ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হুবেইয়ে আটকেপড়া ১৭১ বাংলাদেশীকে ফেরানোর কাজ চলছে ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  হুবেইয়ে আটকেপড়া ১৭১ বাংলাদেশীকে ফেরানোর কাজ চলছে ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আগের স্থান পরিবর্তন করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে চীনের হুবেই প্রদেশে আটকেপড়া ১৭১ বাংলাদেশীকে ফেরানোর কাজ চলছে। এর আগে সরকারী উদ্যোগে চীন থেকে আর কাউকে আনা হবে না বলে বক্তব্য দেয়ার পাঁচদিনের মাথায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তিনি। খবর বিডিনিউজের। মোমেন বলেন, হুবেই প্রদেশে আরও ১৭১ বাংলাদেশী আছে, তারাও আসবে। আমরা ভবিষ্যতে তাদেরকে ফিরিয়ে আনব। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। করোনাভাইরাসে চীনে দেড় হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু এবং ৭০ হাজারের বেশি আক্রান্ত হওয়ায় সে দেশে আটকেপড়া বাংলাদেশীরা দেশে ফিরতে উদগ্রীব। নোভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া শুরু হলে গত ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ চীনের উহানে গিয়ে ৩১২ বাংলাদেশীকে দেশে ফিরিয়ে আনে। সে সময় চীন থেকে এক দফায় তিন শতাধিককে আনতে ৩ কোটি টাকা খরচের হিসাব দিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর পর আর কাউকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ না নেয়া প্রসঙ্গে এই ‘খরচের’ হিসাব দেয়া নিয়ে সমালোচিতও হন তিনি। তবে চীনে থাকা বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে অর্থ কোন সমস্যা নয় বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ৩১২ বাংলাদেশীকে ফেরানার পর ওই বিমান, পাইলট ও ক্রুদের অন্য দেশে ঢোকার ক্ষেত্রে অনুমতির ঝক্কি মোকাবেলার কথা ব্যাখ্যা হিসেবে উল্লেখ করে এদিন সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যখন আমরা ৩১২ জনকে ফিরিয়ে এনেছি তখন একটি বিশেষ বিমান গিয়েছিল। বিমানটি যখন ফিরে আসে তখন অনেক কথা শুনতে হয়েছে। ক্রু ও বিমানকর্মীদের অন্য দেশ ঢুকতে দেয়নি। তাদেরকেও কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হয়। যা আমাদের জন্য বড় জটিলতা তৈরি করে। একমাত্র বাড়িতেই কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা হয় তাদের। এখন কোয়ারেন্টাইনের সময় শেষ হয়েছে, তারাও যেতে পারবে। দেশে ফিরে আসার জন্য প্রথমে ১৭১ জন নিবন্ধন করলেও নিজ খরচে ফিরতে ৩০ জন রাজি হয়েছে বলে জানান তিনি। মোমেন বলেন, এক পর্যায়ে আমরা বলেছিলাম, যদি উনারা নিজের পয়সায় আসেন তখন ৩০ জন রেজিস্ট্রি করেছে। আমরা এখন চিন্তা করছি, যদি ওরা কেউ আসতে চায়, কেউ কেউ আসতে চায়, তাহলে আমরা দেখি কীভাবে আয়োজন করা যায় ওদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য। সরকারী খরচে চীনে থাকা বাংলাদেশীদের আনা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তো একদলকে এনেছি ট্যাক্সপেয়ারের পয়সায়, আরেকদলকেও হয়ত সেভাবে আনব। কবে নাগাদ তাদের ফিরিয়ে আনা হতে পারে সে প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, শাট ডাউন করে রেখেছে। ওখানে বিমান যেতে হলে তাদের পূর্বানুমতি নিতে হয়। ওখান থেকে কোন লোক বাইরে যেতে পারবে না। নতুবা আমাদের তো ফ্লাইট চালু আছে, কুনমিং ও গুয়াংজু থেকে। কিন্তু হুবেই প্রদেশ থেকে কেউ বের হতে পারে না। আমাদের ওপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে চীনের ওপর। তারা পারমিশন দিলে আমরা আনতে পারব। করোনাভাইরাস শনাক্ত করার জন্য বাংলাদেশে ৫০০টি টেস্ট কিট পাঠাচ্ছে চীন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে এই কিট আসার নথি তুলে দেন চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। অনুষ্ঠানে জিমিং বলেন, আমরা ৫০০টি কিট দিচ্ছি, যাতে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা যায়। যা এই দেশে ভাইরাসটি সংক্রমণ মোকাবেলায় কাজ করবে। আগামী দুইদিনে কিটগুলো এসে পৌঁছাবে। অন্যদিকে করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত চীনের জন্য ‘সহমর্মিতামূলক সহায়তা’ হিসেবে মাস্ক, গাউন, ক্যাপ, হ্যান্ড গ্লোভ ও স্যানিটাইজারসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশটির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উপহার আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের হাতে তুলে দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সঙ্গে কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় শোক ও সমবেদনা জানিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মানবপাচারে এমপি জড়িত থাকার খবর ভুয়া কুয়েতে মানবপাচারে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্যের জড়িত থাকার বিষয়ে সে দেশের গণমাধ্যমে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা ‘ভুয়া’ বলে উড়িয়ে দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। রবিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যে সংসদ সদস্যের কথা বললেন, আমরা শুনেছি যে এটা ফেক নিউজ।’ সম্প্রতি কুয়েত সিআইডির বরাত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার নিয়ে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কুয়েতী পত্রিকা আল কাবাস ও আরব টাইমস। খবর বিডিনিউজের। আল কাবাসের খবরে বলা হয়, কুয়েতে মানবপাচার ও ভিসা বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে তিন বাংলাদেশীর একটি চক্রের সন্ধান পাওয়ার পর একজনকে গ্রেফতার করেছে সেখানকার সিআইডি। বাকি দুজন বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন, তাদের মধ্যে একজন আবার সংসদ সদস্য। ওই চক্রটি ২০ হাজার জনকে কুয়েতে পাচার করে ৫০ মিলিয়ন কুয়েতী দিনার হাতিয়ে নিয়েছেন বলে ধারণা দেয়া হয়েছে ওই দুই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে। কুয়েতী গণমাধ্যম ওই সাংসদের নাম উল্লেখ না করলেও বাংলাদেশের একটি পত্রিকায় লক্ষ্মীপুরের একজন এমপির নাম এসেছে, যিনি কুয়েতে জনশক্তি রফতানি এবং দেশে আর্থিক খাতের ব্যবসায় যুক্ত। তার স্ত্রী নিজেও সংরক্ষিত আসনের একজন এমপি। সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের কাছে এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কোন তথ্য নেই। আমাদের মিশন এখনও খবর দেয়নি, আমরা এখনও জানি না। তবে এটা বোধহয় কোন একটা পত্রিকাতে বের হয়েছিল এবং পরবর্তীতে ওই পত্রিকাই বোধহয় বলেছে যে, এটার সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ আছে।’ গত বুধবার আরব টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ওই সংসদ সদস্য নিয়মিত কুয়েতে আসা-যাওয়া করলেও সেখানে ৪৮ ঘণ্টার বেশি থাকেন না। কুয়েতে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা পাঁচ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। আল কাবাস থেকে উদ্ধৃত করে আরব টাইমস পরে আরেক প্রতিবেদনে লিখেছে, কুয়েতে জনশক্তি রফতানির ছাড়পত্র পেতে কর্মকর্তাদের পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ি ঘুষ হিসেবে দিয়েছেন বাংলাদেশের ওই এমপি। তিনি তার সম্পদের একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নিয়ে এক মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ব্যবসা শুরু করেছেন। রমেক হাসপাতালে চীনা নাগরিক নীলফামারী ও রংপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, নীলফামারীর সৈয়দপুরে উত্তরা ইপিজেডে কর্মরত এক চীনা নাগরিককে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। ইউনিটের মেডিক্যাল বোর্ডের মুখপাত্র ডাঃ নারায়ণ চন্দ্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সৈয়দপুর ইপিজেডে কর্মরত চীনা নাগরিক গত ৪ ফ্রেব্রুয়ারি চীন থেকে বিমানযোগে বাংলাদেশে এসে সরাসরি তার কর্মস্থল উত্তরা ইপিজেডে যান। গত দুদিন ধরে সর্দিজ্বর ও বুকে ব্যথা অনুভব করলে স্থানীয় চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করেন। কিন্তু তার অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় এবং রবিবার সকাল থেকে গুরতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দুপুরে ভর্তি করা হয়েছে। ইউনিটের মুখপাত্র ডাঃ নারায়ণ চন্দ্র জানান, এখানে তার চিকিৎসা চলছে। বিষয়টি ঢাকার আইসিডিআর এ জানানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞ দল এসে তার রক্ত-কফসহ বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে যাবে। প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত কোন মন্তব্য করা যাবে না বলে জানান ওই চিকিৎসক।
×