ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বসন্ত আর ভালবাসায় সিক্ত বইমেলা

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 বসন্ত আর ভালবাসায় সিক্ত বইমেলা

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি আমাদের যে মাত্রায় উজ্জীবিত, আনন্দঘন আর উৎসবমুখর আবেশে ভরিয়ে তোলে তা সত্যিই বিচিত্র অনুভবের এক অকৃত্রিম সম্পদ। উৎসব আর আয়োজনের হরেক রকম সম্ভারে আত্মপরিচয় ও অস্তিত্বের যে চিরন্তন বোধ সেটাই বাংলা ও বাঙালীর এক অবিমিশ্র সত্তা। বারো মাসের তেরো পার্বণ উদযাপন করার যে বাঙালিয়ানা সেটাই আমাদের যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা সমৃদ্ধ চেতনা। প্রকৃতির সুরম্য লীলানিকেতন এই শ্যামল বাংলা ষড়ঋতুর বিচিত্র আবাহনে যে নান্দনিক ফুলের প্রতিবেশ তৈরি করে তা যেন এক সাজানো নৈসর্গিক ইমারত। গ্রীষ্ম আসে প্রচন্ড দাবদাহ নিয়ে যা প্রকৃতিকে অগ্নিস্নানে শুদ্ধ করে বলে রবীন্দ্রনাথের কাব্যিক অনুভব। আর নদীমাতৃক বাংলার বর্ষণস্নাত অবারিত জলরাশি মানুষ ও পরিবেশককে স্নিগ্ধ আর সিক্ততার পরশ বুলিয়ে দেয় তা যেন ভাব জগতে বিচরণ করার এক অনন্য সৌধ। শরৎ আসে নিজস্ব সম্ভারের বিশেষ আবেদন নিয়ে। যেখানে আকাশে সাদা সাদা মেঘের আনাগোনা, রোদ ও বৃষ্টির চমকপ্রদ লুকোচুরি খেলা। আর হেমন্ত সাজে নবান্নের উৎসবে। কৃষকের ঘরে ওঠে নতুন শস্যের সমারোহ। যা পিঠে পুলির আড়ম্বরে সাজতে সাজতে হিমেল শীতকে আমন্ত্রণ জানায়। এরপর মহাসমারোহে ঋতুরাজ বসন্তের বর্ণিল আয়োজনে প্রকৃতিতে এক মনোমুগ্ধকর আবেশ তৈরি হয়। বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে যেমন সাজ সাজ রব ধ্বনিত হয় একইভাবে তার কোলে লালিত মানুষরাও হয়ে ওঠে আনন্দ আর উৎসবে মুখরিত। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতেই ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় প্রকৃতি যে বিচিত্র অনুভবে তাড়িত হয় সেখানে আবার নতুন করে ভালবাসার মাহাত্ম্য রঙিন আবির ছড়ায়। বসন্ত আর ভালবাসা মিলে মিশে একাকার হয়। ফুলে ফুলে পরিবেশ হয়ে ওঠে আনন্দ আর আয়োজনের এক বর্ণময় সমারোহ। ঋতুরাজ বসন্তের রক্তিম শুভেচ্ছায় ভালবাসার আবেগঘন মুহূর্তগুলো যে মাত্রায় আপ্লুত হয় সেখানে যাপিত জীবনের হৃদয় নিঃসৃত অর্ঘ আর সাড়া জাগানো মনোমুগ্ধকর প্রতিবেশ এক-অবিচ্ছিন্ন সুতায় গেঁথে যায়। আর ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিশাল গ্রন্থমেলা প্রথম থেকেই যে নবোদ্যোমে পাঠক সমাজকে আন্দোলিত করে থাকে সেটাও বাংলার নিজস্ব বৈভবের এক নান্দনিক কর্মদ্যোতনা। সারা বছর গ্রন্থের রূপকার, প্রকাশক এমনকি পাঠক সমাজ অধীর আগ্রহে দিন গুনতে থাকে ভাষার এই অবিস্মরণীয় মাসটির, যেখানে সবাই তার প্রত্যাশিত জায়গায় নিজেকে অধিষ্ঠিত করতে চায়। এ ছাড়াও রক্তস্নাত এই ফেব্রুয়ারি নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয় মাতৃভাষা, মাতৃভূমি চিরকালের সমৃদ্ধ চেতনা নিয়ে আপন সংস্কৃতির বেড়াজাল। শুধু তাই নয় শহীদের রক্তে সিক্ত হওয়া এই ভাষার মাসে সশ্রদ্ধ অভিবাদনে তাদের মনে করাও বাঙালীদের অন্যতম দায়বদ্ধতা। সঙ্গত কারণে সামনে এসে যায় সর্বক্ষেত্রে বাংলাভাষা অভিগমনের বিষয়টি এখনও সেভাবে দৃশ্যমান হতে না পারার সীমাবদ্ধতা। ভাষা আন্দোলনের প্রায়ই ৬৮ বছর আর স্বাধীনতা অর্জনের ৪৯ বছর পরও বাংলা ভাষা আপন মর্যাদায় অবারিত হতে এখন অবধি পুরোপুরি সক্ষম হয়নি। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে একুশে গ্রন্থমেলায় দেশব্যাপী সাড়া জাগানো নতুন বইয়ের উৎসব হলেও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাংলাকে সুসংহত করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগের ঘাটতি এখনও বিদ্যমান। শুধুমাত্র নতুন নতুন বই বাজারে আসলেও কিংবা পাঠক তৈরির সম্ভাবনা থাকলেও যে মহতি কর্মে ভাষা শহীদরা প্রাণটা দিয়েছেন সেই সুপরিকল্পিত কার্যক্রম এখন অবধি কতখানি সক্রিয় সেটাও বিবেচনার দাবি রাখে। তার পরেও একুশ এখন তার সর্বময় অস্তিত্ব আর মাহাত্ম্য নিয়ে বিশ্ব পরিসরেও তার স্থান করে নিয়েছে। আজ একুশ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস যা প্রধানমন্ত্রীর এক অবিস্মরণীয় এবং বিরল কৃতিত্ব। সেই সফল অভিগামিতার পথপরিক্রমায় এমন শুভদিনও খুব দূরে নয় যেদিন আমরা দেখব বাংলা ভাষা আপন মর্যাদায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেই শুধু নয় যেখানে প্রয়োজন সব জায়গায় তার আসন শক্ত আর মজবুত করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই অবধি দেশকে একদিন পৌঁছে দেবেন এ ধারণাও একেবারে অমূলক নয়। একুশের গ্রন্থমেলা সেও এক ঐতিহাসিক পালাক্রম। যার যাত্রাপথ কখনও নির্বিঘœ আর নিঃসংশয় ছিল না। সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দেশের স্থপতি যখন কতিপয় বিভ্রান্ত সেনাকর্মীর হাতে সপরিবারে নৃশংসভাবে খুন হন সে জাতির ইতিহাস যেমন নির্মম তেমনি ঐতিহ্যিক চেতনা থেকেও অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। তাই সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ’৭৫-এর পটপরিবর্তন পুরো দেশকে যে মাত্রায় দিশেহারা আর বিপর্যস্ত করে দেয় সেখানে তার ধারাবাহিক ঐতিহাসিক সম্পদও লুণ্ঠিত হতে সময় নেয় না। বাংলাদেশও সেই দুর্যোগের ঘনঘটায় তার আপন ঐতিহাসিক বলয়কে যথার্থভাবে এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়। আর তাই একুশের গ্রন্থমেলার কার্যক্রমও সুদূরপরাহত হয়ে যায়। তবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একুশে গ্রন্থমেলার সময়ক্ষেপণ হলে স্বাধীনতার পর পরই ছোট পরিসরে বইমেলার গোড়াপত্তন হয়। সেটা সম্ভবত ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধমান হাউসের প্রাঙ্গণে বইমেলার উদ্বোধন করেন। কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই দিয়ে মেলার শুভযোগ শুরু হয়। চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত ‘স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ’ (এখন মুক্ত ধারা প্রকাশনী) থেকে এই ৩২টি বই বের করা হয়। গ্রন্থগুলো মূলত বাংলাদেশী শরণার্থী লেখকদের রচিত। শুধু তাই নয় বইগুলো স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকাশনা সংস্থার প্রথম অবদানও। উদ্যোক্তা চিত্তরঞ্জন বাবু পরবর্তী চার বছর ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত বইমেলার এই ক্ষুদ্র কার্যক্রম চালিয়ে যান। তবে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য যারা নিজেদের উৎসর্গ করলেন তাদের স্মরণে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র পরিকল্পনা করা হয় এই মাসের শেষের দিকে। তবে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানী শাসনামলে কোন বইমেলার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭২ থেকে ’৭৬-এর পথপরিক্রমায় অনেক পালা বদল ঘটে গেলে এই মেলার ক্ষুদ্র আয়োজন স্তিমিত হয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গে ১৯৭৬ সালেই অন্যান্য বিজ্ঞজনের নজরে পড়ে যায় এই বই প্রকাশের আয়োজনটি। ১৯৭৮ সালে এই বইমেলার নতুন কার্যক্রম মেলা প্রাঙ্গণের স্থান পরিবর্তনেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। মেলার সঙ্গে সংযুক্ত হয় বাংলা একাডেমির মতো আর এক প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রকাশনা সংস্থার। সে সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন আশরাফ সিদ্দিকী। ১৯৭৯ সালে পরবর্তী বইমেলার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। এই প্রকাশনা সংস্থাও সংগঠিত করেন চিত্তরঞ্জন সাহা। আর তাই বাংলাদেশের বইমেলা আয়োজনের ঐতিহাসিক পটভূমিকায় চিত্তরঞ্জন বাবুর নাম অবিস্মরণীয়। এর পরেও বৃহৎ আকারে এই মেলার আয়োজন করতে আরও চার বছর অপেক্ষা করতে হয়। ১৯৮৩ সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কাজী মনজুরে মওলার সযতœ তত্ত্বাবধানে একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রথমবারের মতো ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলার শুভ সূচনার যাত্রা পথে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের দমননীতি পুরো পরিবেশের বিপরীতে চলে যায়। শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে এরশাদের পুলিশ বাহিনী চলন্ত ট্রাক তুলে দিলে ২ জন ছাত্র প্রাণ হারায়। সে বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলা বানচাল হলেও পরবর্তী বছর ১৯৮৪তে সাড়ম্বরে এই ব্যাপক আয়োজনের শুভযাত্রা শুরু হয়। সেই ক্ষুদ্র বইমেলা কালক্রমে এমন বৃহৎ আকার নিতে থাকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ স্থান সঙ্কুলানে হিমশিম পর্যায়ে পড়ে যায়। ফলে ২০১৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমির সঙ্গ সংযুক্ত করা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো বৃহৎ আঙিনা। এখানে প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট লেখকদের জন্য বিভিন্ন স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়। যাতে নতুন লেখকের প্রকাশিত বই অত্যন্ত সুশৃঙ্খল পরিকল্পনায় পাঠকের সামনে হাজির হয়। বর্তমানে একুশে গ্রন্থমেলা তার অনেক কার্যক্রমও সম্প্রসারিত করেছে। নতুন বই পাঠকের সামনে নিয়ে আসাই শুধু নয় গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনও মেলার আবশ্যকীয় কর্মযোগ। এ ছাড়া আয়োজন করা হয় আলোচনা সভা, কবিতা পাঠের আসর, গান, নাটক ও নৃত্যনাট্যের আকর্ষণীয় পরিবেশেনা। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বই প্রকাশনাকে আরও উৎসাহিত করতে মোড়ক খোলার সঙ্গে লেখক ও প্রকাশনা সংস্থার নাম ঘোষণা করা হয়। যাতে আগ্রহী পাঠককে বই কিনতে সময়ক্ষেপণ করতে না হয়। লেখক ও প্রকাশনা শিল্পের পরিচিতিও পাঠককে যে মাত্রায় উদ্দীপ্ত করে সেখানে পছন্দসই গ্রন্থ বেছে নিতে সংশ্লিষ্টদের বিশেষ বেগ পেতে হয় না। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অনলাইনেও বই ক্রয় করার বিভিন্ন সুযোগ পাঠকদের হাতের নাগালেই থাকে। ২০১০ সাল থেকে এই মহতী মেলার পথিকৃৎ চিত্তরঞ্জন সাহার নামে একটি পদকও প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আগের বছরের প্রকাশিত বইয়ের গুণমান বিচারসাপেক্ষে সেরা বইয়ের পুরস্কারটি পায় প্রকাশক। ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ নামে এই পদকটি সেরা প্রকাশনা সংস্থার হাতে তুলে দেয়া হয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতার এই দুর্লভ সময়টিতে যোগ্য এবং আগ্রহী প্রকাশকরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটায়। পুরো আয়োজনটি বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। নতুন বই যেমন গ্রন্থমেলার শোভা বর্ধন করে একইভাবে পাঠক তৈরিতেও এমন মেলার বিকল্প কোন কিছু হতে পারে না। বই আনন্দ দেয়া এবং পড়ার জন্য। পাঠাভ্যাস গড়ে না উঠলে জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত হয় না, নতুন সময়কে ধরা যায় না সর্বোপরি নিজেকে সুসংহতভাবে লেখাপড়ার সঙ্গে সংযুক্ত করতে বইয়ের মতো যথার্থ দিকনির্দেশক অন্য কিছু নয়। একজন উন্নত মানের লেখককে অবশ্যই নিবেদিত এবং পরিশ্রমী পাঠক হওয়া ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। সুতরাং সারা বছরের একবারের এই অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রায়াজনীয়তা, গুরুত্ব এবং মাহাত্ম্য বলে শেষ করা যাবে না। বই প্রতিদিনের সঙ্গী, অনুক্ষণ প্রেরণা এবং চিরায়ত বোধের এক অকৃত্রিম সম্পদ। ২০২০ সালে ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এই গ্রন্থমেলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষকে সামনে রেখে এবারের গ্রন্থমেলার আয়োজনে থাকছে জাতির পিতার উপর প্রকাশিত বইসমূহ। বইমেলার অনবদ্য সংযোজন ওয়েবসাইট ও মোবাইল এ্যাপ যা এত বড় আয়োজনের পরিসরকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক সময়ের সাথে এগিয়ে চলা অনলাইনভিত্তিক কার্যক্রমকে প্রতিষ্ঠানের একটি অনন্য অভিযোজন বলে অভিহিত করেন। তার মতে আমাদের দেশে বাংলা একাডেমির মতো একটি অসাধারণ প্রতিষ্ঠান নিজেই তার ওয়েবসাইট এবং মোবাইল এ্যাপ তৈরিতে অমর একুশে গ্রন্থমেলার সঙ্গে সংযুক্ত করে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রতিবারের মতো এবারও বাংলা একাডেমি চত্বর এবং সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান লেখক ও প্রকাশকদের জন্য স্টল বরাদ্দ আছে। সংশ্লিষ্টরা তাদের বরাদ্দকৃত স্টলে গ্রন্থ সম্ভার নিয়ে পাঠক ও দর্শনার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণে ব্যস্ত থাকে। পুরো গ্রন্থমেলা দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়ে যে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয় তা যেমন বই প্রেমিকদের উৎসাহিত ও আগ্রহী করে তোলে একইভাবে লেখক-প্রকাশকেরও দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গতবারের মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল ‘আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন।’ এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এতে ১৫ দেশের কবি-সাহিত্যিকরা অংশ নিয়ে নতুন এই কর্মযোগের তাৎপর্য তুলে ধরেন। সেই সাথে ২০১৯ সালে আরও একটি নতুন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সোহ্রাওয়াদী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভকে মেলা চত্বরে সংযুক্ত করা হয়। তবে এবার আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন নেই। মেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখা হয়। ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা বিশেষভাবে চালু থাকে, যাতে কোন ধরনের নাশকতা কারও দৃষ্টি এড়াতে না পারে। স্মরণ করা যেতে পারে, ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রকৌশলী লেখক অভিজিৎ রায় ও তাঁর স্ত্রীকে দুর্বৃত্তরা উপর্যুপরি আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে দেয় মেলা প্রাঙ্গণের আশপাশেই। অভিজিৎ রায় মারা যান। স্ত্রী এখনও বেঁচে আছেন। বাবা অজয় রায়ও প্রয়াত। অনেক ধরনের তদন্ত করেও এই হত্যার বিচার এখনও সম্পন্ন হয়নি। এটা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। অমর একুশে গ্রন্থমেলার একপর্যায়ে একুশ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস তার চিরমাহাত্ম্য নিয়ে সর্বসাধারণের সামনে হাজির হয়। প্রকৃতির সবুজ সমারোহে ভালবাসায় সিক্ত হয়ে গ্রন্থমেলা শেষ অবধি শহীদ দিবসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে। লেখক : সাংবাদিক
×