ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাহমুদুল্লাহ বাদ, টেস্ট দলে ফিরলেন মুশফিক

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মাহমুদুল্লাহ বাদ, টেস্ট দলে ফিরলেন মুশফিক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্ট ম্যাচটির জন্য রবিবার বাংলাদেশ টেস্ট দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ২২ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাওয়া এ টেস্টের জন্য ১৬ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে। টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। শুধু মাহমুদুল্লাহই নন, সৌম্য সরকার, পেসার রুবেল হোসেন ও আল-আমিন হোসেনকেও টেস্ট দলে রাখা হয়নি। দলে যুক্ত হয়েছেন মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ। টেস্ট দলে নতুন দুই মুখও আছে। ইয়াসির আলি চৌধুরী রাব্বি ও হাসান মাহমুদকে প্রথমবারের মতো টেস্ট দলে নেয়া হয়েছে। মাহমুদুল্লাহ যে টেস্ট দল থেকে বাদ পড়তে চলেছেন তা আগেই বোঝা গেছে। টেস্টে টানা ব্যর্থতার মধ্যেই যে ছিলেন তিনি। রবিবার তা নিশ্চিত হয়ে গেল। সৌম্যও যে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচটিতে থাকতে পারবেন না, তাও আগেই জানা গেছে। তিনি যে ২৮ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করছেন। ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি নিয়ে রেখেছেন। আল-আমিন ইনজুরিতে থাকায় তিনিও টেস্ট দলে সুযোগ পাননি। তাছাড়া মাহমুদুল্লাহর মতো আল-আমিনকেও সাদা বলের জন্য বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ৩ উইকেট নেয়া রুবেল হোসেনের বাদ পড়া নিয়ে একটু দ্বিধা থাকলেও টেস্ট খেলার মতো পূর্ণ ফিট কিনা তা নিয়ে আছে সংশয়। তাছাড়া লাল বলে রুবেলকে বিবেচনাও করা হচ্ছে না। আর তাই রুবেলও বাদ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৪ সদস্যের দল ছিল। এবার দুইজন বাড়িয়ে ১৬ জনের দল দেয়া হয়েছে। চারটি পরিবর্তন এনে এবার দল গঠন করা হয়েছে। পাকিস্তান সফরের দল থেকে চারজন আউট হয়েছেন। চারজন ইন হয়েছেন। নতুন দুইজনও যুক্ত হয়েছেন। মুশফিক পাকিস্তান সফরে না গেলেও দলে আবার ফিরেছেন। তার ফেরা অনুমিতই ছিল। মিরাজ ইনজুরিতে থাকায় বিপিএলের পর খেলতে পারেননি। আঙ্গুলের চোট এখন সেরে উঠেছে। তিনি খেলার মতো ফিটও। আর তাই আবার দলে যুক্ত হয়েছেন মিরাজ। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুস্তাফিজকে দলে নেয়া হয়নি। তবে এবার নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে (বিসিএল) সর্বশেষ ম্যাচটিতে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজ। আর তাই শেষ মুহূর্তে দলে বিবেচিত হয়েছেন। দেশের গতিময় বোলার তাসকিনও বিসিএলে ভাল খেলে টেস্ট দলে জায়গা করে নিয়েছেন। মাহমুদুল্লাহ, সৌম্য, রুবেল, আল-আমিন ‘আউট’ হওয়ায় টেস্ট দলে ‘ইন’ হয়েছেন মুশফিক, মিরাজ, মুস্তাফিজ ও তাসকিন। সঙ্গে দুইজন নতুন মুখ ইয়াসির ও হাসানকেও নেয়া হয়েছে। টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায় থাকছেন এই দুই ক্রিকেটার। বাকি ক্রিকেটারদের মধ্যে অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুলই থাকছেন। সঙ্গে ওপেনার তামিম ইকবাল, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন কুমার দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, আবু জায়েদ চৌধুরী, এবাদত হোসেন জায়গা ধরে রেখেছেন। মঙ্গলবার থেকে জাতীয় দলের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি ক্যাম্প শুরু হবে। সেই প্রস্তুতি ক্যাম্পে টেস্ট দলে ডাক পাওয়া ক্রিকেটাররা থাকবেন। দলে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হচ্ছেন আটজন। তারা হচ্ছেন- মুমিনুল, তামিম, সাইফ, শান্ত, মুশফিক, লিটন, মিঠুন, ইয়াসির। সঙ্গে মিরাজও থাকছেন। আর বিশেষজ্ঞ স্পিনার তিনজন। তারা হচ্ছেন- তাইজুল, নাঈম ও মিরাজ। পার্টটাইম স্পিনার হিসেবে ইয়াসিরও রয়েছেন। আর পেসার রয়েছেন চারজন। তারা হচ্ছেন- মুস্তাফিজ, এবাদত, তাসকিন ও হাসান। এত পরিবর্তন এনে দল ঘোষণা করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই অনেক প্রশ্নের তৈরি হয়েছে। বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু সব প্রশ্নেরই উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছেন। মাহমুদুল্লাহকে নাকি প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো টেস্ট থেকে অবসর নিতে বলেছেন। এমন জল্পনা সবখানে। কিন্তু নান্নু বললেন, মাহমুদুল্লাহকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। প্রধান নির্বাচক জানান, ‘না না এটা না। একজন সিনিয়র খেলোয়াড়। আমরা চিন্তা করেছি ওকে এই সিরিজ থেকে বিশ্রাম দিয়েছি। দেশের মাটিতে খেলা। তাই নতুন কিছু খেলোয়াড়কে আমরা চেষ্টা করি। কিছু খেলোয়াড়কে আমরা পাকিস্তান সফরের জন্য নিয়েছিলাম। যেটার জন্য একটা বা দুইটা টেস্ট ম্যাচ খেলেছে এমন খেলোয়াড় আছে, ৫টা টেস্ট খেলেছে। এই অভিজ্ঞতাকে আমরা কাজে লাগানোর জন্যই এটা চিন্তা করেছি। অবশ্যই আমরা বিশ্রাম দিয়েছি।’ সঙ্গে মাহমুদুল্লাহর অবসরের কথা নিয়ে যোগ করেন, ‘এটা বলে নাই। অবসরের কথা বলে নাই আমাদের সঙ্গে। আমরা ছিলাম, কি কথা হয়েছে সেটা আমরা জানি। সুতরাং এখানে এ রকম কিছু হয়নি।’ মুস্তাফিজকে এক টেস্ট সিরিজ থেকে বাদ দিয়ে আরেক সিরিজে নেয়া হয়। আবার বাদ দেয়া হয়। আবার নেয়া হয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টে বাদ দিয়ে আবার জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে নেয়া হয়েছে। কেন? প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘আমাদের নির্বাচক প্যানেল থেকে বলা হয়নি। কোচ এটা (বাদ দেয়া, আবার নেয়া) চিন্তা করেছিল। কিন্তু এখন আমরা চিন্তা করছি বিসিএলে ও যেভাবে ফিরে এসেছে। এখন চিন্তা করছি অবশ্যই তাকে রেড বলে বিবেচনা করা যায়। এটা আজকে (রবিবার) সকালেই কোচের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে তখনই আমরা অন্তর্ভুক্ত করেছি।’ প্রায় আড়াই বছর পর আবার টেস্ট খেলার আশায় আছেন তাসকিন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের পর আর জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট খেলতে পারেননি তাসকিন। এবার যখন সুযোগ হয়েছে। একাদশেও দেখা যেতে পারে। তাসকিনকে নেয়ার পেছনে প্রধান নির্বাচক যুক্তি দাঁড় করান, ‘টেস্ট ক্রিকেটে আমরা ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে এখন চাচ্ছি যে যারা জোরে বল করতে পারে, যাদের গতি ১৪০ এর কাছাকাছি, সে হিসেবে ধারাবাহিক একটা লেভেলে স্পিড রাখে সেটা চিন্তা করেই। আমার বিশ্বাস যে অবশ্যই এই ম্যানেজমেন্টের অধীনে আরও ভাল করবে।’ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে আল-আমিনকে না খেলিয়েই বাদ দেয়া হলো। আবার রুবেল ভাল বোলিং করলেন। তাকেও বাদ দেয়া হয়েছে। কেন? নান্নু এ নিয়ে বলেন, ‘আল-আমিন কিন্তু পাকিস্তান সিরিজের আগেই ইনজুরিতে পড়েছে। তো ইনজুরি গুরুতর না। কিন্তু যে ইনজুরি এতে লংগার ভার্সন ম্যাচে পুরোপুরি বল করা ওর জন্য অসুবিধার হতো। দেখেন বিসিএলের এই ম্যাচটাও খেলতে পারছে না সে, যেটা খেলার কথা ছিল। ও কিন্তু রিকভার করতে পারেনি। এটা পুরোপুরি ম্যাচেও একটা লংগার ভার্সনের ক্রিকেটে লম্বা স্পেলে বল করার মতো যদি ফিট না থাকে সেক্ষেত্রে তো ঝুঁকি নেয়া যায় না। ফিটনেস চিন্তা করে ওকে ওয়ানডের জন্য রাখছি।’ রুবেলকে নিয়ে জানান, ‘পরিবর্তন না। ওকে ব্যাকআপ বোলার হিসেবে নিয়েছিলাম। তারপর পাকিস্তানে গিয়ে যেহেতু আল-আমিনের ইনজুরির জন্য ওকে ম্যাচে নিয়েছি। আমাদের ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, টিম ম্যানেজমেন্ট ওকে চাচ্ছে পুরোপুরি রেডি হয়ে ব্যাক করতে পারে। যেহেতু জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে খেলা পেসারদের সেভাবে আধিপত্য থাকবে না। কয়টা পেস বোলার নিয়ে খেলব তার একটা পরিকল্পনা আছে। ম্যানেজমেন্টও দেখতে চাচ্ছে আসলে ওই কারণেই কিছু নতুন খেলোয়াড়কে যেমন হাসান মাহমুদকে নেয়া। রুবেলের ব্যাপারে ম্যানেজমেন্ট থেকেও একটা ভাবনায় আছে রেড বল হোয়াইট বলে ওকে বিবেচনা করার বিষয়ে।’ নতুন দুই ক্রিকেটার এবার যুক্ত হয়েছেন। একজন ব্যাটসম্যান ও পার্টটাইম স্পিনার ইয়াসির এবং আরেকজন পেসার হাসান। এ দুইজনকে নেয়ার পেছনের কারণ জানান নান্নু, ‘ইয়াসির মাহমুদুল্লাহর রিপ্লেসমেন্ট আমরা বলতে পারি না। ইয়াসির রাব্বি আমাদের এইচপির খেলোয়াড়। সে হিসেবে চিন্তা করে, এনসিএলে লংগার ভার্সনে ভাল খেলছে, গত ম্যাচেও ভাল একটা হানড্রেড করেছে। একটা তরুণ খেলোয়াড়ের মধ্যে যদি তেমন কিছু দেখি ওকে এই টিম ম্যানেজমেন্টের অধীনে আরও ডেভেলপ করার সুযোগ দিব। ওকে (হাসান মাহমুদ) যখন আমরা এক বছর আগে এইচপি স্কোয়াডে নিয়েছিলাম তখনই কিন্তু পরিকল্পনা ছিল আমরা যত জোরে বল করতে পারে এমন কাউকে নিব। সেক্ষেত্রে আমাদের জোরে বল করা বোলারের অভাব ছিল যেটা ১৪০ এর কাছাকাছি ধারাবাহিক বল করতে পারে। সে হিসেবে ওর মধ্যে আমরা এই ট্যালেন্টটা দেখেছি। দুর্ভাগ্যবশত মাঝখানে সে কিছুটা লাইনচ্যুত ছিল। আবার কামব্যাক করেছে। যার কারণে সিস্টেমের মধ্যে আমরা ওকে নিয়েছি।’ বাংলাদেশ টেস্ট দল ॥ মুমিনুল হক (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস, মোহাম্মদ মিঠুন, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, আবু জায়েদ চৌধুরী, এবাদত হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, ইয়াসির আলি চৌধুরী।
×