ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দক্ষিণখানে স্ত্রী ও দুই সন্তান খুন

ঋণশোধে সহায়তা না পেয়ে রাকিব স্ত্রী সন্তানকে হত্যার হুমকি দেন

প্রকাশিত: ১০:২৯, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  ঋণশোধে সহায়তা না পেয়ে রাকিব স্ত্রী সন্তানকে হত্যার হুমকি দেন

আজাদ সুলায়মান ॥ আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ঋণের ৬০ লাখ টাকা না পেয়ে রাকিব উদ্দিন ভুইয়া একাধিকবার হুমকি দিয়েছিলেন- স্ত্রী কন্যা ও ছেলেকে মেরে নিজেও শেষ হয়ে যাবেন। তার হুমকি কেউ আমলে নেয়নি। কিন্তু শুক্রবার যখন সত্যি সত্যিই নিজ হাতে দুই শিশুকে গলাটিপে হত্যার পর স্ত্রীকে হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন করেই ফেললেন- এখন সবাই সেই হুমকির কথাই বলছে। এছাড়া এ সংক্রান্ত একটি চিঠিও উদ্ধার করা হয়েছে- যেখানে রাকিব নিজ হাতে এই ৬০ লাখ টাকা ঋণের কথা উল্লেখ করেছেন। বিভিন্ন সময়ে মানুষের কাছ থেকে এই টাকা তিনি ধার নিয়েছিলেন। পাওনাদারদের চাপের মুখে তিনি মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। যা সহ্য করতে না পেরে সব দায় থেকে চিরমুক্তি পেতে নিজহাতে স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যা করেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও স্ত্রীকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও শিশুদের শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার প্রমাণ মিলেছে। এ অবস্থায় স্বজনদের অনেকেই এখন আফসোস করে বলছে- তার ঋণ পরিশোধে তাকে সম্মিলিতভাবে সবার উচিত ছিল আর্থিক সাহায্য করা। পুলিশ গতকালও এই নরঘাতককে ধরার জন্য রাজধানীর কয়েকটি স্থানে হানা দিয়েছে। তাকে ধরার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টায় মাঠে সক্রিয় রয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাও। র‌্যাব-১ অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল দৈনিক জনকণ্ঠকে রবিবার সন্ধ্যায় বলেন, সব ধরনের কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে রাকিব উদ্দিন ভুইয়াকে আটক করতে। রাজধানীর দক্ষিণখানের প্রেমবাগানের নিজ গত শুক্রবার এক নারী ও দুই শিশু খুন হওয়ার তদন্ত করতে গিয়ে এ ধরনের অবিশ্বাস্য তথ্য পেয়েছে র‌্যাবসহ অন্য গোয়েন্দা সংস্থা। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের তদন্তে দক্ষিণখান থানার পাশাপাশি ডিবি, পিবিআই ও র‌্যাব মাঠে রয়েছে। সব এজেন্সির তদন্তেই এ হত্যাকা-ের নেপথ্যে গৃহকর্তা রাকিব উদ্দিনকেই সন্দেহের শীর্ষে রেখেছে। দক্ষিণখান থানার পুলিশ জানিয়েছে, এ হত্যাকা-ের শিকার প্রত্যেকের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তিন মরদেহের ময়নতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর শনিবার রাতেই গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুন্নী ও তার দুই সন্তানের মরদেহ দাফন করা হয়। ময়নাতদন্ত সম্পর্কে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ এ কে এম মাইনুদ্দিন বলেন তিনটি মরদেহে পচন ধরেছিল। নিহত গৃহবধূ মুন্নীর মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। দুই শিশুকেই শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে আলামত মিলেছে। তিন মরদেহের ভিসেরা, রক্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এসবের চূড়ান্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে। তবে আলামত দেখে প্রাথমিকভাবে স্পষ্ট যে, তিনজনই হত্যাকাণ্ডের শিকার। আলামত সংগ্রহ, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ওই বাসার একটি কক্ষের বিছানায় মা ও মেয়ের মরদেহ এবং অপর কক্ষের মেঝেতে ছেলের মরদেহ পড়েছিল। আঘাতের কারণে মুন্নীর মাথার পেছনে ক্ষত দেখা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি হাতুড়ি উদ্ধার হওয়ায় মনে হচ্ছে, ওই হাতুড়ি দিয়েই আঘাত করা হয়েছিল। এছাড়া ওই ফ্ল্যাট থেকে দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
×