ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বদলি নেমে প্রথম, তবে ইংল্যান্ডের ক্লাব ক্যারিয়ারে শততম গোলের রেকর্ড মানের

প্রিমিয়ার লীগে লিভারপুলকে থামানোর কেউ নেই!

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  প্রিমিয়ার লীগে লিভারপুলকে থামানোর কেউ নেই!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অপ্রতিরোধ্য লিভারপুল। অবিশ্বাস্য জার্গেন ক্লপের দল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে নিজেদের অতীতের সব সেরা পারফর্মেন্সের রেকর্ডকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে অলরেডরা। সেইসঙ্গে একের পর এক নতুন রেকর্ড গড়ছে ইউরোপের সেরা ক্লাবটি। শনিবার নরউইচ সিটির বিপক্ষেও জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে তারা। সাদিও মানের একমাত্র গোলে নরউইচকে হারিয়ে প্রিমিয়ার লীগে ২৫ পয়েন্ট এগিয়ে গেছে লিবারপুল। আর দলের এই পারফর্মেন্সকে ‘উন্মাদ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ক্লাবটির অভিজ্ঞ কোচ জার্গেন ক্লপ। নরউইচের মাঠ ক্যারো রোডে ঘূর্ণিঝড় ডেনিসের প্রভাবে বেশ বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এর মাঝেও শীতকালীন বিরতির পর শেষ পর্যন্ত জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে লিভারপুল। নরউইচকে হারানোর ফলে শীর্ষ প্রতিযোগিতায় ৪৩ ম্যাচে অপরাজিত থাকল অলরেডরা। ২০০৩-০৪ মৌসুমে আর্সেনালের রেকর্ড ৪৯ ম্যাচের তুলনায় আর মাত্র ৬ ম্যাচ দূরে রয়েছে সালাহ-মানে-ফিরমিনোরা। সবমিলিয়ে ৩০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো লীগ শিরোপা জয়ের দিকে দারুণ ছন্দে রয়েছে লিভারপুল। প্রিমিয়ার লীগে গত ৩৫ ম্যাচে ৩৪টিতেই জয়ী এখন লিভারপুল। সম্ভাব্য ১০৫ পয়েন্টের মধ্যে ১০৩ পয়েন্ট অর্জন করেছে তারা। এবারের মৌসুমে ২৬ ম্যাচের ২৫টিতেই জয় পেয়েছে ক্লপের শিষ্যরা। বাকি ম্যাচে ড্র। তাদের সংগ্রহে এখন ৭৬ পয়েন্ট। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে লীগ জয়ী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চেয়ে যা এক পয়েন্ট বেশি। অন্যদিকে লিভারপুলের কাছে এই পরাজয়ে ড্যানিয়েল ফার্কের নরউইচ সিটি টেবিলের একেবারে তলানিতেই থাকল। ১৯তম স্থানে থাকা ওয়াটফোর্ডের থেকেও ৬ পয়েন্ট পিছিয়ে রয়েছে তারা। গত ডিসেম্বরের পর এই প্রথম প্রিমিয়ার লীগের ম্যাচে মূল একাদশে নেবি কেইটাকে সুযোগ করে দেন জার্গেন ক্লপ। পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে ম্যাচ শুরু করা লিভারপুলের মূল দলে ছিলেন না সাদিও মানে। তথাপি ম্যাচের শুরু থেকেই ম্যাচের আধিপত্য নিজেদের করে নেয় সফরকারী লিভারপুল। কিন্তু তেমন ভাল কোন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি তারা। এদিকে নরউইচ খুব অল্প সময়ের জন্য দারুণ কিছু পাসে লিভারপুলকে সমস্যায় ফেলেছিল। ফরোয়ার্ড রবার্তো ফিরমিনো বিশেষ পারফর্মেন্সের মাধ্যমে সকলের মধ্যমণিতে পরিণত হয়েছিলেন। কিন্তু জর্ডান হেন্ডারসনের লম্বা পাস থেকে ফিরমিনো বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন। লুকাস রুপের দারুণ এক পাস থেকে টিমু পুক্কি লিভারপুল গোলরক্ষক এ্যালিসন বেকারকে পরাস্ত করতে পারেননি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই লিভারপুল গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ৫৮ মিনিটে সুযোগ এসে যায় তাদের। কিন্তু কেইটার শট দারুণভাবে রুখে দেন নরউইচ গোলরক্ষক টিম ক্রুল। কিছুক্ষণের মধ্যে ক্রুলের একটি ফিরতি বল থেকে আবারও সুযোগ হারান কেইটা। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে লিভারপুলের কাছ নেয়ার পয়েন্ট কেড়ে নেবার দ্বারপ্রান্তে যখন ছিল নরউইচ ঠিক তখনই মানে ডেডলক ভাঙ্গেন। ৭৮ মিনিটে হেন্ডারসনের কাছ থেকে বল নিয়ে অনেকটা একক প্রচেষ্টায় লিভারপুলকে প্রথম গোল উপহার দেন এই বদলি খেলোয়াড়। লিভারপুলের জার্সিতে লীগে এটা মানের ৫৭তম গোল। আর বদলি হিসেবে প্রথম। সবমিলিয়ে অলরেডদের হয়ে এটা তার ৭৫তম গোল। আর এটাই তার ইংল্যান্ডের ক্লাব ক্যারিয়ারে শততম গোলের মাইলফলক। এর আগে সাউদাম্পটনের হয়ে যে ২৫ গোল করেছিলেন তিনি। এই জয়ের পর দারুণ খুশি লিভারপুলের সফল কোচ জার্গেন ক্লপ। ম্যাচের শেষে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্য কোন খেলোয়াড়ের মুখে নার্ভাসনেস দেখিনি। তারা ম্যাচটি দারুণ উপভোগ করেছে। এই ম্যাচে একটি দল যদি গোল করার যোগ্যতা রাখতো তবে সেটা আমরাই। একই সঙ্গে আমরা কাউন্টার এ্যাটাকগুলো দারুণভাবে প্রতিহত করেছি। লীগে এত বড় ব্যবধান সত্যিই আমার কাছে উন্মাদের মতো মনে হচ্ছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। এই ধরনের অভিজ্ঞতা আমার আগে কখনই হয়নি। তারপরও বলব বিষয়টা মোটেই সহজ নয়।’ প্রিমিয়ার লীগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। তবে রবিবার পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ২৫ পয়েন্টের ব্যবধান গড়েছে লিভারপুল। শুধু তাই নয়, আর্থিক সচ্ছলতায় গুরুতর অনিয়মের দায়ে ইউরোপিয়ান আসরে দুই মৌসুম থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সিটিজেনদের। যে কারণে দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিটিজেনদের সামনে টানা তৃতীয় শিরোপা জয়ের আর কোন সম্ভাবনাই নেই। এদিকে মঙ্গলবার এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শেষ ষোলোর প্রথম লেগের লড়াইয়ে নামবে ক্লপের শিষ্যরা। লিভারপুল সেই ম্যাচের জন্যই এখন নিজেদের প্রস্তুত করছে।
×