ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নদীভাঙ্গন থেকে সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১০:১৬, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  নদীভাঙ্গন থেকে সব  গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার উদ্যোগ

ওয়াজেদ হীরা ॥ নদী ভাঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সিলেট বিভাগে কুশিয়ারার তীরে বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্ট, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, কৃষিজমি ও সরকারী-বেসরকারী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীভাঙ্গনের কবল থেকে বাঁচানোর জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে। পাশাপাশি ১৭৬ কিমি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌচলাচলের উপযোগী করা হবে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে এ বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ’২২ সালের জুনে প্রকল্প শেষ হবে। হবিগঞ্জ জেলার বিবিয়ানা বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর সামনে কুশিয়ারার উভয় তীরের প্রতিরক্ষা প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭৩ কোটি ৪৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সম্প্রতি প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে একনেক। প্রকল্পটি নিয়ে এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, আমাদের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পানি সম্পদ সেক্টরের বিষয়টি যেমন আছে, আমরা নদীতীর সংরক্ষণ ও নদী ড্রেজিং করব। নদীতীর সংরক্ষণ করা গেলে এর আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ যত স্থাপনা আছে সেসবও রক্ষা পাবে। ওখানে আমাদের বিদ্যুত প্ল্যান্ট আছে, রয়েছে সরকারী-বেসরকারী স্থাপনাও। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, নদীতীরে শুধু বিদ্যুত প্ল্যান্টই নয় অন্যান্য স্থাপনা রক্ষায় যেমন প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে তেমনি সামাজিক নিরাপত্তাসহ এলাকার আর্থ -সামাজিক উন্নয়ন হবে সে আলোকেই। মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলেও জানান একাধিক কর্মকর্তা। প্রকল্পটি সম্পর্কে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দহীন অনুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকার অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। প্রকল্প এলাকা সম্পর্কে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, প্রকল্পের কাজ হবে সিলেটের নবীগঞ্জ, বাহুবল, বানিয়াচং, লাখাই ও মাধবপুর উপজেলায়। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিবিয়ানা পাওয়ার প্ল্যান্টের কার্যক্রম সচল থাকবে, নদীর গতিপথ পরিবর্তন প্রতিরোধ, সামাজিক নিরাপত্তাসহ এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখা এবং পরিবেশের বিরূপ প্রভাব হতে প্রকল্প এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে। পাউবো জানায়, বরাক নদ ভারতের মনিপুরের পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে সিলেট সীমান্তে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুটি শাখায় বিভক্ত। কুশিয়ারা, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে সর্বশেষ মেঘনায় মিশেছে। বৃষ্টি মৌসুমে কুশিয়ারার পানি খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রায় ১০ মিটার বাড়ে। এ সময় কুশিয়ারার প্রবল স্রোতে বিভিন্ন স্থাপনাসহ জনসাধারণের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে, ফসলি জমি হ্রাসের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে কুশিয়ারার উভয় তীরে পাউবো নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নদীগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই প্রকল্পের মাধ্যমে এগুলো বিলীন হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, প্রকল্প প্রস্তাবিত এলাকায় তিনটি পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যেই একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুত সঞ্চালন শুরু করেছে। অবশিষ্ট দুটি পাওয়ার প্ল্যান্টের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কুশিয়ারার গতীপথ ক্রমাগত বদলে যাওয়ায় প্ল্যান্ট ৩টি বর্তমানে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু রাখতে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ প্রয়োজন। বাঁকপ্রবণ কুশিয়ারায় পাওয়ার প্ল্যান্টের ‘ইনটেকে’ শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি প্রাপ্তি প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই কুশিয়ারার উভয় তীরের ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী তীর প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়নসহ পাওয়ার প্ল্যান্টে নিরবচ্ছিন্ন পানিপ্রাপ্তিতে জেগে ওঠা চর অপসারণ প্রয়োজন। নদীতীর রক্ষা ৭ দশমিক ৪ কিমি, ড্রেজিং ১৭৬ কিমি (১৪৩ দশমিক ৫৪ লাখ ঘনমিটার), ওয়াকওয়ে নির্মাণ ২ দশমিক ৬ কিমি। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় পানি সম্পদ সেক্টরের অন্যতম উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে নদীতীর সংরক্ষণ, ড্রেজিং, যার সঙ্গে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ সুপারিশ করে বলেছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিবিয়ানা পাওয়ার প্ল্যান্ট, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, কৃষিজমি ও সরকারী-বেসরকারী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কুশিয়ারার ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাবে।
×