ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছাদে ঘৃতকুমারী চাষ করে স্বাবলম্বী হোসনে আরা

প্রকাশিত: ০৯:২০, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ছাদে ঘৃতকুমারী চাষ করে স্বাবলম্বী  হোসনে আরা

নওগাঁর রাণীনগরে বাড়ির ছাদে বাগান তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে ঘৃতকুমারী চাষ করে (এলোভেরা) আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন নারীরা। ঔষধি গুণসম্পন্ন এই ফসল চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন উপজেলার মাধাইমুড়ী মহিলা সিআইজি দলের (কমন ইন্টারেস্ট গ্রুপ) সদস্য হোসনে আরা। হোসনে আরার দেখাদেখি বর্তমানে ওই গ্রামের প্রায় ১০ মহিলা তাদের নিজ নিজ বাড়ির ছাদকে আবার কেউ কেউ বাড়ির উঠানের পরিত্যক্ত জমিতে এই ফসল চাষ করে বাড়তি অর্থ আয় করছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সুপরিচিত ঔষধি গুণসম্পন্ন একটি গাছ হচ্ছে ঘৃতকুমারী। এই গাছের পুরো অংশটিই ঔষধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে শরীর ঠান্ডা রাখতে শরবতের সঙ্গে ঘৃতকুমারী খাওয়া হয়। এছাড়াও বর্তমানে রূপচর্চাতেও এই ঔষধি গাছটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই গাছটির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় এর চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের মধ্যে যশোর জেলা ঘৃতকুমারী চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু বর্তমানে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়নের মাধাইমুড়ি গ্রামে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে ঘৃতকুমারী চাষ শুরু করেছেন ওই গ্রামের কৃষিভিত্তিক সিআইজি দলের মহিলারা। আর তাদেরকে এই লাভজনক আবাদ চাষে আগ্রহী করে তুলেছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় ওই গ্রামে প্রথমে হোসনে আরা এই চাষ শুরু করেন। আর তার দেখাদেখি বর্তমানে প্রায় ১০জন মহিলা তাদের বাড়ি ছাদে ও পরিত্যক্ত জায়গায় ঘৃতকুমারী চাষ শুরু করেছেন। এছাড়াও মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষরাও জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ঘৃতকুমারী চাষ শুরু করেছেন। কম পরিশ্রম ও কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় এ্যালোভেরা (ঘৃতকুমারী) চাষের দিকে ঝুঁকছেন ওই গ্রামের অনেক মহিলা ও পুরুষ। গৃহিণী হোসনে আরা বলেন, বর্তমানে মাধাইমুড়ি গ্রামটি ঘৃতকুমারী গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। তিনি প্রথমে শখের বশে বাড়ির ছাদে একটি-দুটি টবে ঘৃতকুমারীর চারা রোপণ করেন। এরপর নিজেদের প্রয়োজনে সেখান থেকে ঘৃতকুমারী ব্যবহার করতেন। বিশেষ করে গরমের সময় শরবতে এই ঔষধি গাছের ব্যবহার বেড়ে যায় বহুগুণে। খুব সহজে ও কম পরিশ্রমে এই ফসলের চাষ করা সম্ভব। এরপর কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি বাণিজ্যিকভাবে এই গাছের চাষ শুরু করেন। তিনি বর্তমানে বাড়ির ছাদের আর কোন জায়গা অবশিষ্ট রাখেননি। যেখানেই একটু জায়গা পেয়েছেন সেখানেই তিনি ঘৃতকুমারীর চারা রোপণ করেছেন। সারা বছরই এই গাছ থেকে ফলন পাওয়া যায়। মূলত এই গাছের পাতার মোটা অংশের ভিতরের মাংসগুলো (শাঁস) ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে পাইকাররা এসে তার ছাদ বাগান থেকে ঘৃতকুমারী কিনে নিয়ে যায়। তাই এটি বিক্রির জন্য আলাদাভাবে চিন্তা করতে হয় না। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে তার এই ঘৃতকুমারী ছাদবাগান থেকে তিনি প্রতি মাসে ১০-১২হাজার টাকার ঘৃতকুমারী বিক্রি করেন। নিজের পরিবারের কাজ শেষ করে তিনি তার ঘৃতকুমারীর বাগান পরিচর্যা করেন। উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতা পাওয়ায় এই বাগান তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও গ্রামের অন্য মহিলাদের এই লাভজনক বাগান তৈরি করতেও তিনি উদ্বুদ্ধ করে আসছেন। রানীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে কৃষিভিত্তিক সিআইজি দলের মাধ্যমে গ্রামীণ মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ও বিষমুক্ত সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় মাধাইমুড়ি গ্রামে মহিলাদের মাধ্যমে এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ঘৃতকুমারী চাষ শুরু করা হয়েছে। আর এই ঘৃতকুমারী চাষে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন হোসনে আরা। এই গাছের রোগবালাই খুব কম। শুধু পাতাতে পচন রোগ দেখা দিলে চুন ও তুঁতের মিশ্রণ প্রয়োগ করলেই যথেষ্ট। এছাড়া তেমন কোন বড় ধরনের রোগ হয় না। এই গাছের চারা সহজলভ্য, পরিশ্রম ও খরচ খুবই কম হয়। -বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে
×