ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত সন্দেহে ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখার পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৮:১৩, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত সন্দেহে ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখার পরামর্শ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদেরকে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত সন্দেহ করে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয় সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ না করার পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সাব্রিনা ফ্লোরা । তিনি বলেন, ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ করলে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা তাদের তথ্য গোপন করার চেষ্টা করতে পারেন। এতে সার্বিক স্ক্রিনিং কার্যক্রম ব্যাহত হবে। বৃহস্পতিবারও সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আসা প্রায় ২১ হাজার যাত্রীকে স্ক্রিনিং করানো হয়েছে। সন্দেহজনক ২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষিত নমুনার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৭টি। নমুনা পরীক্ষা করে কারো নমুনাতে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায় নি। করোনা ভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার আইইডিসিআর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত নিয়মিত অবহিতকরণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। অধ্যাপক ডা. ফ্লোরা বলেন, আমরা উদ্বেগের সাথে অবহিত হয়েছি যে, কোন এক স্থল বন্দরে দায়িত্¦রত একজন কর্মকর্তা (স্বাস্থ্য বিভাগ নয়) বিদেশ থেকে আগত একজন যাত্রীকে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত সন্দেহ করে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয় সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে দিয়েছেন। এ ধরণের অপেশাদার আচরণ শুধু নৈতিকতা বিরোধীই নয়, সংবেদনশীল সরকারী তথ্যের গোপনীয়তা লংঘন সংক্রান্ত সরকারী চাকুরী বিধির লংঘন। কোন ব্যক্তি করোনা ভাইরাস সংক্রমিত কিনা তা নিশ্চিত করার ও প্রকাশ করার সরকার নির্ধারিত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আইইডিসিআর। সংশ্লিষ্ট সকলকে আমরা এ বিষয়টি আবারো মনে করিয়ে দিচ্ছি। উল্লেখ্য, সীমান্ত বন্দরসমূহসহ দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থান থেকে সনাক্তকৃত সন্দেহভাজন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত ব্যক্তিদের ল্যাবরেটরি পরীক্ষার ফলাফল তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করে আইইডিসিআর প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করে আসছে। করোনা ভাইরাস সনাক্তের জন্য সকল পর্যায়ের সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা তথা সর্বন্তরের জনসাধারণের সক্রিয় সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভুল পদ্ধতিতে সহযোগিতা করতে গেলে তা সনাক্তকরণ প্রক্রিয়াকেই বিপন্ন করবে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি নিজের ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তা বিপন্ন হবার ভয়ে তার তথ্য ও অবস্থান গোপন করতে পারেন। এ ধরণের বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়াতে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধৈর্যশীল ও শান্ত পরিবেশে পেশাগত দক্ষতা ও আন্তরিকতা দিয়ে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন ও যে কোন জিজ্ঞাস্য আইইডিসিআর করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ কিংবা স্থানীয় সিভিল সার্জন বা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা-র কাছ থেকে জেনে নিতে অনুরোধ জানান অধ্যাপক ডা. ফ্লোরা। চীনের উহান ফেরত ৩১২ জন যাত্রীগণ সবাই সুস্থ ॥ সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. সাব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ৩১২ জন উহান ফেরত যাত্রীদের কোয়ারেন্টিন পরবর্তি আরো ১০ দিন ৩১২ জনকে সীমিত চলাচল ও নিজেদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অবহিত করতে আইইডিসিআর-এর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তাদের প্রতি নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের কেউ কেউ হটলাইনে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছেন, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকেও তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। তারা সবাই সুস্থ আছেন। সিঙ্গাপুর পরিস্থিতি ॥ সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত বাংলাদেশিদের বিষয়ে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সাব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে প্রেরিত সর্বশেষ খবরে আমরা জানতে পেরেছি যে, মোট ৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে ১ জন আইসিইউ-তে আছেন। কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫ জন বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশে সিঙ্গাপুরের দূতাবাস থেকেও আমাদেরকে সিঙ্গাপুর পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে। দেশের জল, স্থল ও আকাশপথে বাংলাদেশে আসা প্রত্যেককে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক ডা. ফ্লোরা বলেন, চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর, রেলপথ ও বিমানপথে আসা মোট ২ লাখ ৪১ হাজার ৩২০ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় স্ক্রিনিং করা হয়েছে ২০ হাজার ৭৬৭ জনকে। এভাবে গত ২৪ ঘন্টায় দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমাবন্দরে বিদেশ থেকে আগত স্কিনিংকৃত যাত্রী সংখ্যা ৯১৮২ , চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরে স্ক্রিনিংকৃত যাত্রী ছিল ২৭৬ জন এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনে স্ক্রিনিং করা হয়েছে ২৬৭ যাত্রীকে। এছাড়া অন্যান্য চালু স্থলবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিংকৃত যাত্রীর সংখ্যা ছিল ১১৩২২।
×