ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চুড়িহাট্টা থেকে এক বছরেও সরেনি কেমিক্যালের গুদাম

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 চুড়িহাট্টা থেকে এক বছরেও সরেনি কেমিক্যালের গুদাম

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা থেকে কেমিক্যালের গুদাম এখনও পুরোপুরি সরেনি। ঘটনার পরপরই চালানো অভিযানে ৭০ বাড়িতে কেমিক্যালের গুদাম পাওয়া যায়। এজন্য বাড়িগুলোর পানি, বিদ্যুত গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নও করা হয়েছিল। ওসব বাড়িতে আবারও পানি বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। বাড়ির মালিকরা বাড়িতে কোন কেমিক্যালের গুদাম গড়ে তোলার জন্য ভাড়া দেয়া হবে না, মুচলেকা দিয়েছিলেন। তাও পালিত হয়নি। এজন্য আবারও চকবাজারের অলি গলিতে গড়ে উঠেছে কেমিক্যালের গুদাম। কেমিক্যালের গুদামের ওপর নিয়মিত মনিটরিংয়ের কথা থাকলেও, বাস্তবে তা হয়নি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস জনজীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলেই পুরান ঢাকাবাসীর আশা। গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে একটার দিকে চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান ৬৭। পরে আরও চারজন মারা যায়। সব মিলিয়ে ৭১ জন মারা যায় চুড়িহাট্টা অগ্নিকান্ডে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মারাত্মক দগ্ধ হয়ে বেঁচে আছেন ৩৫। ঘটনা তদন্তে কেমিক্যালের গুদাম থাকায় আগুনের ভয়াবহতা এমন ভয়ঙ্কর হয় যে। আগুনে ঘটনাস্থলের আশপাশে বস্তায় বস্তায় প্লাস্টিকের দানা গলে আঠালো পদার্থে রাস্তায় স্রোতের মতো ছড়িয়ে পড়ে। আর সেখানেই পা আটকে মারা যায় ৬৭। এ ঘটনার পর পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের গুদাম সরাতে কড়া নির্দেশ জারি করা হয়। নির্দেশ মোতাবেক সিটি কর্পোরেশনের তরফ থেকে গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। ডিএসসিসি কর্মকর্তাসহ বিস্ফোরক অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর, ঢাকা জেলা প্রশাসন তিতাস গ্যাস ঢাকা ওয়াসা ও ডিপিডিসি ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও র‌্যাব সমন্বয়ে শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠিত হয়। টাস্কফোর্স গঠনের পর তিনদিন বাড়ির মালিকদের বাড়ি থেকে কেমিক্যাল সরিয়ে ফেলতে সময় দেয়া হয়। এরপরও যাদের বাড়িতে কেমিক্যালের গুদাম পাওয়া যাবে, সেসব বাড়ির পানি বিদ্যুত ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে বলে আগাম ঘোষণা দেয়া হয়। গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে টাস্কফোর্স চকবাজারসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান শুরু করে। প্রথম দিনের অভিযানে ২০ বাড়ির পানি বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ নিয়ে বাড়ির মালিকরা বিক্ষোভও করে। প্রথম দিকে টানা তিন দিন অভিযান চালানো হয়। এরপর অভিযানে সাময়িক বিরতি দিয়ে আবার কেমিক্যালের গুদাম সরানোর জন্য সময় দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত চার দফায় অভিযান চালানোর পর অভিযান থেমে যায়। ওই সময় চকবাজারের হরনাথ ঘোষ রোড থেকে অভিযান শুরু হয়েছিল। অভিযান চালানো হয় লালবাগের শহীদনগরের রাজনারায়ণ ধর রোড়, নাজিরাবাজার, সিদ্দিকবাজার, হাজারীবাগ, তাঁতীবাজার, নন্দ কুমার দত্ত রোড ও আজগর লেনসহ আশপাশের এলাকায়। অভিযানকালে পুলিশের ওপর হামলা, টাস্কফোর্সে গাড়ি ভাংচুর, রাস্তা অবরোধসহ নানা ঘটনা ঘটে। তারপরও অভিযান থামেনি। শেষ পর্যন্ত টানা প্রায় এক সপ্তাহের অভিযানে ৭০ বাড়িতে কেমিক্যালের গুদাম থাকার প্রমাণ পায় টাস্কফোর্স। ৭০ বাড়িরই পানি বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এমনকি এসব বাড়িতে কবে নাগাদ এসব ইউনিলিটি সুযোগ সুবিধা চালু হবে তাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই ৭০টি বাড়িতে অনেক আগেই আবারও পানি, বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ চালু হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীলদের মধ্যস্থতায় জরুরী এসব সেবা আবার চালু হয়। যদিও এক্ষেত্রে বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে ভবিষ্যতে আর কোনদিন বাড়ি কিংবা বাড়ির কোন কক্ষ বা দোকানে কেমিক্যালের গুদাম তারা ভাড়া দেবে না।
×