ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রন্থমেলা প্রতিদিন

আত্মোন্নয়নমূলক বইয়ের বিক্রি ভাল

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আত্মোন্নয়নমূলক  বইয়ের  বিক্রি ভাল

মনোয়ার হোসেন ॥ সব জড়তা কাটিয়ে এখন দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তাই এখন দেখাদেখির পর্ব পেরিয়ে চলছে বই সংগ্রহের পালা। অজস্র বই থেকে পাঠকরা কিনে নিচ্ছে আপন পছন্দের বইটি। সোমবার ছিল বইমেলার ষোড়শতম দিন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ফাগুনের রোদমাখা দুপুরে প্রকাশনা সংস্থা তাম্রলিপি থেকে ‘কমিউনিকেশন হ্যাকস’ সংগ্রহ করছিলেন কলেজ শিক্ষার্থী মোঃ সোহান। আয়মান সাদিক ও সাদমান সাদিকের লেখা আত্মোন্নয়নমূলক গ্রন্থটির ব্যাপক পাঠক চাহিদা রয়েছে বলে জানান প্রকাশনা সংস্থাটির বিপণন কর্মী। প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণ শেষে ইতোমধ্যে বেরিয়েছে তৃতীয় সংস্করণ। শুধু এই বইটি নয়, এবারের মেলায় গল্প, উপন্যাস, কবিতাসহ সৃজনশীল সাহিত্যের বইকে ছাপিয়ে বিক্রি হচ্ছে এমন আত্মোন্নয়নমূলক বেশ কিছু বই। তাই আত্মোন্নয়নমূলক বইয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে রয়েছে মত লেখক, প্রকাশক ও পাঠকের। আত্মোন্নয়নমূলক বইয়ের প্রতি আগ্রহ প্রসঙ্গে মোঃ সোহানের মন্তব্যটি হচ্ছে, এ ধরনের বই পড়ে উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়। আমার নিজের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছে। এক সময় পড়াশোনায় মনোযোগ বসত না। কোন কিছুতেই স্থির হতে পারতাম না। আর সেই সময় এ ধরনের বই পড়ে অনুপ্রাণিত হই। জীবনকে বদলানোর জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো রপ্ত করি। আত্মোন্নয়নমূলক গ্রন্থ প্রসঙ্গে এই সময়ের আলোচিত লেখক আনিসুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, পাঠকের মনন বিকাশে সৃজনশীল বইয়ের বিকল্প নেই। এ কারণেই আমি আমার অনুজদেরর গল্প, কবিতা কিংবা উপন্যাস পড়ার কথা বলি। কারণ, এ ধরনের ফিকশনের বই মানুষকে সংবেদনশীল করে তোলে। প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। বঙ্গবন্ধু রচিত তিনটি গ্রন্থ পড়লে আমরা বুঝতে পারি তিনি রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ অসংখ্য লেখকের সাহিত্য পড়েছেন। তিনি যদি হৃদয়ের সুকুমার বৃত্তির এসব বই না পড়ে যদি আত্মোন্নয়নমূলক বই পড়তেন তাহলে বাংলাদেশ আর স্বাধীন হতো না। তেমনি বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যদি সাহিত্যপাঠের অভ্যাস থাকত তাহলে তিনি অনেক উদ্ভট আচরণ থেকে বিরত থাকতেন। বর্তমানে অনেক অভিভাবকই সন্তানের ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করে তাদের হাতে আত্মোন্নয়নমূলক বই তুলে দিচ্ছেন। অনেক তরুণ আবার ভবিষ্যত কর্মচিন্তার কথা ভেবে নিজেই এ ধরনের বইয়ের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। তবে এ ধরনের আত্মোন্নয়নমূল বই কখনও মানুষের হৃদয়ের শুশ্র‍ুষা করতে পারে না। আর শুধুই আত্মোন্নয়নমূলক বই পড়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হলেও হৃদয়ের পরিচর্যাহীন এসব মানুষের হৃদয় হবে শুষ্ক। অসংবেদনশীল সেই মননে সমাজ বা দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হবে না। আত্মোন্নয়নমূলক বইয়ের ব্যাপক কাটতি প্রসঙ্গে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক জহিরুল আবেদিন জুয়েল বলেন, আত্মোন্নয়নমূলক বইয়ের বাজার সৃষ্টি হয়েছে। তবে গ্রন্থমেলায় আত্মোন্নয়নমূলক বইয়ের নামে অনেক মানহীন বইও প্রকাশ হচ্ছে। এদিকে নজর দিতে হবে। আত্মোন্নয়নমূলক গ্রন্থের মাধ্যমে যারা গল্পচ্ছলে বিষয়কে উপস্থাপন করেন তারা আগামীতে ভাল করবেন। আর সুলিখিত আত্মোন্নয়নমূলক বইয়ের পাঠক যে আগামীতে সাহিত্যের পাঠক হবেনা তা বলা যায় না। গ্রন্থমেলায় বেশ কিছু আত্মোন্নয়নমূলক বই ভাল বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে এতিহ্য থেকে এসেছে আত্মোন্নয়নমূলক নজর-ই-জ্বিলানী রচিত আত্মোন্নয়নমূলমক গ্রন্থ ‘এক্সিকিউটিভ টু এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর’। একই প্রকাশনা সংস্থা থেকে এসেছে আব্দুল কাদেরের অনুলিখনে ‘আত্মউন্নয়ন সিরিজ-১’ ও ‘ধনী হবার সহজ উপায়-১’। তাম্রলিপি এনেছে ‘আয়মান সাদিক ও সাদমান সাদিকের ‘কমিউনিকেশন হ্যাকস’ ও ‘স্টুডেন্ট হ্যাকস’, মনিরুদ্দিন তামিম ও সাদমান সাদিকের ‘ব্রেইন বুস্টার’ এবং গোলাম সামদানি ডনের ‘বিষণ্ণতাকে জয় করো’, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ এনেছে জাহাঙ্গীর আলম শোভনের ‘লেখাপড়া করে যে : ছাত্রজীবনে কর্মজীবনের প্রস্তুতি’। আদর্শ এনেছে আয়মান সাদিক ও সাকিব বিন রশীদের ‘লোকে কী বলে’। অনন্যা প্রকাশ করেছে মোস্তফা কামালের ‘স্বপ্নবাজ’। নতুন বইয়ের খবর : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগের তথ্যানুযায়ী সোমবার গ্রন্থমেলার ষোড়শতম দিনে নতুন বই বেরিয়েছে ১৩৫টি। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনের বেদনাদায়ক অধ্যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানিসহ সাম্প্রতিক পাঁচটি বিষয়কে উপজীব্য করে ‘দ’ নামের গল্পগ্রন্থ লিখেছেন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ইউএসডির প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান। তার এই গল্পের বইটি প্রকাশ করেছে গদ্যপদ্য প্রকাশনী। আহসান পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে কর্নেল মোঃ রাব্বি আহসানের ‘কসমিক লাইফ’। বইটি পাওয়া যাচ্ছে শিশু চত্বরের শিশু কাননে। অনন্যা এনেছে হানিফ সংকেতের রম্যরচনা ‘টনক নড়াতে টনিক’। কথা প্রকাশ থেকে বেরিয়েছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘ভালো মানুষের জগৎ’। ঐতিহ্য এনেছে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের অশোক দাস গুপ্ত অনূদিত ‘প্রেম নয়, মৃত্যুই অনিবার্য’। চারুলিপি এনেছে নূরুল ইসলাম নাহিদ ও পিয়াস মজিদ সম্পাদিত বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সঙ্কলন ‘জয় বাংলা’। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে বেরিয়েছে মোনায়েম সরকারের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’। আবিষ্কার এনেছে এমাজউদ্দীন আহমদের ‘ইসলাম ও উন্নত জীবন ব্যবস্থা’। পুঁথিনিলয় থেকে এসেছে সেলিনা হোসেনের ‘পূর্ণ ছবির মগ্নতা’। মেলামঞ্চের আলোচনা সোমবার গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ রচিত ৭ই মার্চের ভাষণ কেন বিশ্ব-ঐতিহ্য সম্পদ : বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ এবং ড. কুতুব আজাদ। সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। প্রাবন্ধিক বলেন, সামগ্রিকভাবে এই গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রচিন্তা, রাজনৈতিক দর্শন, শিক্ষা ভাবনা, দ্বিতীয় বিপ্লব, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর আত্মদর্শন, মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের নানা দিক সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের আলোকে লেখক নিজস্ব ভঙ্গিতে, নতুন বিশ্লেষণে উপস্থাপন করেছেন। সভাপতির বক্তব্যে মুনতাসীর মামুন বলেন, বঙ্গবন্ধুর ওপর লিখিত অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদের প্রতিটি গ্রন্থই অনবদ্য এবং পরিশ্রমের স্বাক্ষরবাহী। আজকের আলোচ্য গ্রন্থেও লেখক বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে বিশ্লেষণ করেছেন। এ গ্রন্থটি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিধি যেমন বাড়াবে তেমনি গবেষকদের জন্য বঙ্গবন্ধুচর্চার নতুন নতুন দিক উন্মোচন করবে। লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি আসলাম সানী, সঞ্জীব পুরোহিত, ফারহানা রহমান এবং আহম্মেদ শরীফ। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি মুজিবুল হক কবীর, আয়শা ঝর্ণা, চঞ্চল আশরাফ এবং মাজুল হাসান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মেহেদী হাসান, তিতাস রোজারিও এবং সিদ্দিকুর রহমান পারভেজ। ছিল সাইমন জাকারিয়ার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ভাবনগর ফাউন্ডেশনের পরিবেশনা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন আলম দেওয়ান, মোক্তার হোসেন, রহিমা খাতুন, শারমিন সুলতানা ও মোঃ মাহাবুল ইসলাম। কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি মুজিবুল হক কবীর, আয়শা ঝর্ণা, চঞ্চল আশরাফ এবং মাজুল হাসান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মেহেদী হাসান, তিতাস রোজারিও এবং সিদ্দিকুর রহমান পারভেজ। আজ ছিল সাইমন জাকারিয়ার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ভাবনগর ফাউন্ডেশন’-এর পরিবেশনা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন আলম দেওয়ান, মোক্তার হোসেন, রহিমা খাতুন, শারমিন সুলতানা এবং মোঃ মাহাবুল ইসলাম। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন পুলিন চক্রবর্তী (তবলা), মোঃ হাসান মিয়া, (বাংলা ঢোল), আনোয়ার সাহদাত রবিন (কী-বোর্ড) এবং মোঃ খোকন (বাঁশি)। আজকের মেলা আজ মঙ্গলবার গ্রন্থমেলার ষোড়শতম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেলে মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরী সম্পাদিত শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আমিনুর রহমান সুলতান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন জাহিদুল হক এবং জাফর ওয়াজেদ। সভাপতিত্ব করবেন সম্পদ বড়ুয়া। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
×