ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রন্থমেলা প্রতিদিন

পাঠক সমাদৃত কিছু বইয়ের কথা

প্রকাশিত: ১১:২৫, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পাঠক সমাদৃত কিছু বইয়ের কথা

মনোয়ার হোসেন ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এখন বইছে ভরা মৌসুম। বই নিয়ে নাড়াচাড়ার পরিবর্তে কেনার চিত্রটাই চোখে পড়ছে বেশি। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ প্রকাশনীর অধিকাংশ বই চলে এসেছে মেলায়। তাই পাঠককে চাইলেই সংগ্রহ করতে পারেন তার মননের উপযোগী বইটি। শনিবার ছিল বইমেলার ২১তম দিন। বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এদিন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে ৩ হাজার ৬৩১টি নতুন বই। তবে এই বিপুলসংখ্যক বইয়ের অধিকাংশই টানে না পাঠককে। সেই সূত্রে সব বইয়ের বিকিকিনি ভাল হয় না। স্বল্পসংখ্যক বই নজর কাড়ে পাঠকের পাঠকের। বহুল বিক্রীত তেমন কিছু বই হয়েছে পাঠক সমাদৃত। সেই তালিকায় গল্প-উপন্যাস কিংবা কবিতার মতো সৃজনশীল বইয়ের সঙ্গে পাঠক চাহিদায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে রাজনীতি, ইতিহাস, গবেষণাসহ বহুমাত্রিক বিষয়ের মননশীল প্রবন্ধের গ্রন্থ। পাঠক কাটতি পাওয়া তেমন কিছু বইয়ের কথা মেলে ধরা হলো এই লেখায়। এবারের মেলায় একইসঙ্গে সর্বোচ্চ পাঠক সমাদৃত এবং বহুল বিক্রীত বইটির শিরোনাম ‘আমার দেখা নয়াচীন’। শেখ মুজিবুর রহমান রচিত বাংলা একাডেমি প্রকাশিত গ্রন্থটি রয়েছে পাঠক চাহিদার শীর্ষে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু লেখা তৃতীয় বইটির প্রথম মুদ্রণের ২০ হাজার কপি চলে গেছে বইপ্রেমীদের বাড়িতে। বর্তমানে দ্বিতীয় মুদ্রণের ১০ হাজার কপিও রয়েছে শেষের পথে। এছাড়াও একাডেমি প্রকাশিত এম আবদুল আলীম রচিত ‘বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন’ গ্রন্থটির প্রথম মুদ্রণ ফুরিয়ে বেরিয়েছে দ্বিতীয় মুদ্রণ। বরাবরের মতো এবারের মেলাতেও পাঠক টেনেছেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তা¤্রলিপি থেকে এসেছে এই লেখকের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ‘প্রজেক্ট আকাশলীন’। চলছে চাহিদার তুঙ্গে থাকা বইটির চতুর্থ সংস্করণ। দীর্ঘ ৩৪ বছরের বিরতি ভেঙে এসেছে কবি হেলাল হাফিজের দ্বিতীয় মৌলিক কাব্যগ্রন্থ ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’। দিব্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত পাঠক সমাদৃত বইটির হাজার কপির প্রথম সংস্করণ শেষে বেরিয়েছে দ্বিতীয় সংস্করণ। আনিসুল হকের রাজনৈতিক উপন্যাস ‘এখানে থেমো না’ চলছে বেশ। প্রথমা থেকে প্রকাশিত বইটির ৩ হাজার কপির প্রথম সংস্করণ শেষে এসেছে দ্বিতীয় সংস্করণ। পাঞ্জেরী থেকে আসা ধ্রুব এষের উপন্যাস ‘পরেশের বউ’নজর কেড়েছে পাঠকের। সেই দুই হাজার কপির প্রথম সংস্করণ এখন শেষের পথে। বাতিঘর থেকে প্রকাশিত মহিউদ্দিন আহমদের লেখা রাজনীতিবিষয়ক বই ‘বেলা-বেলা : বাংলাদেশ ১৯৭২-১৯৭৫’ চলছে ভাল। প্রথম মুদ্রণ শেষে বেরিয়েছে গ্রন্থটির দ্বিতীয় সংস্করণ। একই প্রকাশনী থেকে এই লেখকের ‘৩২ নম্বর পাশের বাড়ি’ শীর্ষক স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থটিরও দ্বিতীয় সংস্করণ বেরিয়েছে। প্রকাশনা সংস্থা বায়ান্ন থেকে প্রকাশিত মারজুক রাসেলের ‘দেহবণ্টনবিষয়ক দ্বিপক্ষী চুক্তিনামা স্বাক্ষর’ নামের কাব্যগ্রন্থটি পেয়েছে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা। সেই সূত্রে শনিবার শেষে হয়েছে বইটির দশম সংস্করণ। কথাপ্রকাশ থেকে আসা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘ভালমানুষের জগৎ’ শীর্ষক গল্পগ্রন্থ চলছে ভাল। একই প্রকাশনী থেকে এসেছে সুমন্ত আসলামের ‘প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন চা খেতে আসেন’ উপন্যাসের দ্বিতীয় সংস্করণ চলছে। জার্নিম্যান বুকস থেকে বেরুনো আসা ইসলাম রচিত ‘নভেরা : বিভুঁইয়ে স্বভূমে’ চলছে ভাল। অনন্যা থেকে আসা ইমদাদুল হক মিলনের শিশুতোষ গ্রন্থ ‘বাবান ও টুনটুনি পাখি’র চতুর্থ সংস্করণ বেরিয়েছে। অন্যপ্রকাশ থেকে আসা সাদাত হোসাইনের ‘মেঘেদের দিন’ ও ‘মরণোত্তম’ নামের উপন্যাস দুটির একাধিক সংস্করণ বেরিয়েছে। একই লেখকের অন্যধারা থেকে প্রকাশিত ‘তোমাকে দেখার অসুখ’ নামের কাব্যগ্রন্থটির চতুর্থ সংস্করণ চলছে। প্রথমা থেকে প্রকাশিত আসিফ নজরুলের ‘মানবাধিকার’ নামের বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ বেরিয়েছে। তা¤্রলিপি থেকে বেরুনো আয়মান সাদিক ও সাদমান সাদিকের আত্মোন্নয়নমূলক গ্রন্থ ‘কমিউনিকেশন হ্যাকস’-এর চতুর্থ সংস্করণ চলছে। পার্ল পাবলিকেশন্স থেকে আসা মুহম্মদ জাফর ইকবালের শিশুতোশ গ্রন্থ ‘যেরকম টুনটুনি সেরকম ছোটাচ্চু’র চতুর্থ সংস্করণ চলছে। অনুপম থেকে আসা আহসান হাবীবের ‘সেরা ভূত’ গল্পগ্রন্থের কাটতি ভাল। বেঙ্গল পাবলিকেশন্সের ‘সমাজ রাষ্ট্র বিবর্তন : জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক’ গ্রন্থটির দ্বিতীয় সংস্করণ বেরিয়েছে। কাকলী থেকে প্রকাশিত মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ব্ল্যাককোল রহস্য’ নামের বিজ্ঞানবিষয়ক বইয়ের পঞ্চম সংস্করণ চলছে। অনিন্দ্য থেকে আসা মোশতাক আহমেদের ‘প্যারাসাইকোলজি জোছনার ছায়া’ গ্রন্থের চতুর্থ সংস্করণ বেরিয়েছে। ইউপিএল থেকে আসা আফসান চৌধুরী সম্পাদিত গবেষণাগ্রন্থ ‘হিন্দু জনগোষ্ঠীর একাত্তর’ চলছে ভাল। দেশ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত তরুণ লেখক জয়দীপ দের ‘কাসিদ’ নামের উপন্যাসের দ্বিতীয় সংস্করণ এসেছে। নতুন বই শনিবারে গ্রন্থমেলার ২১তম দিনে নতুন বই এসেছে ২৪২টি। এর মধ্যে অন্যধারা এনেছে সারফুদ্দিন আহমেদ অনূদিত নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফ জাইয়ের ‘মালালা’স ম্যাজিক পেন্সিল’। পারিজাত প্রকাশনী এনেছে মোনায়েম সরকার সম্পাদিত ‘গণহত্যা ১৯৭১’। যুক্ত এনেছে নিশাত জাহান রানার ‘আলোর নগর ছায়ার নগর’। উৎস থেকে এসেছে মিলু শামসের কাব্যগ্রন্থ ‘দীর্ঘায়িত দুঃখগুলো’। মিজান পাবলিশার্স এনেছে নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বনির্বাচিত ১১৫ কবিতা’। রাত্রি প্রকাশনী এনেছে ‘স্বকৃত নোমানের ‘মুসলিম মনন ও দর্শন অগ্রনায়কেরা’। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এনেছে মোজাফফর হোসেনের ‘তিমির যাত্রা’। অন্বয় প্রকাশনী এনেছে নির্মলেন্দু গুণের ‘শিরোনামহীন কবিতা’। বিভাস এনেছে নির্মলেন্দু গুণের প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘রক্তঝরা নভেম্বর ১৯৭৫’। মাটিগন্ধা এনেছে আহমদ রফিকের ‘রাষ্ট্রভাষার লড়াই’। বাংলা একাডেমি এনেছে শামসুজ্জামান খানের ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। শিশুকিশোর প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান এদিন সকালে অমর একুশে উদ্যাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অমর একুশে গ্রন্থমেলার সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ প্রমুখ। শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ক-শাখায় আবদুল্লাহ আল সাদ (প্রথম), ঋষিত শীল ধৃতি (দ্বিতীয়), রুহান আবদুল্লাহ (তৃতীয়)। খ-শাখায় মুনতাকা ইসলাম (প্রথম), নুজহাত তাসনীম রূপকথা (দ্বিতীয়), এস এম আবতাহী নূর (তৃতীয়)। গ-শাখায় নুরুল আফতাব (প্রথম) আবির রায় চৌধুরী (দ্বিতীয়), আরমান ভূইয়া অর্ক (তৃতীয়) স্থান লাভ করেন। শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা ক-শাখায় সুমাইতা নুসাইবা (প্রথম), ঋদ্ধ হাসান (দ্বিতীয়), আহ্নাফ বিন জামান (তৃতীয়)। খ-শাখায় যারীন সালসাবিল অর্পা (প্রথম), নওবা তাহিয়া হোসেন (দ্বিতীয়), আব্দুল্লাহ আল হাসান মাহি (তৃতীয়) স্থান লাভ করেন। শিশু-কিশোর সঙ্গীত প্রতিযোগিতা ক-শাখায় আফরা আদিলা রিমঝিম (প্রথম), তানজিম বিন তাজ প্রত্যয় (দ্বিতীয়), ছুওয়াইবা কবির ও সুনিপুণ বড়ুয়া চৌধুরী (তৃতীয়)। খ-শাখায় তানিশা জাহান নরিকা (প্রথম), গার্গী ঘোষ (দ্বিতীয়) এবং ত্বাবীব ফাইরুজ রোদশী (তৃতীয়) স্থান লাভ করেন। মেলামঞ্চের আলোচনা বিকেলে মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শামসুজ্জামান খান সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ : বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ পাঠ করেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. সোনিয়া নিশাত আমিন, গোলাম কুদ্দুছ এবং মামুন সিদ্দিকী। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মুহাম্মদ সামাদ। এদিকে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি অসীম সাহা, মুহাম্মদ সামাদ, মাশুক চৌধুরী, ফরিদ কবির, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, পিয়াস মজিদ এবং আলতাফ শাহনেওয়াজ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল মোঃ আনোয়ার হোসেনের পরিচালনায় ‘আরশিনগর বাউল সংঘ’-এর শিল্পীবৃন্দের পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন সমীর বাউল, দেলোয়ার হোসেন বয়াতী, সুধীর ম-ল, শ্যামল কুমার পাল, রাতুল শাহ, আঁখি আলম, বিমল বাউল। শনিবার লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন সলিমুল্লাহ খান, আহমাদ মোস্তফা কামাল, সাখাওয়াত টিপু এবং চঞ্চল আশরাফ।
×