ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশেষ সুবিধায় কমে এসেছে খেলাপী ঋণ

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বিশেষ সুবিধায় কমে এসেছে খেলাপী ঋণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপী ঋণের হার এখন এক অঙ্কে নেমে এসেছে। এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে ঋণখেলাপীদের দেয়া ১০ বছর মেয়াদী পুনর্তফসিল সুবিধা। তারপরেও গত বছরের তুলনায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মোট খেলাপী বেড়েছে ৪২০ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। খেলাপী ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণখেলাপীদের নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। খেলাপী আইন শিথিল, অবলোপন নীতিমালায় ছাড়, গণছাড়ের আওতায় পুনর্তফসিল, স্বল্প সুদের ঋণের ব্যবস্থাসহ দেয়া হয়েছে আরও বিশেষ সুবিধা। এসব ছাড় গ্রহণ করে অর্ধলাখ কোটি টাকার বেশি খেলাপী ঋণ পুনর্তফসিল করা হয়েছে। এর পরও বছর শেষে খেলাপীর পরিমাণ বেড়েছে। গত বছরের ব্যাপক হারে পুনর্তফসিল সুবিধা দেয়ায় প্রথমবারের মতো বেসরকারী ব্যাংকগুলোর তুলনায় সরকারী ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণ কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ ১১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকাই খেলাপী হয়ে গেছে। মোট ঋণের মধ্যে খেলাপী ঋণের হার ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। তবে গত সেপ্টেম্বরে খেলাপী ঋণ ছিল ১ লাখ ১৬ হাজর ২৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ২২ হাজার কোটি টাকা খেলাপী ঋণ কমিয়ে ফেলেছে ব্যাংকগুলো। তবে আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ৪২০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে খেলাপী ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার করায় খেলাপী ঋণ কমে এসেছে। ডিসেম্বর শেষে খেলাপী ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, আগের প্রান্তিকে যা ছিল ১১ দশমিক ৯৯। এ খেলাপী ঋণ কমাতে বিশেষ ছাড়ে পুনর্তফসিল ও এককালীন এক্সিট সুবিধা কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। সূত্র জানায়, গত বছরের শুরুতে নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে খেলাপী ঋণ এক টাকাও বাড়বে না বলে ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ জন্য প্রথমে আন্তর্জাতিক মানের খেলাপী নীতিমালায় শিথিলতা আনা হয়। আগে ৩ মাস অনাদায়ী থাকলেই তা খেলাপী হিসেবে শ্রেণীকরণ করতে হতো। এটি সংশোধন করে ৬ মাস এবং সর্বোচ্চ ১২ মাস করা হয়। অন্যদিকে খেলাপীদের গণছাড় দিতে বিশেষ পুনর্তফসিল নীতিমালা জারি করা হয়। গত বছরের মে মাসে জারি করা এক সার্কুলারে বলা হয়, ঋণখেলাপীরা মাত্র ২ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের মেয়াদে মাত্র ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন। আবার নতুন করে যারা ঋণ নেবেন তাদের জন্য নয়-ছয় জোর করে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতোমধ্যে আমানতকারীদের সুদহার ৬ এবং ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদহার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। গণছাড়ের আওতায় ১৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপী ঋণ নবায়ন করেছে ব্যাংকগুলো। যার অর্ধেকই করেছে সরকারী ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েও গত বছর বিপুল পরিমাণ খেলাপী ঋণ পুনর্তফসিল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৫২ থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা পুনর্তফসিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে বিপুল পরিমাণ ঋণ অবলোপন করেছে ব্যাংকগুলো। তবে পুনর্তফসিল ও অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ এখনও জানা যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারী ৬ বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করা ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ২৪ শতাংশ বা ৪৩ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা খেলাপী হয়ে গেছে। আগের বছর ১ লাখ ৬২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপী ঋণ ছিল ৪৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। গত বছর শেষে বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণ ৪৪ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণকৃত ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা ঋণের ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগের বছর খেলাপী ঋণ ছিল ৩৮ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। অনেক বছর ধরেই খাতওয়ারী হিসেবে সরকারী ব্যাংকগুলোয় খেলাপী ঋণ বেশি ছিল। কিন্তু গতবছর বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোয় খেলাপী ঋণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে। বিদেশী ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণ ২ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। সরকারী মালিকানাধীন বিশেষায়িত তিন ব্যাংকের খেলাপী ঋণ ৪ হাজার ৫৯ কোটি টাকা; আগের বছর যা ছিল ৪ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।
×