বিতীয়দিন সকালের এক ঘণ্টার কিছু সময় পরই জিম্বাবুইয়ের প্রথম ইনিংস শেষ হয়ে যায়। এরপর যে বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে দ্বিতীয়দিন সহজেই শেষ করে। তৃতীয়দিনটিও এখন বাংলাদেশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ম্যাচের ফলও নিজেদের দিকে আনতে পারবে।
×