ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে মামলা উত্তোলনের জন্য বাদির ওপর হামলা

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বরিশালে মামলা উত্তোলনের জন্য বাদির ওপর হামলা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ মামলা উত্তোলনের জন্য আসামি ও তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা বাদির ওপর হামলা চালিয়ে আহত করে তার ঘেরের মাছ লুট করে নিয়েছে। উল্টো হামলাকারীরা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে আহতর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেন। হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে মামলার বাদি জেলার গৌরনদী উপজেলার চন্দ্রহার গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদ খলিফার পুত্র রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা চালিয়ে উল্টো তাকেসহ পরিবারের সদস্যদের হয়রানী করতে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে মিথ্যে অভিযোগ করেন। ৯৯৯ থেকে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সাথে অভিযোগকারীকে কথা বলিয়ে দেয়ার পর তাৎক্ষনিক থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জানতে পারেন উল্টো অভিযোগকারীর সমর্থকরা তার (রফিকুল) ওপর হামলা চালিয়ে লুটপাট করেছে। পরবর্তীতে থানা পুলিশ অভিযোগকারী ও তার পক্ষের লোকজনদের কঠোরভাবে শ্বাসিয়ে আসেন। ৯৯৯-এর অভিযোগের সাথে বাস্তবের কোন মিল না থাকার সত্যতা স্বীকার করেছেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী গৌরনদী মডেল থানার চৌকস এসআই মোঃ আব্দুল হক। অপরদিকে ৯৯৯ এর এক দায়িত্বশীল সূত্রেও অভিযোগ করার সত্যতা পাওয়া গেছে। ওই সূত্রটি জানিয়েছে-৯৯৯ সরকারী একটি জরুরী সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এখানে কেউ অভিযোগ করলে সরাসরি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। তাৎক্ষনিক তারা সরেজমিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সেক্ষেত্রে কেউ হয়রানীর উদ্দেশ্যে মিথ্যে তথ্য দিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। হয়রানী কিংবা মিথ্যে তথ্য দেয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হবে বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছেন। মামলার বাদী রফিকুল ইসলাম জানান, পাশ্ববর্তী বছরা গ্রামের শুলিল কুমার বাড়ৈ গংদের কাছ থেকে তিনি দীর্ঘদিন পূর্বে বছার মৌজায় ১ একর ২৭ শতক জমি ক্রয় করে দুটি মাছের ঘের করে ভোগদখল করে আসছেন। সম্প্রতি সময়ে জালজালিয়াতির মাধ্যমে একটি ভূয়া ডিক্রী করে ওই জমির মালিকানা দাবি করেন বছার গ্রামের মৃত কালু সরদারের পুত্র আবুল কালাম সরদার গংরা। তিনি আরও জানান, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর স্থানীয় বিএনপি দলীয় সাংসদের ঘনিষ্ঠজন ও চিহ্নিত সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী আবুল কালাম ও তার সহযোগিদের অব্যাহত নির্যাতনের কারণেই শুলিল কুমার গংরা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি দখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রভাবশালী আবুল কালাম তার ক্রয়কৃত ও ভোগদখলীয় সম্পত্তি জবরদখলের জন্য রোপন করা বিভিন্ন প্রজাতের প্রায় ৩০টি গাছ কেটে নিয়েছে। এছাড়া একাধিকার তার ঘেরের মাছ প্রকাশ্যে লুট করেছে। এ ঘটনায় তিনি ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বরিশাল আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। বিচারক মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেন। দীর্ঘ তদন্তের পর পিবিআইর উপ-পুলিশ পরিদর্শক তুষার কান্তি দাস গত বছরের ২০ এপ্রিল আবুল কালাম গংদের অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। বিচারক প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে অভিযুক্ত আবুল কালামসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। পরবর্তীতে পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোর্পদ করে। তবে প্রধান আসামি আবুল কালাম প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও রহস্যজনক কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। উল্টো আসামি ও তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা মামলা উত্তোলনের জন্য প্রকাশ্যে তাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি অব্যাহত রেখেছে। তিনি আরও বলেন, গত ১৬ ফেব্রুয়ারী ভোরে আবুল কালাম সরদার ও তার ভাড়াটিয়া লোকজনে পূর্ণরায় তার দুটি ঘেরে জাল ফেলে মাছ লুট করে। খবর পেয়ে তিনি (রফিকুল) ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাঁধা প্রদান করায় তাকে মারধর করা হয়। বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই হামলাকারীরা উল্টো ৯৯৯ নাম্বারে কল দিয়ে মিথ্যে তথ্য প্রদান করেন। হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আবুল কালাম সরদারসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে আরও ১৫/১৬জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে বরিশাল আদালতে আরও একটি মামলা দায়ের করেছেন।
×