ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঠাকুরগাঁওয়ে ক্লাশেই ঘুমাচ্ছেন শিক্ষক, অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ঠাকুরগাঁওয়ে ক্লাশেই ঘুমাচ্ছেন শিক্ষক, অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ছোট সিঙ্গিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পারভীন আক্তার প্রায় প্রতিদিন শ্রেনীকক্ষে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কিছু পড়তে অথবা লিখতে দিয়ে টেবিলে মোবাইল ও ভ্যানিটি ব্যাগ ফেলে রেখেই ঘুমিয়ে পড়েন বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের। এমনকি এব্যাপারে ওই শিক্ষিকাকে বারবার সতর্ক করেও কোন লাভ হয়নি বরং এ বিষয়ে সতর্ক করায় ওই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকদের সাথে তাঁর দ্বন্দ সৃষ্টি হয়েছে এবং এ দ্বন্দ্বে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চ.দা.) নাজমা আখতারের সাথে কথা হলে তিনি সহকারী শিক্ষিকা পারভীন আক্তারের বিষয়ে জানান, তিনি বিদ্যালয় চলাকালে শ্রেনীকক্ষে শুধু ঘুমিয়ে পড়া নয় তিনি ওই সময় মোবাইলে অবিরাম উচ্চস্বরে কথা বলেন এবং শিক্ষাথীদের সাথে অশালীন আচরণ করাও অভিযোগ রয়েছে। তাঁর আচরণে অতিষ্ঠ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগন। এ বিষয়ে তাকে বারবার সতর্ক করা হলে তিনি আমার সাথেও বিরুপ আচরণ করেন। প্রধান শিক্ষিকার সাথে কথা বলে আরও জানা যায়, চলতি দায়িত্বে সহকারী শিক্ষকের পদ হতে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদানের পর থেকে তাদের মধ্যে দ্বন্দের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ এক বছর ধরে চলছে এই দ্বন্দ। বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুন, ফজলে আলমসহ অন্যান্যরা জানায়, প্রায় প্রতিদিন পারভীন আপা আমাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। মাথার পাকা চুল তোলাসহ পিঠ চুলকিয়ে নেন। আমাদের সাথে ভাল ব্যবহার করেন না। তবে সমস্ত অভিযোগ মিথ্যে উল্লেখ করে সহকারী শিক্ষিকা পারভীন আক্তার জানান, মাঝে মাঝে মোবাইলে কথা বলি। তবে শিক্ষার্থীদের সাথে কোন খারাপ আচরণ তিনি করেন না। প্রধান শিক্ষক যোগদানের পর থেকেই তিনি মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাকে হেয় করার চেষ্টা করছেন। প্রধান শিক্ষক কেন আপনাকে হেয় করবে ? এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক হওয়ার কথা ছিল আমার। চলতি দায়িত্বে পদোন্নতি দেওয়া কমিটি টাকার বিনিময়ে কিছু শিক্ষককে চলতি দায়িত্বে নিয়োগ দিয়েছে। তার ফাইল মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে। খুব অল্প সময়ে তিনিও প্রধান শিক্ষক হবেন বলে জানান। স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এমন দ্বন্দ থাকলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে মীমাংসা হচ্ছে না। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত। এমন অবস্থা চলমান থাকলে তারা বিদ্যালয়ে তালা দিয়ে শিক্ষার্থীদের অন্য স্থানে ভর্তি করাবেন বলে জানান। বিদ্যালয়ের ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু মুসা জানান, গত এক বছর আগে এমন দ্বন্দ শুরু হলে আমি নিজে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষককে বুঝিয়ে মীমাংসা করে দিলেও আবার তাদের দ্বন্দ শুরু হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন মন্ডল মুঠোফোনে জানান, আমি নতুন এসেছি। এমন কোন বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে অবগত করেননি। বিষয়টি আপনার মুখে শুনলাম। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছর প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৯৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তি ছিল। তবে চলমান শিক্ষকদের এমন দ্বন্দের কারণে অভিভাবকগণ ১০জন শিক্ষার্থীকে বের করে নিয়ে কিন্ডার গার্ডেনে ভর্তি করেছেন। এছাড়া ৫ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও বিদ্যালয়টিতে ৪ জন শিক্ষক পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
×