ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা-যশোলদিয়া প্রকল্প চাহিদা পূরণ করতে পারছে না

পদ্মার পানি সরবরাহ সত্ত্বেও পুরান ঢাকায় সঙ্কট কাটেনি

প্রকাশিত: ১০:০৫, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  পদ্মার পানি সরবরাহ সত্ত্বেও পুরান ঢাকায় সঙ্কট কাটেনি

ফিরোজ মান্না ॥ ঢাকা ওয়াসার ‘পদ্মা-যশোলদিয়া’ পানি শোধনাগার প্রকল্প পুরান ঢাকাবাসীর পানির চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। এলাকাবাসীর অভিযোগ পদ্মা-যশোলদিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে পানি সরবরাহ হচ্ছে কি না তা ওয়াসার কর্মকর্তারাই জানেন। এলাকাবাসী এই প্রকল্পের কোন সুফল পাচ্ছে না। গত বছরের ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। অভিযোগ উঠেছে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ না করেই ঢাকা ওয়াসা প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে প্রকল্পটি তড়িঘড়ি উদ্বোধন করান। কারণ এই প্রকল্পের কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ানোর শেষ দিকে আর মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ ছিল না বলে প্রকল্পটির উদ্বোধন করা হয়েছে। এদিকে ওয়াসা বলছে, পদ্মার পানি সরবরাহ শুরু হওয়ার পর থেকে পুরান ঢাকা থেকে ২৫ ডিপটিউবওয়েল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পদ্মা থেকে আনা সাড়ে ১২ থেকে ১৫ কোটি লিটার পানি প্রতিদিন সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে পানির পরিমাণ বাড়ানো হবে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য ওয়াসার এমডির সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ওয়াসার পরিচালক অপারেশন শহীদ উদ্দীন জনকণ্ঠকে জানান, পুরান ঢাকায় এখন কোন পানির সঙ্কট নেই। কারণ সেখানে জোন-১-২-৬ এ পানি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন সাড়ে ১২ কোটি থেকে ১৫ কোটি লিটার পানি পদ্মা থেকে আসছে। এতে এলাকাবাসীর চাহিদা পূরণ হয়েও পানি বাড়তি থাকছে। যদি কেউ অভিযোগ করে থাকেন তারা পানি পাচ্ছেন না তাহলে সেটা সঠিক হবে না। তবে হ্যাঁ কিছু পকেট এরিয়া রয়েছে যেখানে পানি সরবরাহ দেয়া একটু কঠিন। এটা আগেও ছিল এখনও আছে। এক শ’ বছরের পুরনো পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। যে পাইপগুলো পানির চাপ নিতে পারছে না। নতুন করে প্লাস্টিক পাইপ স্থাপন করার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা না হলে পদ্মা নদীর পানির সুফল মানুষ এত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন না। পাইপ লাইনের নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য অল্প দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে। পদ্মা নদী থেকে পানি সরবরাহ হচ্ছে বলেই তো আমরা ২৫টি ডিপটিউবওয়েল বন্ধ করে দিয়েছি। পানি যদি নাই সরবরাহ হবে তাহলে টিউবয়েল বন্ধ করার কোন কারণ নেই। এলাকাবাসী জানিয়েছে, পদ্মার পানি রাজধানীর পুরান ঢাকায় সরবরাহ শুরু হলেও এলাকায় পানি সঙ্কট কাটেনি। এলাকার মানুষের অভিযোগ তারা আগে যে রকম পানি সঙ্কটে ছিলেন এখনও সেই সঙ্কটেই রয়েছেন। ওয়াসার জোন-১ ও ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে দু’টি জোনের কর্মকর্তারা বলেছেন, পদ্মা থেকে প্রথমে পানি আসার কথা কেরানীগঞ্জ রিজার্ভারে। সেখান থেকে পানি সরবরাহ লাইনের মাধ্যমে মানুষের বাসা বাড়িতে যাওয়ার কথা। কিন্তু কেরানীগঞ্জ রিজার্ভারই নির্মাণ শেষ হয়নি। ফলে রিজার্ভার থেকে পানি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে না। পদ্মা থেকে অল্প পরিমাণ পানি শোধন করা হচ্ছে। ওই পানি সরাসরি পাইপ লাইনে বাসা বাড়িতে সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। তাও পুরান ঢাকার সব এলাকায় এই পানি দেয়া হচ্ছে না। তবে পদ্মা থেকে পানি পুরোদমে উৎপাদন শুরু হলে এই এলাকার পানি সঙ্কট দূর হবে। ঢাকা ওয়াসার পদ্মা-যশোলদিয়া প্রকল্পের পিডি রফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, প্রকল্প শেষ হয়েছে। এখন আর আমি এই প্রকল্পের পিডি নই। প্রকল্পটি ওয়াসার অপারেশন বিভাগের হাতে চলে গেছে। এখন এই প্রকল্পের সব কিছুই ওয়াসাই দেখছে। আমি বিষয়টি নিয়ে কোন মন্তব্য করতে পারব না। ওয়াসা জানিয়েছে, পদ্মা থেকে পানি সরবরাহ শুরু হওয়ার পর থেকে অনেকগুলো গভীর নলকূপ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যে পরিমাণ পানি সরবরাহ হচ্ছে-তাতে অনেক এলাকায় পানির চাপে পুরান সরবরাহ পাইপ ফেটে যাচ্ছে। ফলে রাস্তায় পানি জমছে। পানির যাতে অপচয় না হয়, সে জন্য একটি টিম সব সময়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খবর পেলেই দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে ওই সব সরবরাহ পাইপ। রাজধানীবাসীকে প্রতিদিন ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ দেবে এই শোধনাগার। তবে এখনও পুরোদমে পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। কারণ রাজধানীতে বিতরণ লাইন পুরোপুরি না হওয়ায় উৎপাদিত ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। বিতরণ ব্যবস্থার কাজ চলছে। নতুন করে পুরান ঢাকায় পানির লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। বেশ কিছু এলাকায় বাসা বাড়িতে পানি সরবরাহের নতুন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। ঘনবসতির কারণে এই এলাকায় পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন করতে বেশ সময় লেগে যাচ্ছে। তবে অল্পদিনের মধ্যে উৎপাদিত পানির লাইন স্থাপনের কাজ শেষ হলে পুরান ঢাকার মানুষ পানি সুবিধা পুরোপুরি ভোগ করতে পারবেন। ঢাকা মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার যশোলদিয়ায় প্রকল্পটির শোধনাগার। পদ্মা নদী থেকে পানি এসে পড়ছে বিশাল শোধনাগারে।
×