ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার

প্রকাশিত: ০৭:২৬, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে মুজিব আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার প্রবর্তন করা যায় কিনা ভেবে দেখা যেতে পারে এবং মুজিববর্ষ এই ঘোষণা প্রদানের উপযুক্ত সময় হতে পারে। এটি কোন প্রস্তাব নয়, আমার মধ্যে এমনি একটা ভাবনা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিল মুজিববর্ষ উপলক্ষে তাই বলে দিলাম। যে মানুষ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মতো এত বড় এক বিপ্লব ঘটালেন, এ অঞ্চল তথা বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠা করলেন তার নামে একটা আন্তর্জাতিক পুরস্কার ঘোষিত হবে এবং কেবল বঙ্গবন্ধুর নামে, স্রেফ বঙ্গবন্ধুর নামে, এটাইত স্বাভাবিক। হাজার বছরের শোষণ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালী জাতি হাজার বছর লড়াই করেছে, অকাতরে জীবন দিয়েছে। অষ্টাদশ শতক থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়টা ছিল বাঙালী রাজনীতিক- মনীষাদের লড়াইয়ের স্বর্ণযুগ। এ সময়ে ফকির মজনু শাহ, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, হাজী শরীয়তুল্লাহ, সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, তিতুমীর, ঈশা খাঁ, সূর্যসেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ক্ষুদিরাম, অভিরাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস, সিআর দাশ, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, জয়নুল আবেদিন, ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, মীর মশাররফ হোসেনদের তাবৎ লড়াই বুকে ধারণ করে তাদের মাঝখানে থেকে মাথা উচুঁ করে উঠে এলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বিপ্লবী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সকল ব্যর্থতার গ্লানি মুছে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করলেন বাঙালীর স্বপ্নের জাতি-রাষ্ট্র। রাজনীতির বিপ্লবী কবি প্রতিষ্ঠা করলেন স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। এই অঞ্চলে হাজার বছর ধরে যে সামন্তবাদ, জমিদারতন্ত্র, নবাবীতন্ত্র, উপনিবেশবাদ, ব্রাহ্মন্যবাদ, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ চলে আসছিল তার অবসান ঘটিয়ে আঞ্চলিক শান্তি তথা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করলেন। ইতিহাসের ধারায় তিনি হয়ে উঠলেন মহানায়ক মানবিক বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা স্থপতি। সর্বোপরি বিপ্লবী। কিন্তু নরওয়ের অসলো কমিটি বঙ্গবন্ধুকে নোবেল শান্তি পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করে তাদের সাম্রাজ্যবাদী শোষণের প্রমাণ দিয়েছে। অথচ বাংলাদেশ তথা বাঙালী জাতির শান্তির লড়াই ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা ও নারী নির্যাতনকারী পাকিস্তানী বর্বরদের সহযোগী হেনরি কিসিঞ্জারকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদী নেতা ও সর্বাধিনায়ক। তৃতীয় বিশ্ব তথা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের মুক্তির লড়াইয়ের মহান বিপ্লবী বীর। একাত্তরের পাকিস্তানী মিলিটারি বর্বরদের সহযোগী হেনরি কিসিঞ্জার ৩০ লাখ স্বাধীনতাকামী তথা শান্তিকামী বাঙালির হত্যাকারী ও ৫ লক্ষাধিক মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠনকারী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতিনিধি। এই হেনরি কিসিঞ্জারের হাতে মানুষের রক্ত, তবু তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ শান্তি বিনষ্টকারীকে দেয়া হলো নোবেল শান্তি পুরস্কার আর শান্তি প্রতিষ্ঠাকারীকে দেয়া হলো না। এটাই সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র। এমনকি বাংলাদেশ ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা নির্দয় সুদখোর প্রফেসর ডঃ ইউনূছকেও নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হলো। অথচ দেয়া হলো না বাংলাদেশকে আজকের সমৃদ্ধির পর্যায়ে তুলে আনার মহান বিপ্লবী শেখ হাসিনাকে। অথচ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন অর্থাৎ স্বাধীন ভূমি, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সকল প্রকার ভিত্তি দিয়ে গেছেন। সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার পথ ও পাথেয় দিয়ে কাজ শুরু করার মুহূর্তে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন বঙ্গবন্ধু নিহত না হলে ২০/৩০ বছর আগেই বাংলাদেশ আজকের সমৃদ্ধ অবস্থানে উঠে যেত। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা পিতার অবর্তমানে জাতির হাল ধরে আজকের অবস্থানে তুলে এনে প্রমাণ করলেন বাঙালী জাতিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারে না, পারবে না। লক্ষ্য করার বিষয়, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু মাত্র তিন মাসের মধ্যে দেশের বিছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্নির্মাণ করে দেশকে সচল করেন : * তিন মাসের মাথায় একাত্তরের মিত্রবাহিনী ভারতীয় সৈন্য দেশে ফেরত পাঠান * ভারতের সঙ্গে স্থল ও জল সীমানা চুক্তি সম্পাদন করেন * বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময় জিডিপি ৭% পর্যন্ত স্থির থাকে * এর মধ্যে ১৯৭৩ ও ৭৪-এর বন্যার পর যখন কৃষিতে বাম্পার ফলন হয় তখনই বিনামূল্যে সেচ পাম্প, সার, কীটনাশক সরবরাহ করে কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি করেন * মাত্র ৯ মাসের মাথায় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংবিধান রচনা করেন এবং ১৯৭৩ সালে নির্বাচিত জাতীয় সংসদে তা অনুমোদন করেন * অল্পদিনেই সারা বিশ্বের স্বীকৃতি আদায় করেন। কেবল একাত্তরে পাকিস্তানী মিলিটারি বাহিনীর সহযোগী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তাদের কয়েকটি দেশ স্বীকৃতি প্রদান থেকে বিরত থাকে * অল্পদিনেই বাংলাদেশকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মাঝে সম্মানের কাতারে প্রতিষ্ঠা করেন। যে কারণে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে পরিচালনার কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের রোল মডেল এবং তাঁর বিপ্লবী কন্যা শেখ হাসিনা আজ বিশ্বনন্দিত এবং অনুকরণীয় রাষ্ট্রনেতা। তাইতো সেøাগান উঠেছে ‘যতদিন রবে শেখ হাসিনার হাতে দেশ পথ হারাবে না বাংলাদেশ’। ভারতের প্রখ্যাত কবি আমাদের একাত্তরের সুহৃদ অন্নদা শঙ্কর রায় বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে লিখেছেন : ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’ বঙ্গবন্ধুর সেই কীর্তি আজ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল বা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্থাপন করা ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বর্তমানে সম্মানের জায়গায় তুলে এনেছেন। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আজ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত। বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তৃতায় সব সময় ‘আমার গরিব দুঃখী মানুষ’ কথাটি উচ্চারণ করতেন। তিনি এই গরিব-দুঃখী কৃষিজীবী, শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে ইজ্জত দিয়ে কথা বলার জন্য সমাজের শিক্ষিত উচ্চবিত্ত আমলা কর্মচারীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা আজ সেই ইজ্জত প্রতিষ্ঠা করেছেন: * সমাজের অনগ্রসর মানুষকে তুলে আনছেন * গৃহহীনদের গৃহ দিচ্ছেন * বিধবা ভাতা দিচ্ছেন * বয়স্ক ভাতা দিচ্ছেন * মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দিচ্ছেন * গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন * কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি * শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি * মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি * স্বাস্থ্যসেবা গ্রামের জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো * সমাজে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এমনি সব ক্ষেত্রে আজকের বাংলাদেশ বিশ্বের বাঘা বাঘা অর্থনীতিকে পেছনে ফেলে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। যে রাষ্ট্রনেতা বিশ্বব্যাংকের (যার পেছনে আমেরিকা) রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে : * নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো মেগা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেন * রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করতে পারেন * কর্ণফুলী টানেল বানাতে পারেন * গভীর সমুদ্র বন্দর বানাতে পারেন * রাজধানী ঢাকাসহ অনেক শহরে ফ্লাইওভারের জাল বিছাতে পারেন * রাজধানী ঢাকায় মেট্রোরেল বানাতে পারেন * রাজধানীতে আন্ডারগ্রাউন্ড রেল বা সাবওয়ে নির্মাণের সাহস দেখাতে পারেন * উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাতে পারেন * বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে পারেন * যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারেন *দেশকে খাদ্য, বস্ত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে পারেন * জিডিপি ৮.১৫% (শতাংশ) * আজ মাথাপিছু আয় ১৯০৯ মার্কিন ডলার * মূল্যস্ফীতি ৫.৫% (শতাংশ) * গড় আয়ু ৭৩ বছর * শিক্ষার হার ৭৩% (শতাংশ) * রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। এমনি একটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আগামী ১৭ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উদযাপনের পথে এগিয়ে চলেছে। যার কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে এরই মধ্যে। অর্থাৎ বছরব্যাপী মুজিববর্ষের কর্মসূচী পালন শেষে ২০২১-এর ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে বাংলাদেশ। মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ তথা বিশ্ববাসী নতুন করে বাংলাদেশকে আবিষ্কার করবে। এই মাহেন্দ্রক্ষণে ‘মুজিব আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার’ প্রতিষ্ঠা করা অতিরিক্ত চাওয়া কি? এর মাধ্যমে ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার’ সাম্রাজ্যবাদীদের হাত থেকে মুক্তি পাবে। ঢাকা ॥ ১৪ ফেব্রুয়ারি : ২০২০ লেখক : সংসদ সদস্য সদস্য, মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটি সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×