দূর থেকে দেখে বুঝার উপায় নেই যে এটি সৌর বিদ্যুতের সোলার দ্বারা চালিত মিনিবাস। সম্পূর্ণ সৌরবিদ্যুতের ওপর নির্ভর করে এই মিনিবাসটি তৈরি করা হয়েছে। ১২ সিটের এ মিনিবাসটি দেখতে ভিড় করছেন অসংখ্য উৎসুক জনতা। এমন নতুন নতুন উদ্ভাবন তৈরির মাধ্যমে রীতিমতো সর্বত্র আলোচনায় চলে এসেছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার বুলবুল। এবার তরুণ এই উদ্ভাবক তৈরি করলেন সোলার মিনিবাস। পাকুন্দিয়া পৌরসভার হাপানিয়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত এনজিও কর্মকর্তা এমদাদুল হক জসিমের ছেলে এনামুল হক বুলবুল। ছোটবেলা থেকেই যার ধ্যান-জ্ঞান নতুন কিছু করার। যিনি ইতোমধ্যে তরুণ উদ্ভাবক হিসেবে উপজেলাসহ জেলাজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাঁর তৈরি প্রযুক্তি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা তরুণ উদ্ভাবনের পুরস্কার অর্জন করেছে। সম্প্রতি সোলার প্যানেল দিয়ে ১২সিটের একটি মিনিবাস তৈরি করেছেন। মাসখানেক সময় নিয়ে কয়েকজন শ্রমিক খাটিয়ে তিনি এ মিনিবাসটি তৈরি করেছেন। যা একই উপজেলার তারাকান্দি এলাকার তোফায়েল আহমেদ বিল্লাল নামের এক ব্যক্তি সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়ে কিনেছেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি পাকুন্দিয়ার ইউএনও মোঃ নাহিদ হাসান আনুষ্ঠানিকভাবে সোলার মিনিবাসটি উদ্বোধন করেন। একই দিন ওই গ্রাহকের কাছে চাবি হস্তান্তরের মাধ্যমে মিনিবাসটি বুঝিয়ে দেয়া হয়।
৫শ’ ওয়াটের সোলার প্যানেল, ৬০ ভোল্টের ১৫০ অ্যাম্পিয়ারের দুটি ব্যাটারি দ্বারা তৈরি মিনিবাসটির আসন সংখ্যা ১২। যার গতি ঘণ্টা প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার। এক বারের পূর্ণ চার্জে মিনিবাসটি ২শ’ কিলোমিটার পর্যন্ত চলবে। আর সোলার সংযোগ থাকলে ২৪ ঘণ্টায় চালানো সম্ভব। রয়েছে বিদ্যুত দ্বারা চার্জের ব্যবস্থাও। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এ যানে স্বাচ্ছন্দে চলাচল করতে পারবে যে কোন বয়সের যাত্রী। এটি লোকাল ভাড়া ছাড়াও রিজার্ভ গাড়ি হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহার যোগ্য বলেও জানান এর নির্মাতা এনামুল হক বুলবুল। তেল-গ্যাস ছাড়া সোলারনির্ভর এ মিনিবাসটি দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় করছেন। অনেকে আগ্রহ দেখাচ্ছেন এরকম একটি যান কেনার। এনামুল হক বুলবুল বলেন, কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে দীর্ঘ ১০ বছর প্রচেষ্টার পর সোলার দিয়ে বিভিন্ন যান তৈরি করেছেন। যা ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে। সোলার মোটরবাইক তৈরি করে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্ভাবকের পুরস্কার অর্জন করেছি। কাজের এমন স্বীকৃতি পেয়ে আমি বেশ উজ্জীবিত। এরই ধারাবাহিকতায় সোলার চালিত মিনিবাস তৈরি করেছি। যা বেশ সফলভাবে চলছে। এতে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় চার লাখ টাকার মতো। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সোলার দ্বারা আরও নতুন কিছু তৈরি করতে চাই। উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আবদুল আজিজ আকন্দ বলেন, বুলবুল একজন সফল যুব আত্মকর্মী। তাঁর পাশে রয়েছে উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস। এছাড়াও যে কোন তরুণ উদ্ভাবকের পাশে থেকে তাদের সহায়তা করা হবে বলেও তিনি জানান। এ ব্যাপারে ইউএনও মোঃ নাহিদ হাসান বলেন, বর্তমান সরকার প্রযুক্তিখাতে ব্যাপক অবদান রেখে চলছে। নিত্যনতুন উদ্ভাবন ও তরুণ উদ্ভাবকদের পাশে রয়েছে সরকার। সোলার দ্বারা নির্মিত এসব নতুন উদ্ভাবন দেশের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে। সেজন্য বুলবুলসহ তরুণ উদ্ভাবকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।
উল্লেখ্য, তরুণ উদ্ভাবক এনামুল হক বুলবুল পাকুন্দিয়া পৌর সদরের হাপানিয়া ব্যাপারী বাড়ি এলাকার অবসরপ্রাপ্ত এনজিও কর্মকর্তা এমদাদুল হক জসিমের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে বুলবুল সবার বড়। মা সুফিয়া খাতুন পাকুন্দিয়া সদরের পরিবার কল্যাণ সহকারী। ছোটবেলা থেকেই তিনি নতুন কিছু করার চেষ্টা করতেন। সেজন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করা সম্ভব হয়নি। তিনি এর আগে সোলার মোটরবাইক, সোলার থ্রি-হুইল বাইক, সোলার সেচ পাম্প ও সোলার চালিত জিপগাড়ী বানিয়েছেন। সোলার মোটরবাইক বানিয়ে ২০১৬ সালে ঢাকা বিভাগীয় বিজ্ঞান মেলায় শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্ভাবকের খ্যাতি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে একাধিকবার শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্ভাবকের পুরস্কার লাভ করেন।
-মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ থেকে