ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যানজটে ঢাকায় বছরে আর্থিক ক্ষতি ৩৭ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  যানজটে ঢাকায় বছরে আর্থিক ক্ষতি ৩৭ হাজার কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকায় যানজটের কারণে দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টার অপচয় ঘটছে, এর আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। হাঁটার গতির মতো ঘণ্টায় প্রায় পাঁচ কিমিতে নেমে এসেছে যানবাহনের গতি। ১২ বছর আগেও এ গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিমি। বছরে এতবড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি একটি দেশ বা শহরের জন্য উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার বিষয় হিসেবে তুলে ধরেছেন বিশেষজ্ঞরা। শহরের সমস্যা সমাধানে ক্ষমতা ও দায়িত্ব বিকেন্দ্রীকরণের একটি পথ হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। রবিবার খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে কেআইবি ‘দ্য ফিউচার প্ল্যানিং আরবান ট্রান্সপোর্টেশন ইন ঢাকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেছেন বক্তারা। বক্তারা বলেন, সামান্য দূরত্বের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতেও মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ ও সময়ের অপচয় এখন অস্বাভাবিক মাত্রায় গিয়ে ঠেকেছে। হাঁটার গতির মতো ঘণ্টায় প্রায় পাঁচ কিমিতে নেমে এসেছে যন্ত্রচালিত যানবাহনের গতি। রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি ও মুক্ত আকাশের উপদেষ্টা সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আরবান হেবিটেট কনসালট্যান্টসের চেয়ারম্যান স্থপতি পরিকল্পনাবিদ তানউইর নেওয়াজ। সেমিনারে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, ঢাকা শহরে প্রতি বর্গকিমিতে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ বসবাস করেন। গত ৪৮ বছরে ঢাকা শহরে ৩৪৫ বর্গকিমি এলাকা বেড়েছে, আর ভাসমান মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ২৮ মিলিয়নেরও বেশি। বর্তমানে বৃহত্তর ঢাকার গাজীপুর সাভার নারায়ণগঞ্জ মানিকগঞ্জে ২০ মিলিয়ন লোকের বাস। এ কারণে রাজধানীতে মানুষের চাপ বাড়ছে, যানজট বাড়ছে। বক্তারা বলেন, রাজধানীতে প্রতিদিন লোকসংখ্যা বাড়ছে, বিদ্যমান যানবাহনের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে বিপুলসংখ্যক নতুন নতুন যানবাহন। অন্যদিকে বর্তমানে নতুন যানবাহন যুক্ত হচ্ছে, কিন্তু বেহাল সড়কের সংখ্যা আগের মতোই থেকে যাচ্ছে। সরকারের ভিশনারী প্রকল্পগুলো বিশেষ করে মেট্রোরেল স্থাপনের কাজ চলমান থাকায় নগরবাসীর দুর্ভোগ অবর্ণনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলমান পরিস্থিতি উত্তোরণে যেসব পরিকল্পনা বা সুপারিশ গৃহীত হয়েছে বা হচ্ছে তার অধিকাংশই স্বল্পমেয়াদী ও অদূরদর্শী, যদিও সমম্বিত পরিকল্পনা উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে দৃশ্যমান নয়। সারাদেশে যাত্রীবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা কার্যকর করতে ব্যর্থ হওয়ায় যাত্রীসেবার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, বেড়েছে দুর্ঘটনা। যত্রতত্র বাসে যাত্রী ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার সমালোচনা করেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে উঠে আসে মানহীন গণপরিবহন সমস্যার বিষয়টিও। চলমান হতাশাজনক প্রেক্ষাপটে এ সেমিনার কিছুটা হলেও আলোর পথ দেখাবে, ইতিবাচক পথরেখার সন্ধান দেবে মনে করেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এটি ভয়ঙ্কর সমস্যা। চার বছর আগে যে রাস্তা কাঁটা হয়েছে তার কাজ এখনও শেষ হচ্ছে না। এসব সমস্যার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা প্রায়শ বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করি, তার বাস্তবায়ন খুবই কম, এটি খুবই দুর্বল ব্যবস্থা। সামনে আরও নানান সমস্যা আসছে, কিন্তু যানজট কতটুকু কমানো সম্ভব হবে তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। শহরের সমস্যা সমাধানে ক্ষমতা ও দায়িত্ব বিকেন্দ্রীকরণের একটি পথ হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, শহরের সমস্যা সমাধানে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ ও দায়িত্ব বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। সিলেটের বিশেষ দায়িত্ব সিলেটেই শেষ করতে হবে, রংপুরের দায়িত্ব রংপুরে। আমরা যদি সাহসের সঙ্গে তা করতে পারি, তাহলেই এ সমস্যা কিছুটা হলেও করতে পারব বলে আশা করছি। এমএ মান্নান বলেন, আমরা বিকেন্দ্রীকরণের চেষ্টা করেও অনেকটা ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের রেল-স্টিমারের অফিস করা হয়েছিল বরিশালে চট্টগ্রামে। কর্তাব্যক্তিরা সবাই ঢাকায় বসে থেকে কাজ করতে চান। এ জন্য কাজ হয়নি। শুধু অফিস বিকেন্দ্রীকরণ করলে হবে না অফিসের মূল বিষয় ফান্ড বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, অর্থনীতিকে বিকেন্দ্রীকরণ। এগুলো করতে পারলেই শহরের সমস্যা অনেকাংশেই কমে যাবে বলে আমি মনে করি। প্ল্যানিং বাস্তবায়নে আমরা অনেকটাই দুর্বল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্ল্যানিং করি কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করতে পারি না। এগুলো সবার সহযোগিতা নিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। গণতন্ত্রকে সম্মান করতে গেলে গণতন্ত্রের কাঁটা সহ্য করতে হবে। রাজধানীর যানজট গণতন্ত্রের জন্য কাঁটা। এগুলো সমন্বয় করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
×