ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খুর্শিদ রাজীব ও রাশেদ শুভ্র

তারুণ্যের মননে মাতৃভাষা

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 তারুণ্যের মননে মাতৃভাষা

আহা কি যে জাদু মায়ের ভাষা বাংলায়! বাঙালীর ভাষা- বাংলা যেন মায়ের মতোই। মায়ের কোলে যেমন অনাবিল প্রশান্তি, বাংলা ভাষাতেও হাসি-কান্না-রাগ-দুঃখ প্রকাশে সীমাহীন শান্তি। তবে মায়ের থেকে শেখা এই ভাষাতেও বাঙালীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় করতে হয়েছিল সংগ্রাম। বঙ্গদেশের যেমন দ্রোহের ইতিহাস, বাংলা ভাষাও তেমনি সংগ্রামের প্রতীক। হাজারবার হোঁচট খেতে হয়েছে, শকুন-হায়েনার আগ্রাসন ঠেকিয়ে বাঁচতে হয়েছে, সংগ্রামে রক্ত দিয়ে তবেই বাংলা ভাষা আজ বিশ^ব্যাপী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সম্মানের উঁচু কাতারে। এই ভাষাকে নিয়ে তাই বাঙালীর যত গর্ববোধ। রক্তাক্ত আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্বর মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন শুধু ইতিহাসের পাতার কোন ঘটনা নয়, বাঙালী জাতীয়তাবোধ সঞ্চারধারায় সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এই আন্দোলনে প্রাপ্ত জাতিসত্তার অবিনাশী চেতনা বাঙালী জাতিকে ঠেলে দিয়েছিল ঔপনিবেশিক শাসন শৃঙ্খল ভাঙ্গার আরেক মহান সংগ্রাম, যার ফসল আজকের এই ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র- বাংলাদেশ। মাতৃভাষা বাংলা ও ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য সম্পর্কে এমনটাই বললেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেনুতাজ ইসলাম। কিন্তু ভাইয়ের রক্তে কেনা এই ভাষা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা কৃত্রিম সঙ্কট। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, রাজবন্দীদের মুক্তি চাই ও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু চাই’- এই তিন দাবিতেই সূত্রপাত হয় পঞ্চাশের দশকের ভাষা আন্দোলন। মাতৃভাষার জন্য আন্দোলনের আটষট্টি বছর পরেও কি তিনটি দাবি যথার্থভাবে পূরণ হয়েছে? ভাষাটাকে কি তার বর্তমান সন্তানেরা যথাযথভাবে ব্যবহার করছে- তা নিয়ে সচেতন তরুণদের মনে আজ নানা প্রশ্ন, নানা শঙ্কা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাঈদ ইবরাহীম রিফাত মনে করেন, আইন করা হলেও এখনও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শহরের দোকান-বাড়িগুলোর সাইনবোর্ডগুলোর দিকেই তাকালে তা সহজেই ধরে পড়ে। শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাধ্যম হিসেবে ইংরেজীর ঝোঁকটাই বেশি। আকাশ সংস্কৃতির কারণে ইংরেজী ও হিন্দী ভাষার আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে বাংলা ভাষা। এই সংস্কৃতি আমাদের মাতৃভাষাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিবে। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান শান্ত বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আমরা ভাষাটার বিকৃতি ঘটিয়েই চলেছি। বাংলার সঙ্গে ইংরেজী মিশিয়ে জগাখিচুড়ি ভাষায় যোগাযোগ করে নিজ হাতে ভাষাটিকে দুর্বল করে ফেলছি। ফলত শুদ্ধ বাংলা নিয়ে আমাদের মধ্যেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। বাংলা ভাষার এমন অসুস্থ পরিবর্তন ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উম্মে রুমনা লিমা মনে করেন, বিকৃতির হাত থেকে ভাষাটিকে রক্ষার দায়িত্বটা তরুণদের। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তনই পারে ভাষাটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে। আমরা যদি দৈনন্দিন যোগাযোগে শুদ্ধভাবে বাংলা ভাষার ব্যবহার করি, তবেই ভাষাটি রক্ষা পাবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুয়েল মামুন বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশের ভাষাই বিলীন হয়েছে। অনেক ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। বাংলা ভাষার সেই পরিণতি হওয়ার আগে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এখানে শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও দূষণ রোধ করতে সরকারকে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে।
×