ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীতের বিদায়, তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে ॥ কুয়াশার দাপট

প্রকাশিত: ১০:৩১, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  শীতের বিদায়, তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে ॥ কুয়াশার  দাপট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শীত চলে গেছে। তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। বাড়ছে দিনের পরিধিও। কিন্তু কুশায়ার দাপট কমছে না এখনও। ঘনকুয়াশায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিমান ও যান চলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি জনগণকে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন এবার শুরুতে শীতের পাশাপাশি কুয়াশার দাপট ছিল বেশ। প্রায় প্রতিদিন শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘনকুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। এই ঘনকুয়াশার কারণে বিমানের স্বাভাবিক ওঠানামা যেমন ব্যাহত হচ্ছে। তেমনি কোথাও কোথাও যান ও নৌযান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। এবারের শীতে শুরু থেকে রাজধানীর ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেশ কয়েকবার বিমান চলাচল ব্যাহত ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া এই কুয়াশার কারণে সড়ক পথে যাত্রী চলাচলেও সতর্কতা দেয়া হয়েছিল। তবে শীত কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীতে কুয়াশার দাপট কমলেও দেশের অন্যত্র এখন ঘনকুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। আবহাওয়াবিদরা জানান, শীতে তাপমাত্রা বেশি মাত্রায় কমে গেলে মাটির আদ্রতা ওপরে ওঠে এই কুয়াশা সৃষ্টি হয়। এজন্যও শীতকালে নদী অববাহিকায় বেশি কুয়াশা সৃষ্টি হতে দেখা যায়। ফলে ফেরি পারাপার প্রায় ব্যাহত হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম ॥ ঘনকুয়াশার কারণে সোমবারও চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে স্বাভাবিক ফ্লাইট ওঠানামায় বিঘœ হয়েছে। এ দিন সকালে পাঁচটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করতে না পারে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চলে যায়। এর আগে রবিবার ছয়টি ফ্লাইট নামতে ব্যর্থ হয়েছিল। শীতের প্রকোপ কমলেও প্রতিদিন সকালে থাকে ঘনকুয়াশা। ভোর থেকে কয়েক ঘণ্টার জন্য কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে বিমানবন্দরে রানওয়ে। দৃষ্টিসীমা এতটাই কমে যায় যে, ফ্লাইট অবতরণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ছিল এমন প্রতিকূল অবস্থা। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারওয়ার-ই-জামান জনকণ্ঠকে জানান, সকাল ৯টা পর্যন্ত ভিজিবিলিটি ছিল খুবই কম। ফ্লাইট ওঠানামার জন্য দৃষ্টিসীমা কমপক্ষে ৮০০ মিটার থাকা প্রয়োজন, যা ছিল না। ফলে পাঁচটি ফ্লাইট নামতে না পারে ঢাকায় চলে যায়। এ ফ্লাইটগুলো হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের শারজাহ থেকে আসা এয়ার এরাবিয়া, মাস্কাট ও দোহা থেকে আসা রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, দোহা থেকে আসা ইউএস বাংলার। তবে সকাল ১০টার পর ফ্লাইট ওঠানামা স্বাভাবিক হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত শনিবার রাত থেকে জেঁকে বসেছে এমন কুয়াশা। রবিবার সকালেও শাহ আমানতে নামতে পারেনি ছয়টি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট। টাঙ্গাইল ॥ ঘনকুয়াশা আর জননিরাপত্তার জন্য সোমবার ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ। এ সময় ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ বেশি না থাকলেও উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনের চাপ ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর ফলে বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয়পাড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া টাঙ্গাইলের কালিহাতির এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। টাঙ্গাইল ট্রাফিক পুলিশের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব মহাসড়কে কর্তব্যরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) ইফতেখার রোকন জানান, ঘনকুয়াশা আর জননিরাপত্তার জন্য সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ। এ কারণে বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয়পাড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে ঢাকামুখী যানবাহনগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছে। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্যকোন কারণে যানজট সৃষ্টি হয়নি বলেও জানান তিনি। নীলফামারী ॥ ছিল না কনকনে শীত। ছিল না উত্তুরী কোন হিস বাতাস। তারপরেও হঠাৎ ঘনকুয়াশায় দিনভর ঢাকা ছিল উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা। সোমবার ভোর হতে কুয়াশার দেয়ালে কয়েক হাত দূরের দৃশ্য দেখা দুরূহ হয়ে পড়ে। সূর্যের দেখা না মেলায় চলাচলকারী গাড়িগুলোকে পথ চলতে হয়েছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। পাশাপাশি কুয়াশার কারণে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে সকাল ১১টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। তবে থেমে ছিল না কর্মজীবী মানুষের চলাচল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা বেশ কমে যায়। মাঘ মাসের শেষে এসে শীত অনেক কমে যায়। দিনে গরম এলেও সন্ধ্যার পর হাল্কা ঠা-া বিরাজ করে। মাঘ শেষে ফালগুন শুরু হলে শীত ধীরে ধীরে বিদায় নিতে থাকে। এর মাঝে শীতে রবিবার রাত থেকেই কুয়াশা শুরু হয়। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানায়, (সকাল ১০টা) ঘনকুয়াশার কারণে এ অঞ্চলে দৃষ্টিসীমা রয়েছে মাত্র ২০০ মিটারের কম। দৃষ্টিসীমা কম থাকায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ ছিল। এতে সকালের সিডিউল মোতাবেক ফ্লাইটগুলো প্রায় ২ ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করেছে। কুয়াশার কারণে ট্রেন গতি ধীর হওয়ায় নীলফামারী থেকে ছেড়ে যাওয়া রূপসা, বরেন্দ্র, তিতুমীর আন্তঃনগর ট্রেনগুলো সিডিউল মেনে চলাচল করতে পারেনি। সৈয়দপুর বিমানবন্দর ম্যানেজার সুশান্ত দত্ত জানান, সকাল ১১টায় ঘনকুয়াশা কেটে গেলে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
×