ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 বরিশালে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ টেলিভিশনে দেখি একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া হয়। আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার না থাকায় আমরা ফুল দিতে পারিনা। কখনও শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারিনি এটাই আমাদের বড় কষ্ট। ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলেছেন-রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবের নিজ উপজেলা গৌরনদী পৌর এলাকার শতবর্ষী গেরাকুল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ হাপানিয়া-শরিফাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঘার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জঙ্গলপট্টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাসেমাবাদ এবং হরিসেনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোন শহীদ মিনার। জানা গেছে, যেসব বিদ্যালয়ে স্থায়ী শহীদ মিনার নেই তারমধ্যে কিছু কিছু স্কুলে কলাগাছ দিয়ে বিগত ৬৮ বছর ধরে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। আর ওই কলাগাছের শহীদ মিনারেই একুশের প্রত্যুর্যে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এর পরপরই ভেঙ্গে ফেলা হয় অস্থায়ীভাবে নির্মিত কলাগাছের শহীদ মিনার। একইভাবে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নিজ নামের ইউনিয়নের (জাহাঙ্গীর নগর) বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর ডিগ্রী কলেজেও নেই কোন শহীদ মিনার। শুরু থেকে অদ্যাবধি ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণে স্থায়ীভাবে কোন শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। ফলে একুশের চেতনাবঞ্চিত হয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা হারাতে বসেছে নতুন প্রজন্ম। এ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন সচেতন মহল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একইভাবে বরিশাল সদর উপজেলার চরআইচা-২ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরআইচা-৩ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শায়েস্তাবাদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শের-ই বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও নেই কোন শহীদ মিনার। নতুন প্রজন্মের দাবি ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। শহীদ মিনার না থাকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, শিক্ষা বিভাগ শহীদ মিনার নির্মাণের আদেশ দিলেও সরকারীভাবে বাজেট না থাকায় আদেশ বাস্তবায়ন করা যাচ্ছেনা। এসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানায়, একুশে ফেব্রুয়ারিতে তারা কখনও স্কুলের শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারেনি। ক্ষোভের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা বলে, টিভিতে দেখি একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া হয়। আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার না থাকায় আমরা ফুল দিতে পারিনা। এরমধ্যে শতবর্ষী গেরাকুল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোন বছরই কলাগাছ দিয়েও শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। এবারও ওই শতবর্ষী স্কুলে অস্থায়ীভাবেও শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। সচেতন অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্থায়ী কিংবা অস্থায়ীভাবে স্কুলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনার নির্মাণ না করায় বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষার দাবিতে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একইভাবে শিক্ষার্থীরা ’৫২-র ভাষা আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব সম্পর্কেও সঠিক ধারণা নিতে পারছে না। এ বিষয়ে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, সরকারী কিংবা বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই হোক না কেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
×