ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তিনজনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ছিনতাই, গ্রেফতার আরও ২ জন

প্রকাশিত: ১১:২৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ছিনতাই, গ্রেফতার আরও ২ জন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত আরও দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই। এ নিয়ে চারজন গ্রেফতার হলো। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন ও পলাতকদের কয়েকজন ছাত্রলীগের ঢাকা কলেজ শাখার নেতাকর্মী বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও দায়িত্বশীল কোন সূত্র থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এমনকি ছাত্রলীগের তরফ থেকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর উত্তরের বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ বশির আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর শনিরআখড়া এলাকায় মাহমুদুল হাসান নামে এক ব্যক্তিকে র‌্যাব পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে বাস থেকে নামিয়ে নেয় ৪/৫ জন। ঘটনার সময় কয়েকজন উবারচালক র‌্যাব পরিচয়দানকারীরা সত্যিকারের র‌্যাব সদস্য কিনা সে বিষয়ে চ্যালেঞ্জ করেন। এ সময় পরিচয়দানকারী তাদের ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার ও পরিচয়পত্র ফেলে মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে থাকা তিন লাখ টাকা ও মোবাইল সেট নিয়ে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে মাহমুদুল হাসান যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তারা মামলাটির তদন্ত করছেন। তদন্তে চলতি বছরের জানুয়ারিতে মেহেদী হাসান ও আশিক পারভেজ নামের দুইজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য মোতাবেক গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দারুস সালাম থানা এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে স্বাধীন ও মোহাম্মদপুরের কলেজ গেট এলাকা থেকে আলমগীর খাঁকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মেহেদী হাসান ছাড়া বাকি তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। জবানবন্দীতে তারা র‌্যাবের পোশাকে টাকা লুটের ওই ঘটনার দায় স্বীকার করে। পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ বশির আহমেদ জনকণ্ঠকে জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আশিক পারভেজ ঢাকা কলেজের ছাত্র বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তদন্তে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পলাতকদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে আসামিদের কোন রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা তা জানা যায়নি। পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে চক্রের মূলহোতা ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সুব্রত হালদার বাপ্পী বলে দাবি করা হয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক পরিধান করে দিনেই বাসা বাড়ি, ব্যাংক ও যানবাহন থেকে টার্গেট করা ব্যক্তিকে নামিয়ে নিয়ে তল্লাশির নামে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিত। চক্রের সদস্যরা সারাদেশেই এমন অপরাধ করত। চক্রের অপর সদস্য হিসেবে ইমরান, সজীব, রাকিব ও ইউসুফের নাম এসেছে। এদের মধ্যে ইমরান ও সজীব ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মী। তারা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহব্বায়ক সুব্রত হালদার বাপ্পীর অনুসারী। এখন পর্যন্ত চক্রে ১৫ জন জড়িত বলে নাম এসেছে। তাদের কাছে ওয়াকিটকি, ডিবি, র‌্যাব ও পুলিশের পোশাক আছে বলে জানা গেছে। তারা প্রাইভেটকার অথবা মাইক্রোবাস এবং আগ্নেয়াস্ত্রসহ ব্যাংক, যানবাহন, ফুটপাথ ও বাসা থেকে লোকজনকে তুলে নিয়ে টাকা আদায় করে। মামলার তদন্তকারী কমকর্তা পিবিআই ঢাকা মেট্রোর উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক কামাল হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত ও ছিনতাইকারী দলের সদস্য। তারা কখনও র‌্যাব, কখনও ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রথমে অপহরণ ও পরে ডাকাতি করে সর্বস্ব লুটে নেয়। তাদের জেলখানায় পরিচয় হয়েছিল। গ্রেফতারকৃতদের কারও কারও বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। ২০১৫ সালে স্বাধীন কলাবাগান থানা এলাকায় এক ব্যক্তির কাছ থেকে একই কায়দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে আটক করে নগদ টাকা না পেয়ে চেক নেয়। সেই চেক দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। গ্রেফতারকৃতরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে সুব্রত হাওলাদারের সঙ্গে গ্রেফতারকৃতদের যোগাযোগ থাকার তথ্য মিলেছে। পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, বলছে, ২০১৬ সালে সংঘবদ্ধ এই চক্রটি রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে তিন কোটি টাকা দাবি করে। ওই ব্যবসায়ী এত টাকা দিতে না পারায় তাকে হত্যা করে চক্রটি। ওই ঘটনার সঙ্গে পথিক ও ইউসুফ নামে দুইজন সরাসরি জড়িত ছিল। ওই ঘটনাটিও নতুন করে অনুসন্ধান করছে পিবিআই। অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, বাপ্পীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, বাপ্পীর এলাকার কিছু যুবক এলাকায় নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত করত। তারা এসে ঢাকা কলেজে বাপ্পীর কাছে আশ্রয় নিত। তারা ঢাকায়ও একই কায়দায় অপরাধ সংঘটিত করত।
×