ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মালিকানা জনগণের হাতে ছেড়ে দিলে ব্যাংকে লুটপাট বন্ধ হবে

প্রকাশিত: ০৯:২১, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 মালিকানা জনগণের হাতে ছেড়ে দিলে ব্যাংকে লুটপাট বন্ধ হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নানা কারণে সমালোচনার মধ্যে থাকা আর্থিক খাতের উন্নয়নে দেশের বেসরকারী খাতের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের মালিকানা জনগণের হাতে ছেড়ে দিলে ব্যাংকিংখাতে অনিয়ম দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ব্যাংকগুলোকে ব্যবসার জায়গা হিসেবে না ভেবে জনগণের আমানতের সুরক্ষাও দেয়া অতি জরুরী। বিশ্বের মধ্যে ধনী বৃদ্ধির হার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। আর সার্বিক উন্নয়নের সুফল ভোগ করে মাত্র পাঁচভাগ ধনী। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত ‘ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সরকার লুটপাটকারীদের ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে আমানতকারীদের সুদের হার কমিয়েছে। দেশে যে উন্নয়ন হয় তার সুফল ভোগ করে ৫ শতাংশ ধনী, সাধারণ জনগণের জন্য কোন উন্নয়ন হয় না। ‘বাংলাদেশে ধনী বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ১৯ শতাংশ, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। ধনী বাড়ার হার বাড়লে গরিব বাড়ার হারও বাড়ে। অর্থনীতি আয় বৈষম্য এত বেশি যা এশিয়ার অনেক দেশ এর ধারে কাছেও নেই। এটা খুবই চিন্তার বিষয়। এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তা করা উচিত। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, দুর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তা, লুটেরা ব্যবসায়ী এবং দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই তিনের মেলবন্ধনেই খেলাপী ঋণের নষ্ট সংস্কৃতির ভিত্তি রচনা করেছে। এখন দেশের উন্নয়নের নীতিই হচ্ছে লুটপাট। ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি ক্রিসেলের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাফফর আহমেদ বলেন, যারা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন তারা ধীরে ধীরে মালিকানা থেকে সরে যান, পাবলিক মালিক হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে তার উল্টো। তারা তো সারাজীবন ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। বেসরকারী ব্যাংকগুলোর সর্বময় ক্ষমতা চেয়ারম্যানের হাতে। এমডিসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের হাতে কোন ক্ষমতা নেই। কর্পোরেট গবর্নেন্স একদম নেই। আর তা হচ্ছে না মালিকদের সদিচ্ছার অভাবে। তিনি বলেন, ব্যাংকের মোট টাকার মধ্যে পরিচালকদের হচ্ছে মাত্র ৫ শতাংশ। আর আমানতকারীদের হচ্ছে ৯৫ শতাংশ কিন্তু সব সুবিধা নিচ্ছে ও কর্তৃত্ব করছে ওই ৫ শতাংশ-মালিক পরিচালকেরা। তারা গোটা ব্যাংকের মালিক সেজে বসে আছেন। এটা কোনভাবে গণতান্ত্রিক হতে পারে না, এটা মানা যায় না। এই বিষয়ে রাজনীতিকদেরই বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় ব্যয় কমাতে হবে। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী তিন বছরের মধ্যে ব্যাংকগুলোর লোনেবল ফান্ড ক্রাইসিস তৈরি হবে। আমরা দেখছি প্রাইভেট সেক্টর মুনাফা করলে নিজের আর লোকসান করলে সরকারের। ফারমার্স ব্যাংক তার অন্যতম উদাহরণ। এভাবে চলতে পারে না। দেশের ৪ শতাংশ ইচ্ছাকৃত খেলাপী, ৯৬ শতাংশ অনিচ্ছাকৃত খেলাপী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরির্দশন বিভাগের কর্মকর্তারা বিভিন্ন ব্যাংক পরিদর্শনে গিয়ে ছোটখাটো ঋণ খেলাপী পেলে সঙ্গে সঙ্গে লিখে দেন। আর বড় বড় খেলাপীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পান। পরিদর্শন কর্মকর্তা প্রথমে তার বিভাগীয় প্রধানকে অবগত করেন। আবার এমনও হয় পরিদর্শনে যাওয়ার আগের রাতে ওই কর্মকর্তাকে ফোনে অবগত করা হয়। কিভাবে খেলাপীদের কাছ থেকে টাকা আদায় হবে? কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ব্যাংক ব্যবসা এখন খুবই লাভজনক। তার চেয়ে বেশি লাভজনক হচ্ছে এমপিগিরী ও রাজনৈতিক ব্যবসা! বাজার অর্থনীতি রাজনীতিকে বাজারনীতিতে পরিণত করেছে। দেশের বেশিরভাগ মানুষের অর্থনীতি ভাল আছে এ রকম মিথ্যা তথ্য যারা প্রচার করছে, তাদের সাজা হওয়া দরকার। অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, আর্থিক খাতের টালমাটাল অবস্থায়ও কেন নতুন ব্যাংক হচ্ছে? কারণ ব্যাংকে যে পরিমাণ লাভ হয় অন্য কোন খাতে এই পরিমাণ লাভ হয় না।
×