ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নদীর জীবন রক্ষায়

প্রকাশিত: ১০:৪২, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

নদীর জীবন রক্ষায়

শুক্রবার আমাদের জন্য স্বস্তিকর সংবাদ দিয়েছে জনকণ্ঠ। ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সারাদেশে নদী, খাল ও জলাশয় রক্ষায় জিরো টলারেন্স নীতি নেয়া হয়েছে। আটঘাট বেঁধে শুরু হচ্ছে উচ্ছেদ অভিযান। আমরা দেখেছি রাজধানীর নদী ও খাল উদ্ধারে ইতোমধ্যে একযোগে অভিযান চালানো হচ্ছে। ঢাকার বাইরে নদী, খাল রক্ষায়ও একযোগে অভিযান শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। রাজধানীর আশপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলীসহ অন্যান্য নদী দখল-দূষণমুক্ত ও নাব্য ফিরিয়ে আনতে আগেই তৈরি করা হয়েছে একটি মাস্টারপ্ল্যান। নদীমাতৃক বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নদীপথের গুরুত্ব কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না, বিশেষ করে মালামাল পরিবহন ও সাশ্রয়ী চলাচলের জন্য। এও সত্য যে, দেশের অধিকাংশ নদ-নদীই বৃষ্টি ও বর্ষা মৌসুম বাদে নাব্য থাকে না। যে কারণে সারা বছর নৌপথগুলো সচল রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেক স্থানে নদ-নদী ভরাট হয়ে শীর্ণতোয়া অথবা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। শুধু তীর নয়, নদী দখলের খবরও আছে। সেসব স্থানে চাষবাস হয়ে থাকে এবং গড়ে ওঠে জনবসতি। সে অবস্থায় নদীর নাব্য উন্নয়ন ও নদী সিকস্তি পুনরুদ্ধার করে অভ্যন্তরীণ নৌপথে সারা বছর নৌচলাচল নিশ্চিত করতে সরকার সদিচ্ছুক। দেশের নদ-নদীতে নাব্য সঙ্কট রয়েছে প্রায় সর্বত্র। নদী ভাঙ্গনের সমস্যাও সুবিদিত। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৮ শতাধিক নদ-নদী এবং ৫৭টি আন্তঃদেশীয় সংযোগ নদী রয়েছে। এগুলোর সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, সিকিম, এমনকি চীনও জড়িত। সুতরাং আন্তঃদেশীয় পানি ব্যবস্থাপনা ও সুসম বণ্টনের ক্ষেত্রেও এসব দেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য। পানি সম্পদের সুষ্ঠু ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নয়ন সহযোগী ১২টি দেশের সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান (বিডিপি) ২১০০’ নামে যুগান্তকারী একটি উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকারের প্রত্যয় দেশবাসীকে স্বস্তি দিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত এই পানি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় আগামী এক শ’ বছরে পানির প্রাপ্যতা, এর ব্যবহারসহ প্রতিবেশ ও পরিবেশগত বিষয়সমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। দেশের সব নদ-নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড় ও জলাশয় রক্ষায় সারা দেশে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে- এটিই প্রত্যাশা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলা ও স্থানীয় প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় সারাদেশে শুরু করেছিল উচ্ছেদ অভিযান, যা পরে থেমে যায়। ১৯৭৫ সালে আমাদের দেশে নদীপথ ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার। বর্তমানে তা কমে এসেছে মাত্র ছয় হাজার কিলোমিটারে। শুষ্ক মৌসুমে তা আরও কমে যায়। এসব নদীর গভীরতাও যাচ্ছে কমে। তার ওপর যদি এভাবে দখল-দূষণ চলতে থাকে, তাহলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে সব নদীপথ। কাজেই নদী দখল রোধ করতে হবে জরুরীভিত্তিতে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে অবিলম্বে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের বেশিরভাগ নদী মরে যাচ্ছে। কোনমতে টিকে থাকা নদীগুলো পড়েছে দখলদারদের হাতে। নদী দখল রোধে উচ্চ আদালত থেকে বারবার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। লেখালেখি হয়েছে পত্রপত্রিকায়। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কতটুকু হয়েছে সেই হিসাবে বসতে হবে আমাদের জাতীয় স্বার্থেই।
×