ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢালাওভাবে আইপিওয়ের সমালোচনা না করে সুপারিশের আহবান

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ঢালাওভাবে আইপিওয়ের সমালোচনা না করে সুপারিশের আহবান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বর্তমানে একটি কোম্পানিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদনে প্রায় ৪০০ শর্ত পরিপালন করতে হয়। তারপরেও আইপিও’র মান নিয়ে সমালোচনা করা হয়। কিন্তু কেউ মান উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করে না। শনিবার রাজধানীর হোটেল ৭১এ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, আইপিও’র মান উন্নয়নে বিদ্যমান ৪০০ শর্ত ছাড়াও যদি অন্যকোন শর্ত প্রয়োজন মনে করা হয়, তাহলে সে বিষয়ে কমিশনে সুপারিশ করা যেতে পারে। বিএমবিএ’র নবনির্বাচিত কমিটি সুশাসনের বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে বলে জানান ছায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের মূল চালিকা শক্তি আর্থিক হিসাব। এর মান উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এজন্য আইসিএবি এবং এফআরসির সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এছাড়া এ বিষয়ে মার্চ মাসে একটি সেমিনার করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিএমবিএ সভাপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ফান্ড নিয়ে যুগান্তকারী নীতি সহায়তা দিয়েছে। যা ইতিমধ্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আগ্রহ এবং সাহস যোগাচ্ছে। এ সহায়তা কোন প্রকার দান বা ভতুর্কি না। ফলে এটা নিয়ে অপপ্রচার করার কোন কোন সুযোগ নেই। তারপরেও কেউ কেউ বিষয়টিকে ব্যাংকের জন্য অতিরিক্ত চাপ, টেক্সের টাকা ইত্যাদি ভুল ব্যাখা প্রদান করছেন। যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরী করতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হংকংয়ের শেয়ারবাজার খুবই শৃঙ্খল। সেখানেও বছরে তালিকাভুক্ত হওয়া ২০০ কোম্পানির অর্ধেক অভিহিত মূল্যের নিচে চলে আসে। আমরা যে ভারতের শেয়ারবাজারকে অনুসরন করি, সেখানে প্রথমদিনেই অনেক কোম্পানির শেয়ার দর অভিহিত মূল্যের নিচে লেনদেন হয়। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দেশে যেসব কোম্পানির শেয়ার দর বেশি উত্থান-পতন হয়, সেসব শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি। তারা পিই ৩ এর নিচে থাকা শেয়ারেও আগ্রহ দেখায় না। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের বর্তমান পিই ১২ এবং ভারতের পিই ২৮ বলে যোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আমাদের শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি অনুকল ছিল না। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে বিশ্লেষণে বুঝা যায় যে, বাজারে অর্থের যোগান কম ছিল। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরনের জন্য বাজারমধ্যস্থতাকারিদের অংশগ্রহন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সহজ শর্তে ঋণ গ্রহণের সুযোগ করার জন্য অর্থমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছিলাম। কোন প্রকার দান বা ভর্তুকির প্রস্তাব করি নাই। সেই প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। যার দুরদর্শী দিকনির্দেশনা শেয়ারবাজারকে নতুন গতি দিয়েছে। একইসঙ্গে কৃতজ্ঞতা অর্থমন্ত্রী, অর্থ উপদেষ্টা, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব,অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রতি। তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেয়ারবাজার উন্নয়নের জন্য ৬টি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে- শেয়ারবাজারে ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশ গ্রহণ বৃদ্ধি করা, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা ব্যবস্থা করা, আইসিবির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, বাজারে আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা এবং বাজারে আরও ভালো ও মানসম্পন্ন কোম্পানির তালিকাভুক্তির লক্ষ্যে বহুজাতিক কোম্পানী ও সরকারীলাভজনক কোম্পানী আনা। এসব বিষয়াদি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হবে এবং শেয়ারবাজার আরও গতিশীল হবে। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। ছায়েদুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। যা বাজারের গভীরতা বাড়াতে সাহায্য করবে। বহুজাতিক ও বেসরকারি খাতের স্বনামধন্য কোম্পানীকে বাজারে তালিকাভুক্তির বিষয়ে উৎসাহিত করার জন্য নীতিসহায়তা দরকার। বর্তমানে ব্যাংক থেকে সহজে ঋণ পাওয়ায় অনেক কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে চায় না। কারন শেয়ারবাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতার সম্মুখীন হতে হয়।
×