ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রান্তিক গ্রাহকদের ডিজিটাল মিটারে বিদ্যুত দেয়া হবে

প্রিপেইড মিটারের বোঝা গরিবের ঘাড়ে নয়

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  প্রিপেইড মিটারের বোঝা গরিবের  ঘাড়ে নয়

রশীদ মামুন ॥ গরিবের ঘাড়ে প্রিপেইড মিটারের বোঝা না চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। একেবারে প্রান্তিক গ্রাহক যাদের মাসিক বিদ্যুত ব্যবহার ২০০ টাকাও নয় তাদের প্রিপেইড মিটারের বদলে ডিজিটাল মিটারে বিদ্যুত সরবরাহ করা হবে। সম্প্রতি সংসদীয় কমিটিকে বিদ্যুত বিভাগের তরফ থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে করে ৬২ লাখ গ্রাহকই প্রিপেইড মিটার আওতার বাইরে থাকবে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং নর্দান ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) এলাকায় বেশি সংখ্যক লাইফ লাইন বিদ্যুত গ্রাহক রয়েছেন। সরকার প্রান্তিক মানুষের জীবন মান উন্নয়নে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুত ব্যবহারকারীদের লাইফ লাইন গ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করে। এই বিদ্যুত সরবরাহ করা হয় উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামে। জাতীয় বাজেট থেকে সরকার লাইফ লাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সূত্র বলছে, এবারও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির যে প্রক্রিয়া চলছে সেখানে লাইফ লাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কথা তারা চিন্তা করছে না। এখন লাইফ লাইন গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি তিন টাকা ৩৩ পয়সা। একজন গ্রাহক লাইফ লাইনে যদি ৫০ ইউনিট বিদ্যুত ব্যবহার করেন তার মাসিক বিদ্যুত বিল আসে ১৬৫ দশমিক ৫০ টাকা। এরসঙ্গে পাঁচ ভাগ ভ্যাট যোগ করলে আট দশমিক ৩২৫ টাকা যোগ হয়। সব মিলিয়ে দাঁড়ায় ১৭৩ দশমিক ৮২৫ টাকা। তবে অনেক গ্রাহকেরই বিদ্যুত ব্যবহার ৫০ ইউনিট পর্যন্ত পৌঁছায় না। কোন কোন ক্ষেত্রে এই ব্যবহার ৩০ থেকে ৪০ ইউনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। অর্থাৎ বিদ্যুত বিল আরও কম আসার কথা। বিদ্যুতের এই বিতরণ ব্যয়ের তুলনায় উৎপাদন ব্যয় দ্বিগুণ। এখন এক ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ছয় টাকার কাছাকাছি। এর সঙ্গে সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যয় যোগ করলে এই ব্যয় আরও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এরপরও প্রান্তিক মানুষ যাতে বিদ্যুত ব্যবহার করে জীবন মান উন্নত করতে পারে এজন্য লাইফ লাইন শ্রেণীর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে না। বিদ্যুত বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, আমি অনেক আলোচনায় লাইফ লাইন গ্রাহকের প্রিপেইড মিটারের প্রয়োজন নেই এমন কথা শুনেছি। তবে এ বিষয়ে বিদ্যুত বিভাগ এত দিন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। সম্প্রতি বিভিন্ন মহল থেকে প্রিপেইড মিটারের বিষয়ে কথা উঠলে বিদ্যুত বিভাগ এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। বলা হচ্ছে যে উদ্দেশ্য নিয়ে লাইফ লাইন গ্রাহককে বিদ্যুত দেয়া হয় তাদের কাঁধে প্রিপেইড মিটার চাপালে তা ব্যর্থ হয়। কারণ প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করলে একজন গ্রাহককে প্রতি মাসে ৪০ টাকা করে ভাড়াই দিতে হয়। এছাড়া কিনে ব্যবহার করতে গেলে একটি সাধারণ প্রিপেইড মিটারের দাম পড়ে দুই হাজার ৫০০ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা আর স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের দাম পড়ে সাত থেকে আট হাজার টাকা। সঙ্গত কারণে প্রান্তিক গ্রাহকের জন্য একটি মিটার কেনাও এক ধরনের চাপ বিবেচনা করে তাদের প্রিপেইড মিটারের আওতার বাইরে রাখা হচ্ছে। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জানানো হয়েছে, প্রান্তিক গ্রাহকদের সুবিধার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সরকার প্রিপেইড মিটার কিনে দিতে চাইলেও বিপুল বিনিয়োগ করতে হয়। যাতে সরকারের ওপর চাপ পড়ে। একেবারে প্রান্তিক গ্রাহকের বিরুদ্ধে বিদ্যুত চুরির অভিযোগ নেই বললেই চলে। এসব গ্রাহক বিদ্যুত বিল বকেয়াও রাখে না। আরইবি সূত্র বলছে মাসে মোট এক হাজার ৮০০ কোটি টাকার বিদ্যুত বিল করে তারা। এরমধ্যে আরইবির বিদ্যুত বিল বকেয়ার পরিমাণ এক দশমিক ১৫ মাস। অন্যদিকে শহরে বিদ্যুত বিতরণকারী কোম্পানির বিল বকেয়া থাকে আড়াই থেকে তিন মাসের। আরইবির একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের লাইফ লাইন গ্রাহকের সংখ্যা ৬২ লাখের মতো। যাদের বেশির ভাগই ২০ থেকে ২২ ইউনিট বিদ্যুত ব্যবহার করে। অর্থাৎ এদের সবার বিদ্যুত বিলের পরিমাণ ১০০ টাকার নিচে থাকে। আমাদের এসব গ্রাহক কখনই বিদ্যুত বিল বকেয়া রাখে না। শহরের উন্নত শিক্ষিত মানুষই বিদ্যুত বিল নিয়ে কারসাজি করেন। কিন্তু গ্রামের প্রান্তিক গ্রাহক সময় মতো বিল দেয়। সঙ্গত কারণে আমরা প্রিপেইড মিটারের জন্য কেন ব্যয় করব। বিদ্যুত বিভাগের অপর এক কর্মকর্তা জানান, অনেক উন্নত দেশে প্রিপেইড মিটার নেই। যে চীন থেকে আমরা প্রিপেইড আনছি সেখানেও ডিজিটাল মিটারে বিদ্যুত ব্যবহার হয়। তবে আমাদের দেশে বিদ্যুত চুরি, সিস্টেম লস এবং শতভাগ বিল আদায়ে প্রিপেইড মিটার ব্যবহার হচ্ছে। এতে বিদ্যুতের সেবার মানও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
×