ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জীবনযুদ্ধে শিক্ষার্থী সিয়াম

প্রকাশিত: ০৭:৩০, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 জীবনযুদ্ধে শিক্ষার্থী সিয়াম

মোঃ সিয়াম (৯)। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে মেঝ। যে বয়সে পড়াশোনার পাশাপাশি সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। ঠিক সেই বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হচ্ছে তাকে। তার বাবা আবদুল জলিল মুন্সী (৪২) ছয় বছর আগে এক দুর্ঘটনায় কোমরে আঘাত পেয়ে পুরোপুরি পঙ্গু হয়ে যান। আর এ কারণে শিশু বয়সেই সিয়ামকে পাঁচ সদস্যের সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। সিয়াম পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার গোসিংগা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি উপজেলা সদর ইউনিয়নের গোসিঙ্গা গ্রামে। সিয়ামের বাবা আবদুল জলিল ছিলেন গাছ কাটার শ্রমিক। সহায় সম্পদ বলতে পৈতৃক জমির ওপর একটি দোচালা টিনের ঘর। তাঁর আয়ের টাকায় চলত দুই ছেলে, এক মেয়ে, স্ত্রীসহ পাঁচ সদস্যের সংসার। অভাবের সংসার হলেও ভালই চলছিল পরিবারের সবার জীবন। কিন্তু ছয় বছর আগে গাছ কাটতে গিয়ে গাছের নিচে চাপা পরে গুরুতর আহত হন তিনি। সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসা করিয়ে বাঁচানো গেলেও তিনি আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান। সিয়ামের মা মোসাঃ লিপি বেগমকে (৩৫)। দুটি গরু বর্গা পালন করেন। এ ছাড়াও অন্যর বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন। যা পান তা সংসারের কাজে ব্যয় করেন। সিয়ামের বড় ভাই মোঃ সায়েম এ বছর সোনামুদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। এত ঝামেলার মধ্যেও নিয়মিত বিদ্যালয়ে যায় সিয়াম। বিদ্যালয় ছুটি শেষে ও ছুটির দিনগুলোতে অন্য সব সহপাঠীদের মতো মাঠে গিয়ে খেলার সময় হয় না তার। জীবিকার তাগিদে পঙ্গু বাবার হুইল চেয়ারে ভ্রাম্যমাণ টং দোকান সাজিয়ে পথে বের হতে হয় ছোট্ট শিশু সিয়ামকে। সিয়ামের এই ভ্রাম্যমাণ টং দোকানে বিক্রি হয় চকোলেট, চুইংগাম, চিপস, চানাচুর। পথচারীদের কাছে এসব পণ্য বিক্রি করে আয়ের টাকা দিয়েমেটান পরিবারের খরচা। সিয়ামের মা লিপি বেগম বলেন, ‘যে বয়সে খেলাধুলা করার কথা, সেই বয়সে সিয়ামকে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। প্রাণ ভরে দোয়া করি সবার সহযোগিতায় আমার সিয়াম যেন মানুষের মতো মানুষ হতে পারে।’ সিয়ামের বাবা আবদুল জলিল বলেন, ‘আয়ের একমাত্র অবলম্বন ছিলাম আমি। এখন হুইল চেয়ারেই বন্দী আমার জীবন। নড়াচড়া করতে পারি না। এখন শিশু ছেলে সিয়ামের ওপর নির্ভরশীল। সিয়ামই এখন তাঁদের পরিবারের আয়ের বড় অবলম্বন। বড় ছেলে সায়েম উপজেলার সোনামদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। ছোট মেয়ে মারিয়ার এখনও স্কুলে যাওয়ার মতো বয়স হয়নি।’ কামরুজ্জামান বাচ্চু, বাউফল থেকে
×