ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিডনি পাথর ॥ চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 কিডনি পাথর ॥ চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

কিডনিতে পাথর একটি পরিচিত রোগের মধ্যে অন্যতম। এ পাথর কিডনি, কিডনির সঙ্গে সংযুক্ত মূত্রনালী বা মূত্রাশয়েও দেখা দিতে পারে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন কিডনি পাথরে আক্রান্ত হয়। পাথর আকারে ক্ষুদ্র শস্যদানা হতে শুরু করে টেনিস বল পর্যন্ত হতে পারে। পাথরের আকার ছোট হলে ওষুধের মাধ্যমে প্র¯্রাবের সঙ্গে বের হতে পারে। তবে বড় আকারের হলে প্রয়োজনবোধে অবশ্যই চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। আশার কথা, এখন পাথর হওয়া প্রতিরোধ করাও সম্ভব। কি কি ধরনের পাথর হয়? মানবদেহের পাথর হওয়ার জন্য যেসব উপাদান দায়ী তা হলো, ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, অক্সালেট, ফসফেট ও সাইট্রেট অক্সালেট। এছাড়াও ইউরিক এসিড, সিস্টিল, স্ট্রভাইট ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, এমোনিয়াম ফসফেট দিয়েও পাথর হতে পারে। পাথরগুলো মানদেহের রক্তের উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এগুলো রক্তের উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এগুলো নরম থেকে শক্ত হয়ে থাকে। অনেক সময় পাথরের গায়ে কাঁটা কাঁটা দেখা যায়। যা হতে তীব্র ব্যথা ও রক্তকরণ দেখা যায়। কাদের বেশি হয়? মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের পাথর হওয়ার হার বেশি। ছেলেরা সাধারণত শতকরা ১৩ ভাগ এবং মেয়েরা শতকরা ৭ ভাগ এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ৪০ বছরের পর থেকে ছেলেদের পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে তা ৭০ বছর পর্যন্ত বাড়তে থাকে। তবে যে কোন সময়ই কিডনিতে পাথর হতে পারে। যাদের একাধিক বার পাথর হয়েছে, তাদের ও বারবার পাথর হতে পারে। কারণ কি? কিডনিতে পাথর তৈরি হওয়ার কারণ এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়, এর কারণগুলো বেশ জটিল, মাল্টিফ্যাকটেরিয়াল। তবে ধারণা করা হচ্ছে – -থাইরয়েড গ্রন্থির কারণেও পাথর তৈরি হয়। - খাদ্যে বেশি পরিমাণ ক্যালসিয়াম জাতীয় গ্রহণ করার পর যদি কিডনি সে পারিমাণ প্রস্রাবের সঙ্গে বের করতে না পারে, সেক্ষেত্রেও পাথর হতে পারে। - লেবু জাতীয় খাবার কম খাওয়া, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, কোমলপানীয় বেশি খাওয়া, পরিমিত পরিমাণ পানি পান না করার কারণেও পাথর হতে পারে। - মাইগ্রেন ও ব্যথানাশক ওষুধ বেশি খেলে মূত্রনালীর পিএইচের মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে পাথর সৃষ্টি হবে। -ঘন ঘন কিডনিতে সংক্রমণ হলে এবং সময়মতো চিকিৎসা না নিলে পাথর তৈরি হতে পারে। - জিনগত ত্রুটি ও পরিবেশগত কারণেও পাথর হতে পারে। -তীব্র গরমে দ্রবণ ও দ্রাবকের অসামঞ্জস্যের কারণেও পাথর হতে পারে। লক্ষণগুলো কি কি? কিডনি বা মূত্রনালী বা মূত্রাশয়ে পাথর হলে অনেক ক্ষেত্রে কোন লক্ষণ বা উপসর্গ নাও হতে পারে। তবে পাথর বড় হলে কিছু লক্ষণ পরিলক্ষিত হবে। সেগুলো হলো- - যে পাশে পাথর হবে সে পাশের কিডনিতে ব্যথা অনুভব হবে। - ব্যথা নিচের দিকে হতে প্রস্রাবের নল পর্যন্ত অনুভব হবে। - নালীপথে জ্বালা যন্ত্রণা হবে। - বার বার প্রস্রাবের বেগ অনুভব হবে। -বমি বমি ভাব থাকবে। -কোমরের পেছন হতে শুরু করে কোমরের পাশে, কুচকি, পিঠে, তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা হবে। -জননেন্দ্রিয়েও ব্যথা হবে। - পাথর মূত্রনালী পথে এসে নালীপথ বন্ধ করে দিলে কিডনি বিকল হতে পারে। - প্রস্রাবের রং গোলাপি, লাল বা বাদামি হতে পারে। রোগ নির্ণয় পাথর সৃষ্টি হলে পাথরের অবস্থান, আকার সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণার জন্য যে সব পরীক্ষা করতে হবে, সেগুলো হলো- - প্রস্রাব পরীক্ষা RME ও C/S - এক্স-রে - রুটিন মাইক্রোসকপিক পরীক্ষা - আইভিইউ - আল্ট্রাসনোগ্রাম - সিটিস্ক্যান - ২৪ ঘণ্টার প্রস্রাবের ক্যালসিয়াম, ইউরিক এসিড, সিস্টিন ইত্যাদির পরিমাণ দেখা হয়। এ পরীক্ষা মূলত পাথর প্রতিরোধের জন্য জরুরী। চিকিৎসা কি? কিডনিতে পাথর হলেই অস্ত্রোপচার করাতে হবে এমনটি হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার ছাড়াই পাথর বের করা যাবে। পাথর ৪/৫ মি.মি. বা তার কম হলে প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে আসবে, তবে এ সময় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়। এক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ সেবনে ব্যথামুক্ত থাকা যায়। পাথর ৫ মিলির ওপর গেলে বিভিন্ন ওষুধ সেবনেও ঘনঘন পানি পান ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধ সেবনে পাথর মূত্র পথে বের করা সম্ভব। পাথরের আকার যদি এত বড় হয় যা প্রস্রাবের নালী পথে দিয়ে বের করা সম্ভব নয়, তখন অবশ্যই অস্ত্রোপচার করাতে হবে। হোমিওপ্যাথিক উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই উপসর্গ অনুসারে চিকিৎসা গ্রহণ করালে পাথর বের করা সম্ভব। যা প্রায় ক্ষেত্রেই হোমিওপাথিক ওষুধ সেবনে পাথর অবমুক্ত হচ্ছে। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়? জীবন যাত্রা ও খাদ্যভ্যাস এর পরিবর্তনই কিডনি পাথর প্রতিরোধ করতে পারে। পাথরের রাসায়নিক বিশ্লেষণ, রক্ত ও ২৪ ঘণ্টার প্রস্রাবে পরীক্ষা করে পাথর সৃষ্টিকারী বিভিন্ন উপাদান শনাক্ত করা অতীব জরুরী। - কিডনি পাথর প্রতিরোধের জন্য দৈনিক পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন ৩-৪ লিটার পর্যন্ত পানি পানের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যারা বিভিন্ন কারখানায় কাজ করে এবং শরীর হতে প্রচুর পরিমাণ ঘাম ঝরে, তাদের নিয়মিত পরিমাণমতো পানি পান করতে হবে। - রোগীদের অবশ্যই জীবনধারণ প্রণালির পরিবর্তন আনতে হবে। যে কোন ধরনের কোলা বা পানীয় যা মাত্রাধিক ফসফরিক এসিডসমৃদ্ধ, তা এড়িয়ে চলতে হবে । - যাদের কিডনিতে একবার পাথর ধরা পড়েছে, তাদের ভিটামিন-ডি জাতীয় খাবার, অপ্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট এড়িয়ে চলতে হবে। - মাছ, মাংস ও পোল্ট্রি জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করতে হবে। - খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ একেবারেই বর্জন করতে হবে। -যেসব সবজিতে মাত্রাধিক অক্সালেট রয়েছে সেসব খাদ্য গ্রহণ হতে বিরত থাকতে হবে। সতর্কতা - বংশে কিডনি পাথরের ইতিহাস বা কারও একবার হয়েছে তাদের পুনরায় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। - যাদের কিডনিতে বার বার পাথর হয় তাদের দৈনিক প্রোটিন গ্রহণ না করাই ভাল। - ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির প্রস্রাব ও রক্ত পরীক্ষা করে পাথর সৃষ্টি সম্পর্কে আগাম অনুমান করা সম্ভব। - কারও কারও ঝুঁকি কমানোর জন্য নিয়মিত ওষুধ সেবন করাই ভাল। ডাঃ মোঃ হুমায়ূন কবীর কনসালটেন্ট ৮৯, সিটি কর্পোরেশন মার্কেট, নিমতলী, চাঁনখারপুল, ঢাকা-১০০০। ফোন : ০১৭১৭-৪৬১৪৫০, ০১৯১২-৭৯২৮৯৪
×