ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কঠোর হচ্ছে বিসিবি

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

কঠোর হচ্ছে বিসিবি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একের পর এক টেস্টে নাজেহাল হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। যেখানে যুব ক্রিকেটাররা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরেছেন, সেখানে জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা খালি হাতে দেশে ফিরছেন। একের পর এক ম্যাচ যাচ্ছে। লজ্জা মিলছে। আর তাই জাতীয় দল নিয়ে বিশেষ ভাবনা করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কঠোর হচ্ছে। বুধবার যুবা ক্রিকেটাররা দেশে ফেরার পর যখন সংবাদ সম্মেলন হল, তখনই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সেই ইঙ্গিত দিয়ে ফেলেন। এমনকি জাতীয় দল চালানোর ক্ষেত্রে কঠোর থাকা কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহকেও স্মরণ করেন। হাতুরাসিংহে কঠোর থেকে যেভাবে সাফল্য বের করে আনতেন, তা স্মরণ করেন। তার সময়ে যে সাফল্য এসেছে, তাও বলেন। এখন থেকে জাতীয় দলের ব্যাপারে তিনি যে হস্তক্ষেপ করবেন, তাও বলেন। তিনি জানান, ‘গত বিশ্বকাপের পর থেকে আমি সেভাবে হস্তক্ষেপ করিনি। বিশেষ করে ভারত সিরিজ থেকে টিম ম্যানেজম্যান্টের সিদ্ধান্তে আমি সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলাম না। আর এখন আমাকে বলা হয় উল্টোটা। যদি আমাকে বলে টস জিতে ব্যাটিং নেবে, পরে দেখি বোলিং নিয়েছে। এসব ব্যাপার আমি বুঝতে পারছি না। দলের পারপরম্যান্সও নিম্নগামী।’ সঙ্গে যোগ করেন, “মনে হচ্ছে আমাকে আবার আগের জায়গায় ফিরতে হবে। সব তদারকি করতে হবে। যেটা করার কারণে আমাকে আপনারা নাম দিয়েছিলেন ‘মি. ইন্টারফেয়ারার’। আমি তো সেসব পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। কিন্তু এখন আমাকে আবার সেই হস্তক্ষেপের জায়গায়ই ফিরতে হবে। কিছু করার নেই। এখন দেখছি যে আবার আগের মতো ওইরকম একটা নাম পড়তে যাচ্ছে।” হাতুরাসিংহের কথা স্মরণ করে বিসিবি সভাপতি বলেন, লক্ষ্য তো ছিল অনেক কিছুই। কিন্তু ছন্দপতন হয়েছে। গত বিশ্বকাপের পর, সত্যি বললে হাতুরাসিংহে চলে যাওয়ার পর থেকেই জাতীয় দলে ছন্দপতন দেখতে পেয়েছি। তারপরও সাকিব একাই টেনে নিয়ে গেছে। কিন্তু তেমন কোনো টিম ওয়ার্ক পাইনি। পেলে হয়তো আরেকটু ভালো করতাম। বিশ্বকাপের পর থেকে তো যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স। আমার তো মনেই হয় না যে এটা বাংলাদেশ দল।’ নিজের ওপরই দায় নিয়েছেন বিসিবি সভাপতি, ‘এজন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী যদি কাউকে করতে হয়, বড় দায়টা আমার নিজেরই। আমি একটু বেশিই ক্রিকেট থেকে সরে এসেছিলাম। সরে আসতে চাচ্ছিলাম আর কী। ভেবেছিলাম, অনেক হয়েছে, আস্তে আস্তে নিজেরাই সব করতে পারবে। এখন দেখছি, আবার আগের মতো হয়ে যেতে হবে।’ জাতীয় দল থেকে ভুল বার্তাও দেয়া হয় বলে দাবি করেন বোর্ড সভাপতি। তিনি জানান, ‘সমস্যা হচ্ছে কী, জাতীয় দলের ক্ষেত্রে টস জিতলে কী নেব, একাদশ কী হবে, কে কত নম্বরে নামবে-আগে এ সবকিছু আমার মুখস্থ ছিল। আমার সঙ্গে আগেই কথা হয়ে যেত। সেটি এখন নেই। বরং উল্টো হয়। এখন যদি জিজ্ঞেস করি, টস জিতলে কী নেব, বলে হয়তো ফিল্ডিং নেব। খেলা শুরুর পর দেখি ব্যাটিং নিয়েছে। কী যে চলছে, আমি কিছু বুঝি না। ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট থেকে এগুলো শুরু হয়েছে। তার আগের ধাক্কা খেয়েছি আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টে। ওখানে যা কথা হলো, মাঠে দেখি সব উল্টা।’ জাতীয় দলের ব্যর্থতায় এখন বিসিবি সভাপতি আবার হস্তক্ষেপ করবেন। আর তিনি হস্তক্ষেপ করা মানেই কথাবার্তাতেই বোঝা যাচ্ছে, কঠোর হতে হবে। না হলে ক্রিকেটাররা হাল ছেড়ে দেন। সিদ্ধান্তগুলো ঠিক থাকে না। তাতে দলও বিপদে পড়ে। একের পর এক লজ্জার হার হচ্ছেও। এই হারগুলো থেকে বাচতে হলে এখন কঠোর হওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথও নেই। তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টে মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের মত দেশের দুই সেরা ক্রিকেটার ছিলেন না। তাতে দলের একাদশে এবং পজিশনগুলোতেও পরিবর্তন আনতে হয়েছে। তাও মাথায় রাখতে হবে। সামনেই জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট রয়েছে। ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজও আছে। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকেই একমাত্র টেস্টটি শুরু হবে। সেদিকেই এখন মনোযোগ থাকছে সবার। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে গত বছর যে লজ্জার হার হয়েছে। এরপর তিনজাতি টি২০ সিরিজ খেলার পর দেশের মাটিতে আর খেলেনি বাংলাদেশ। এ বছর জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট দিয়েই দেশের মাটিতে খেলতে নামবেন ক্রিকেটাররা। দেশের মাটিতে বছরের প্রথম টেস্ট ম্যাচটির দিকেই তাই বিশেষ নজর থাকছে। এ টেস্টে কী হবে? সেই প্রশ্নই থাকছে। টেস্ট দল রবিবার ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যাবে। টেস্টে ভাল করার জন্য দলও হতে হবে ভাল। যতদূর শোনা যাচ্ছে, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে টেস্ট থেকে দুরে রাখা হতে পারে। প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর সঙ্গে মাহমুদুল্লাহর নাকি এ নিয়ে কথাও হয়েছে। মাহমুদুল্লাহকে নির্ধারিত ওভারের খেলা নিয়েই মনোযোগ দিতে বলা হয়েছে। লাল বল বাদ দিয়ে সাদা বলে মনোযোগ দিতে বলা হয়েছে। সামনে অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় টি২০ বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপে যে সাকিব না থাকায় মাহমুদুল্লাহকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। তাই টেস্ট থেকে মাহমুদুল্লাহকে দূরে সরিয়ে রেখে নির্ধারিত ওভারে মনোযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। টেস্টে তার পারফরম্যান্সও খারাপ। যদিও এখনও তা নিশ্চিত নয়। জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট দল ঘোষণা হতেই তা বোঝা যাবে। তবে টানা টেস্ট হারতে থাকায় দেশের মাটিতে একটি টেস্ট জেতার সুযোগ আছে। সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে হলে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ক্রিকেটারও প্রয়োজন। সেই প্রয়োজনীয়তা থেকে মাহমুদুল্লাহকে দলে দেখাও যেতে পারে। যাই হোক, এটা নিশ্চিত যে এখন থেকে আগের মতোই জাতীয় দল নিয়ে বিসিবি সভাপতির কঠোর হস্তক্ষেপ থাকবে। বৃহস্পতিবার প্রধান কোচ ডোমিঙ্গো ও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর সঙ্গে বিসিবি সভাপতির সভাও হয়। খারাপ ফল থেকে বের হতে, ভাল ফল বের করে আনতে জাতীয় দল নিয়ে কঠোর হবেও বিসিবি।
×