ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনেকেই ফের ফিরছেন

পুঁজিবাজারে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছুঁইছুঁই

প্রকাশিত: ১০:৩২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  পুঁজিবাজারে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছুঁইছুঁই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের শেয়ারবাজারে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে মূল্যসূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রায় হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ফলে এক বছরের মধ্যে বাজারে সর্বোচ্চ লেনদন হলো। আর সবকটি মূল্য সূচকের উত্থানের মাধ্যমে টানা পাঁচ কার্যদিবস উর্ধমুখী থাকল বাজার। প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণে হারানো পুঁজি ফিরতে শুরু করেছে। লেনদেন বৃদ্ধির দিনে আগেরদিনের চেয়ে বাজার মূলধন বেড়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। সোমবার ডিএসইতে ৯৭৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে’১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারির পর বাজারটি সর্বোচ্চ লেনদেন হলো। গতবছরের ৩ ফেব্রুয়ারি ডিএসইতে ৯৮৪ কোটি ২১ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর বাজারে আর সাড়ে নয় শ’ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হয়নি। গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়ার পর থেকেই প্রতিদিনই লেনদেন বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রতিটি ব্যাংক দুই শ’ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারবে। নিজস্ব উৎস অথবা ট্রেজারি বিল বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে। ৫ শতাংশ সুদে এ তহবিলের অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে ব্যাংকগুলো, যা পরিশোধের সময় পাবে পাঁচ বছর। আর ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ দিতে পারবে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ কমাতে ডাকঘর সঞ্চয় স্ক্রিমের সুদের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনায় নতুন করে শেয়ারবাজারে পুঁজি আসতে শুরু করেছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজার থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন তারাও এখন শেয়ারবাজার ভাল হবে এমন প্রত্যাশায় বাজার ফিরতে শুরু করেছেন। চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার লেনদেনের গতি বেড়ে নয় শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। আর সোমবার তা আরও বেড়ে প্রায় হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেয়া সুবিধার পর লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের প্রতিদিনই আগের দিনের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে। এদিকে লেনদেনের সঙ্গে প্রতিদিন বাড়ছে মূল্যসূচক। সোমবার ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক আগেরদিনের তুলনায় ৩৩ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৭৬৮ পয়েন্টে দাঁড়ায়। যদিও লেনদেন শুরুর কিছু সময় পর শেয়ার বিক্রির চাপে সূচকের পতন ঘটে। আগেরদিনের তুলনায় সূচক ৩০ পয়েন্ট কমে যাওয়ায় সূচকের তীর ওপরে ওঠে যায়। দিনশেষে উর্ধমুখীই থাকে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৫৯৯ পয়েন্টে উঠে আসে। আর ডিএসইর শরিয়া সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৮৩ পয়েন্টে এসেছে। সবকটি সূচকের সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। দিনভর ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ১৯৫ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম আগেরদিনের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৮। আর বত্রিশটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এবিমির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সবাই আশান্বিত হয়েছে। তার নির্দেশে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে বাজারে টাকার সরবরাহ বাড়বে, যে তারল্য সঙ্কট ছিল তা কেটে যাবে। আরেকটি বিষয় বাজারের উত্থানের পেছনে কাজ করেছে। সেটি হচ্ছে, শেয়ারের দাম অবমূল্যায়িত ছিল। অনেক ভাল ভাল শেয়ারের দামও অনেক কমে গিয়েছিল। সে জায়গা থেকে বাজারে উল্লম্ফন হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। মোট কথা বাজারে আস্থা ফিরে আসছে। যেসব বিনিয়োগকারী বাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন তারা আবার ফিরতে শুরু করেছেন। তবে এই মুহূর্তে সবাইকে ‘দেখেশুনে’ বিনিয়োগের পরামর্শ দেন মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম। সোমবার ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে লাফার্জ হোলসিমের শেয়ার। বহুজাতিক এ কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসায় সারাদিনে মোট ৩৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খুলনা পাওয়ারের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার। ২১ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে এডিএন টেলিকম, ওরিয়ন ফার্মা, বেক্সিমকো, গোল্ডেন হার্ভেস্ট, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ইন্দো বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস ও সামিট পাওয়ার।
×