ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রহস্যজনক কারণে ব্যাকফুটে তরফদার রুহুল আমিন!

প্রকাশিত: ০৯:০০, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  রহস্যজনক কারণে ব্যাকফুটে তরফদার রুহুল আমিন!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে নাটকীয়তা ততই বেড়ে চলেছে। এপ্রিল মাসে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এই হিসেবে নির্বাচনের বাকি আড়াই মাসের মতো। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনকেন্দ্রিক উত্তাপ। সেই উত্তাপে ঘি ঢেলে দিয়েছেন বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক তরফদার মোঃ রুহুল আমিন। আচমকাই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সভাপতি পদে নির্বাচন করা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি। রবিবার সন্ধ্যা থেকেই স্টেডিয়ামপাড়ায় গুঞ্জন রটে নির্বাচন করছেন না জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব। তিনি নিজেই বর্তমান সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে ফোন করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে সোমবার দুপুরে। রাজধানীর মহাখালীতে নিজ ব্যবসায়িক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন তরফদার রুহুল আমিন। সংবাদ সম্মেলনে বাফুফের বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহম্মেদ মহিসহ জেলা ও বিভাগীয় ফুটবলের সংগঠক ও কমকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। তার এই সিদ্ধান্তের পর বাফুফে নির্বাচন নিয়ে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে। এখন গুঞ্জন শুরু হয়েছে বর্তমান সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন পুনরায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন কিংবা তাকেও সরে যেতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে বাফুফে সভাপতি পদে নতুন মুখের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের। সবমিলিয়ে তরফদার রুহুলের নির্বাচন না করার ঘোষণার পর নানামুখী গুঞ্জনে মুখর হয়ে উঠেছে ফুলবলপাড়া। তরফদার রুহুল আমিন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলে দুটি ক্লাবের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। ক্লাব দু’টি হচ্ছে চট্টগ্রাম আবাহনী ও সাইফ স্পোর্টিং। এছাড়া তিনি জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও ক্লাব এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। ক্লাব ও জেলা এবং বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পাশে রেখে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান তরফদার রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘বাফুফে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চরম অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। কাজী সালাউদ্দিনের পক্ষের লোকজন নানা ধরনের কথা বলছেন। আমার পক্ষের লোকজনও নানা কথাবার্তা বলছেন। তাই মনে হয়েছে, সভাপতি পদে আমার নির্বাচন করাটা ফুটবলের জন্য শুভ হবে না। আমি সভাপতি পদে নির্বাচন করব না, এটা আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। নির্বাচন সবার গণতান্ত্রিক অধিকার। আমার সংগঠনের কেউ করলেও করতে পারে। আর আমি সভাপতি পদে নির্বাচন না করলেও নির্বাচনী মাঠ ছাড়ছি না। কারা কোন্ পদে নির্বাচন করবে সেটা আমরা পরবর্তীতে ঠিক করব।’ তরফদার রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি ফুটবলের ভাল চাই। ফুটবলকে নিয়ে অনেক কাজ করার আছে। নির্বাচনকে ঘিরে যে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সেখান থেকে মুক্তি পেতে চাই। যে কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে তা আমাদের কারও জন্য মঙ্গল না। ওই একটা পদেই (সভাপতি) আপাতত আমি নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে অন্য যে পদগুলো আছে সেগুলো ক্লাব এবং জেলা ও বিভাগ এ্যাসোসিয়েশন ঠিক করবে। তারা নিশ্চয়ই একটি সুন্দর প্যানেল দেবে। তারা যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই ফাইনাল হবে।’ নিবেদিতপ্রাণ এই ক্রীড়া সংগঠক বলেন, ‘দুটি এ্যাসোসিয়েশন থেকে আমাকে সভাপতি পদে নির্বাচন করার জন্য অনুমতি দেয়া হয়েছিল। কারণ তখন আমরা জেনেছি বর্তমান সভাপতি আর নির্বাচন করবেন না। পরে জানতে পারলাম বর্তমান সভাপতি যিনি আছেন তিনি চতুর্থবারের মতো নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও তিনি আগেও বলেছিলেন নির্বাচন করবেন না। তখন আমরা দেখলাম ফুটবলে তথা ক্রীড়াঙ্গনে এক অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আসন্ন নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচন করব না।’ কেন এই সিদ্ধান্ত, কোন চাপ আছে কিনা জানতে চাইলে তরফদার রুহুল বলেন, ‘কোন চাপ নেই। ফুটবলের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছি। ফুটবলকে একটি ভাল জায়গায় নেয়ার জন্য। ফুটবলের যে কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে তা কারও জন্য মঙ্গলজনক নয়।’ তাহলে সালাউদ্দিনকে সমর্থন করছেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাপোর্ট মানে কী? আমাদের তো দুটি ক্লাব আছে। ক্লাব দুটি বাফুফের স্টেক-হোল্ডার। উনারা তো সাপোর্ট দিচ্ছেন। প্রশাসনিক সাপোর্ট তো থাকবেই। এখন উনি কি করবেন তার বিষয়। আমি করব না। এটা নিশ্চিত। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত।’ তরফদারের সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাসিরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কিন্তু আসন্ন সিটি নির্বাচনে নাসির মনোনয়ন পাননি। এ বিষয়টার সঙ্গে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলে তরফদার বলেন, ‘ওটা রাজনৈতিক ইস্যু। আমার এটার সঙ্গে কোন মিল নেই। সম্পর্ক নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন হলো গণতান্ত্রিক অধিকার। যে কেউ দাঁড়াতে পারে। আরও প্রার্থী আসতে পারে। এই মুহূর্তে সমর্থন দেব কিনা বলতে পারব না। তবে ফুটবল থেকে সরে যাচ্ছি না। আমার ক্লাব আছে। একাডেমি আছে। যেহেতু অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে, সেখান থেকে সরে এসেছি। এটা সাময়িক।’ গত প্রায় আড়াই বছর ধরে নির্বাচনের মাঠ চষে বেড়িয়েছেন তরফদার রুহুল আমিন। এখন আচমকা তিনিই থমকে গেলেন।
×