ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় নাট্যোৎসবে থিয়েটার অঙ্গনের ‘মুনীর চৌধুরী’ মঞ্চস্থ

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

জাতীয় নাট্যোৎসবে থিয়েটার  অঙ্গনের ‘মুনীর চৌধুরী’ মঞ্চস্থ

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ দেশব্যাপী একযোগে চলছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের জাতীয় নাট্যোৎসব। এ উৎসবে সহযোগিতা করছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। উৎসবে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার মিলনায়তনে থিয়েটার অঙ্গনের ‘মুনীর চৌধুরী’ নাটকের মঞ্চায়ন হয়। উত্তরার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্র গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন থিয়েটার অঙ্গন প্রযোজিত ‘মুনীর চৌধুরী’ নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রবীর দত্ত। থিয়েটার অঙ্গনের দশম প্রযোজনা ‘মুনীর চৌধুরী’ নাটকটি বাংলা নাটকের পথিকৃৎ শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর জীবন ও কর্ম নিয়ে নির্মিত হয়েছে। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন মাহবুব আমিন মিঠু সাবিনা আক্তার, মোঃ রাজীব আহমেদ, মোঃ জয় আক্তার সজিব, সম্বিতা রায়, জান্নাতুল ফেরদৌস রশনি, মির্জা সাইফুল ইসলাম সুমন, অক্ষয় কুমার সরকার, মোঃ আলম, সিরাজুল ইসলাম, আজিম আহমেদ সালমান ও মোঃ আবু উবায়দা। ‘মুনীর চৌধুরী’ নাটকের মঞ্চ পরিকল্পনায় আলি আহমেদ মুকুল, পোশাক পরিকল্পনায় ড. আইরিন পারভীন লোপা, আবহসঙ্গীত শিশির রহমান, আলো শামীমুর রহমান, ভিডিও অরণ্য আলমগীর, কোরিওগ্রাফি সম্বিতা রায়, রূপসজ্জা শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, সেট নির্মাণ মনির, প্রচ্ছদ নক্সাশিল্পী রফিকুন নবী ও প্রযোজনা অধিকর্তা মাহবুব আমিন মিঠু। ‘মুনীর চৌধুরী’ নাটকে শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর জীবন এবং কর্মের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। ব্যক্তি মুনীর চৌধুরীর বহুমাত্রিক নাট্যভাবনার নির্মাণ প্রতিফলিত হয়েছে মৌলিক নাট্য রচনায় ও বিদেশী নাটকের অনুবাদ-রূপান্তরে-যেখানে বেদনার সঙ্গে মিশ্রিত হয়েছে কৌতুক বোধ এবং এর সঙ্গে সূক্ষ্ম শৈল্পিক প্রতিবাদ। দৃষ্টি উন্মোচনকারী এই নাট্যকার, প্রাবন্ধিক এবং সাহিত্য সমালোচক ১৯৭১ সালে বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে স্বাধীনতাবিরোধী আলবদর, আলশামসদের হাতে অন্য বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে নির্মমভাবে শহীদ হন। কোথাও তার মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। একুশের প্রথম নাটক ‘কবর’ যাকে অমর করে রেখেছে, তারই কোন কবর নেই। তবে কি ‘কবর’ মুনীর চৌধুরীর জীবনের প্রতিচ্ছবি? মূলত নাটকীয় মুহূর্ত তৈরির মাধ্যমে মুনীর চৌধুরীর জীবনালেখ্যই প্রতিফলিত হয়েছে এ নাটকে। এদেশের নব-নাট্যান্দোলনের পথিকৃৎ মুনীর চৌধুরীর বুদ্ধিদীপ্ত প্রচেষ্টায় বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় এদেশের আত্মসচেতন ও সমাজসচেতন নাট্যভাবনার সূত্রপাত ঘটে। অল্পকাল ব্যবধানে দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পর গোটা দুনিয়াব্যাপী শিল্প-সাহিত্যের উদার উঠানে, যখন চিন্তার বিলোড়ন তৈরি হয়েছে তখন বাংলাদেশেও সে প্রবণতার প্রভাব ছায়া বিস্তার করেছে অনিবার্যভাবে। শিক্ষিত-সচেতন মানুষ হিসেবে নাট্যকার মুনীর চৌধুরী বিশ্বমননে স্নাত হয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় থেকেই তিনি ঝুঁকে পড়েন নাটকের শিল্প কৌশলের দিকে। তার প্রথম নাটক নওজোয়ান কবিতা মজলিস রচিত হয় ১৯৪৩ সালে। তার নাটকে প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকার নগরকেন্দ্রিক জীবনপ্রবাহ এক কর্মচাঞ্চল্যের অভিজ্ঞতা প্রাধান্য পেয়েছে। আর পেশাগতভাবে শিক্ষকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় শিক্ষার্থী-অধ্যাপক-প্রক্টর-হাউস টিউটর, সাংবাদিক-উকিল-পুলিশ-ডাক্তার নেতা, রিক্সাওয়ালা দোকানদার-অভিভাবক প্রেমিক-প্রেমিকা প্রভৃতি চরিত্র তার নাটকের ক্যানভাসে অতি সাবলীলতায় জায়গা করে নিয়েছে। উল্লেখ্য, গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমি গত ১৪ বছর ধরে রাজধানীর উত্তরা জনপদে নিবেদিতভাবে সাংস্কৃতিক চর্চা ও বিকাশে কাজ করে যাচ্ছে। থিয়েটার অঙ্গন নাট্যদল গীতাঞ্জলির অভিনয় বিভাগের শিক্ষার্থী ও আশপাশের এলাকার নাট্যকর্মীদের জন্য ২০০৮ সালে গঠিত হয়। থিয়েটার অঙ্গন এ যাবতকাল পর্যন্ত এগারোটি প্রযোজনা করতে সামর্থ্য হয়েছে।
×