ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শান্তির পথে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ॥ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান যুদ্ধবিরতি শুরু

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান যুদ্ধবিরতি শুরু

যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান তালেবানের মধ্যে সহিংসতার ৭ দিনের এক অস্ত্রবিরতি শুরু হয়েছে, বলেছেন কর্মকর্তারা। বিবিসি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও শুক্রবার বলেছেন, শান্তি অন্বেষণের দীর্ঘপথে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। উদ্যোগটি সফল হলে দু’পক্ষ প্রায় দু’দশকের সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ের একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে। অস্ত্রবিরতি চুক্তি স্থানীয় সময় শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর হয়েছে। আমেরিকান ও তালেবান প্রতিনিধিদের মধ্যে এক বছরের বেশি সময় ধরে আলোচনার পর চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। তালেবান আলোচকরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, তাদের প্রত্যাশিত চুক্তিকে সামনে রেখে এক উপযোগী নিরাপত্তা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হবে। সকল বিদেশী সৈন্য প্রত্যাহারের সঙ্গে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক কাজ শুরু হবে। ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টোলটেনবার্গ এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, সহিংসতা হ্রাসে ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় আস্থার সঙ্গে অবদান রাখায় তালেবানের ইচ্ছা এবং সামর্থ্যরে এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। আফগান সরকার এ আলোচনার অংশীদার নয়। সরকার এখন দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলকে কেন্দ্র করে এক বিরোধ সমাধানের চেষ্টায় ব্যস্ত। এর আগে চুক্তি ব্যর্থ হওয়ার পর কয়েক মাস ধরে লড়াইয়ে কোন বিরাম ছিল না। তালেবান ওই সময় সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা বাতিল করে দেয়ার মাধ্যমে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কাতার ২০১১ সাল থেকে তালেবান নেতাদের আতিথ্য দিয়ে এসেছে। এরা আফগানিস্তানে শান্তি আলোচনার জন্য কাতারে গেছেন। বিষয়টির প্রক্রিয়া ছিল বেশ কঠিন। ২০১৩ সালে কাতারে একটি তালেবান অফিস খোলা হয়। কিন্তু, পতাকা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে ওই বছরই অফিসটি বন্ধ হয়ে যায়। আলোচনার অন্যান্য উদ্যোগও বন্ধ হয়ে গেছে। কাতার জুলাইয়েও একটি বড় সম্মেলনের আয়োজন করে। যেখানে আফগান শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি রোডম্যাপের ওপর ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তালেবান ও আফগান সরকারের কর্মকর্তাগণ, দু’পক্ষই সে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। আফগান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটের দিকে তাকালে দেখা যায়, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার এক মাস পর এবং হামলার জন্য দায়ী ওসামা বিন লাদেনকে হস্তান্তরে তালেবান অস্বীকৃতি প্রকাশ করলে এ যুদ্ধ শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক জোট নিয়ে যুদ্ধে যোগ দেয় এবং ত্বরিত তালেবানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। পরে বিদ্রোহী শক্তি হিসেবে তালেবানের আবির্ভাব ঘটে। এরা মারাত্মক হামলা চালিয়ে যায় এবং পরবর্তী আফগান সরকারকে অস্থিতিশীল করে তোলে। তালেবান ২০১৮ সালে বিজয় অর্জনের গতি অব্যাহত রাখে। বিবিসি বলেছে যে, তালেবান জঙ্গীরা তখন আফগানিস্তানের ৭০ শতাংশ অঞ্চলে সক্রিয় থেকেছে। ২০০১ সালে এ সংঘাত শুরু হওয়ার পর আন্তর্জাতিক জোটের প্রায় ৩ হাজার ৫শ’ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে ২ হাজার ৩শ’র বেশি সৈন্য আমেরিকান। বেসামরিক আফগান, জঙ্গী ও সরকারী বাহিনীর নিহতের সংখ্যা নিরূপণ অত্যন্ত কঠিন। জাতিসংঘ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক রিপোর্টে বলেছে, ৩২ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়ার্টসন ইনস্টিটিউট বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর ৫৮ হাজার সদস্য ও বিরোধী পক্ষের ৪২ হাজার যোদ্ধা নিহত হয়েছে। কারা এ তালেবান? ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহার করার পর দেশটিতে যখন রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তখন এ তালেবান বা পশতু ভাষার ছাত্রদের উত্থানও ঘটে। তারা ১৯৯৬ সালে রাজধানী কাবুলের নিয়ন্ত্রণ দখল করে এবং দু’বছরের মধ্যে দেশের বেশিরভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। তারা শরিয়া বা ইসলামী বিধানের নিজস্ব কঠোর ও অনাড়ম্বর শাসন চালু করে। ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার আগে তারা টিভি সঙ্গীত ও সিনেমার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কঠোর পোশাক, নীতিমালা প্রয়োগ করে, নারী শিক্ষা ছেঁটে ফেলে এবং বর্বর শাস্তির প্রবর্তন করে। তারা ক্ষমতা থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর মোল্লাহ ওমর তালেবানের নেতৃত্বে ছিলেন।
×