ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

’২১ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণার উদ্যোগ ॥ বিমানমন্ত্রী

শিল্প হিসেবে পর্যটন গড়তে মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে

প্রকাশিত: ১১:২৬, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

শিল্প হিসেবে পর্যটন গড়তে মহাপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে ২০২১ সালকে পর্যটনবর্ষ হিসেবে ঘোষণার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পর্যটনকে সত্যিকার অর্থেই একটি শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ইতোমধ্যে মহাপরিকল্পনার কাজও শুরু হয়ে গেছে। প্রতিটি ধর্মের মানুষের বিনোদন অধিকারের প্রতি সম্মান দিয়েই বিদেশী পর্যটক আকৃষ্ট করার নীতি গ্রহণ করতে হবে। তবেই পর্যটন সতিকার অর্থে শিল্পের মর্যাদা পাবে। শনিবার দুপুরে পর্যটন সংক্রান্ত এক সেমিনারে এ ধরনের তথ্য প্রকাশ করলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী, এমপি। রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আয়োজিত বাংলাদেশের পর্যটন : সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আগামী বছরকে পর্যটনবর্ষ ঘোষণা করতে কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়ার পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। মাহবুব আলী বলেন, পর্যটন প্রতিযোগিতার বাজার, যে যত বেশি সেবা দেবে, তার দিকেই ঝুঁকবেন পর্যটক। সেবার মান নিশ্চিত করতে পারলে পর্যটন বিকশিত হবে। আগে হয়নি বলে বর্তমানে হবে না এটি কোন কথা নয়। ইচ্ছা, উদ্যম ও পরিশ্রম থাকলে সব কিছু অর্জন করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং কর্মে এ দেশ আজ সারাবিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং, আমরা যদি পরিশ্রম করি, উদ্যমী হই পর্যটনে অবশ্যই দৃশ্যমান পরিবর্তন আনা সম্ভব। তিনি বলেন, এতদিন নানা কারণে দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন পর্যটন শিল্পের বিকাশ নিশ্চিত করা হবে। সকল স্টেকহোল্ডারের সুপারিশ শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে। আমরা আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, ছোট কাটরা, জাতীয় সংসদ ভবনসহ সকল ঐতিহাসিক ও পুরাতাত্ত্বিক স্থাপনা ব্র্যান্ডিং করব। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মহিবুল হক বলেন, এজন্য গণমাধ্যমকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। এমনভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে হবে, যাতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের নেতিবাচক মনোভাব না জন্মায়। আমাদের দেশে পর্যটকদের জন্য প্রকৃত অর্থে সেরকম কোন বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা সেই ব্যাপারে ব্যবস্থাগ্রহণ করছি। কক্সবাজারে পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের উপযুক্ত বিনোদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আগামী এপ্রিল থেকে সরাসরি সিলেট-লন্ডন ফ্লাইট চালু করা হবে। ইতোমধ্যে সিলেট বিমানবন্দর সম্প্রসারণের আইনী বাধা অতিক্রম করে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্নের পথে। এখন আর কোন বাধা রইল না। খুব শীঘ্রই কার্যাদেশ দিয়ে কাজ শুরু করা হবে। সিনিয়র সচিব বলেন, একইভাবে সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করতে ৯১২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করতে ডিজাইনার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামী ২ বছরের মধ্যে একটা ডিজাইন দেবে। কক্সবাজার বিমানবন্দর ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার জন্য এর রানওয়েসহ সার্বিক লাইটিং সিস্টেমের উন্নয়ন করা হচ্ছে। অতি দ্রুত কক্সবাজার থেকে ২৪ ঘণ্টা ফ্লাইট পরিচালনা করা যাবে। পর্যটনকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশের মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। প্রধান অতিথি প্রতিন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, এদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রভূত উন্নতি হয়েছে। দেশের প্রতিটি জায়গায় প্রতিটি কোণে এখন পর্যটকরা নিরাপদে বিচরণ করতে পারছেন। ট্যুরিস্ট পুলিশ গঠন করায় দেশের প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের আকর্ষণে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। পর্যটক আসলে বের হতে পারবে না, এমন পরিস্থিতি আর নাই। এ ছাড়া পর্যটন মহা পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমাদের সম্ভাবনা ও ঘাটতির জায়গাগুলো তারা চিহ্নিত করবে বা তারা আমাদের পর্যটন উন্নয়নে পরামর্শ দেবেন। সেগুলো আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন করব। আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিদেশী পর্যটক আকৃষ্ট করতে সুযোগ সুবিধা দিতে হবে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতা ছাড়া পর্যটনের বিকাশ সম্ভব নয়। পর্যটন বিকাশের জন্য আমাদের জাতি হিসাবে পর্যটনবান্ধব হতে হবে। বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া পর্যটন কর্পোরেশনকে অবশ্যই পর্যটনের উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে ও উদ্যমী হতে হবে। গতানুগতিক কাজের মাধ্যমে পর্যটনের সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। আমরা পর্যটনের দৃশ্যমান উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছি। ট্রাভেল ম্যাগাজিন ভ্রমণের সম্পাদক আবু সুফিয়ানের উপস্থাপনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ, পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান রাম চন্দ্র দাস, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মোকাব্বির হোসেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি মল্লিক ফখরুল ইসলাম, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মোঃ সবুর খান ও গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নওয়াজিশ আলী খান।
×