ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এ প্রস্তাব অযৌক্তিক অগ্রহণযোগ্য ॥ টিআইবি

পানির দাম দ্বিগুণ করায় ওয়াসার প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ নগরবাসী

প্রকাশিত: ১১:২৯, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পানির দাম দ্বিগুণ করায় ওয়াসার প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ নগরবাসী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা ওয়াসা পানির দাম প্রায় দ্বিগুণ করার প্রস্তাব পাঠিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে। ওয়াসা বলছে পানি উত্তোলনের ব্যয় বাড়ায় গ্রাহক পর্যায়ে পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাবে নগরবাসী চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান জনকণ্ঠকে বলেন, গত কয়েক বছরে পানি উত্তোলন ও ‘সারফেস ওয়াটার’ বা নদী থেকে পানি এনে ঢাকা শহরে সরবরাহ দেয়ায় ব্যয় অনেক বেড়েছে। ব্যয় সামাল দিতে ওয়াসা এখন হিমসিম খাচ্ছে। সরকার বিপুল অংকের টাকা ভর্তুকি দিয়ে গ্রাহকদের পানি সরবরাহ দিচ্ছে। পরে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে আমরা পানির দাম সমন্বয়ের জন্য কনসাল্ট্যান্ট নিয়োগ করি এক বছর আগে। তারা দীর্ঘদিন ধরে ওয়াসার ব্যয় ও আয়ের ওপর ভিত্তি করে একটি হিসাব তৈরি করে দেন। ওই হিসাবের ওপর ভিত্তি করে ঢাকা ওয়াসা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অবশ্য এই প্রস্তাব চূড়ান্ত কোন কিছু নয়। মন্ত্রণালয় এখান থেকে কাটছাট করতে পারে। ওয়াসা সর্বশেষ পানির দাম বাড়ায় ’১৭ সালে। এরপর দীর্ঘদিন আর পানির দাম বাড়ানো হয়নি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পানির মূল্যবৃদ্ধি যৌক্তিক বলে ওয়াসা মনে করে। কারণ আমাদের বুঝতে হবে পানির দাম না বাড়ালে সরকারকে ভতুর্কি দিতে হবে। সরকার এত বিপুল অংকের টাকা ভতুর্কি দিতে রাজি নাও হতে পারে। আমরা তাই একটা প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। মনে হয় না গ্রাহকরা এ প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হবেন। কারণ গোটা বাংলাদেশেই পানির দাম কম। পরিচালন ব্যয়, ঘাটতি ও ঋণ পরিশোধের জন্য আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে ঢাকা ওয়াসা পানির এ দাম প্রস্তাব করেছে। এদিকে ওয়াসা এ প্রস্তাবকে অযৌক্তিক ও গ্রাহকের ওপর নির্যাতনমূলক বলে উল্লেখ করেছেন ক্ষুব্ধ নগরবাসী। তারা বলেছেন, বার বার পানির দাম বাড়িয়ে জনজীবনে দুর্ভোগ তৈরি করা হচ্ছে। বর্তমানে আবাসিক সংযোগে প্রতি এক হাজার লিটার পানির বর্তমান মূল্য ১১ টাকা ৫৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা, আর বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগে বর্তমান দাম ৩৭ টাকা ৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করার প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পানি ও পয়োঅভিকর (পয়ঃব্যবস্থা ব্যবহারের জন্য কর্তৃপক্ষ আরোপিত চার্জ) ছাড়া ওয়াসার আর কোন আয় না থাকায় পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। একইসঙ্গে পানি উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। পরিচালন ব্যয়, ঘাটতি ও ঋণ পরিশোধের অজুহাতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক খাতে ঢাকা ওয়াসার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পানির মূল্যবৃদ্ধির এ প্রস্তাব অযৌক্তিক, নির্যাতনমূলক ও অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়েছে টিআইবি। মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত এ প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞসহ গণশুনানির মাধ্যমে ওয়াসা আইন অনুযায়ী পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ ও গুণগতমান নিশ্চিত সাপেক্ষে যৌক্তিক ও সহনীয় মাত্রায় মূল্যবৃদ্ধির আহ্বান জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এক বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা ওয়াসা আবাসিক গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট পানির দাম ১১ দশমিক ৫৭ টাকা থেকে ২০ টাকা এবং বাণিজ্যিক পর্যায়ে ৩৭ দশমিক ৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা (সার্বিকভাবে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি) নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। ওয়াসা আইন ১৯৯৬ অনুযায়ী, বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির বিধান রয়েছে। বর্তমান প্রস্তাব ওয়াসা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
×