ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বয়স্ক ভাতা

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 বয়স্ক ভাতা

বাংলাদেশ সরকার অতি সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে হরেক রকম কর্মসূচী প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকারের দাবি তার প্রাপ্যটুকু দিতে সরকার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন সঙ্কট ও ঘাটতি মোকাবেলায় নিত্য নতুন কার্যক্রমও বর্তমান সরকারের অনন্য জনবান্ধব কর্মপ্রকল্প। আর এমন সব সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার সঙ্গে সন্নিবেশ হয়েছে ভাতা প্রদানের মতো মহৎ কর্মসূচী। ইতোমধ্যে গর্ভকালীন মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান মা ও গর্ভের শিশুর সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে। হতদরিদ্র প্রসূতি মায়ের অর্থকষ্টে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণেও ব্যর্থ হতে হয়। যা জঠরের শিশু আর মায়ের স্বাস্থ্য সেবায় অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। নতুন করে সরকারের আরও একটি ভাতা প্রদানের কর্মসূচী রয়েছে বলে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সমাজ কল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ জানান। এক উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে মন্ত্রী সংসদকে অবহিত করেন, ভাতা প্রদান কর্মসূচীতে বয়স্ক মানুষকে মাসিক অর্থ দেয়া ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শুরু করা হয়েছে। প্রতিবছর বয়স্কদের ভাতা প্রদানের আওতায় এনে ১০% করে সংখ্যা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। পুরুষ ৬৫ থেকে তদুর্ধ এবং মহিলা ৬২ থেকে শুরু করে এই ভাতা প্রদান কার্যক্রমে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ৪৪ লাখ বৃদ্ধ মানুষকে অর্থ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সমস্ত বয়স্ককে ভাতার আওতায় আনতে সরকারী লক্ষ্যমাত্রা জোরালোভাবে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। সরকারী কর্মচারীরা অবসরের পর পেনশন পান যা তাদের শেষ জীবনের আশ্রয়। কিন্তু বাকিরা যাদের অবস্থান দারিদ্র্যসীমায় কিংবা তার নিচে? তাদের সম্পর্কে ভাবনা শুরু করা হয়েছে গত দশ বছরের উন্নয়ন দশকের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায়। কিন্তু হতদরিদ্র ষাটের ওপরে বয়সের জনগণ বয়স্ক ভাতা পেলেও সবাইকে এখনও পুরোপুরি যুক্ত করা সম্ভব হয়নি। ক্রমান্বয়ে ভাতা প্রকল্পে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারটিও নজরে আনা হচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে সর্বজনীন পেনশন নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যাশা করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যেই দেশের সব বয়স্ক মানুষ তাদের শেষ জীবনে কিছুটা আর্থিক সচ্ছলতা উপভোগ করতে পারবে। বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের গলগ্রহ হওয়া ছাড়া সিংহভাগ বাবা-মায়ের অন্য কোন গতিও থাকে না। আবার নিম্নবিত্তের সন্তানদের পক্ষে পরিবার পরিজন নিয়ে যে মাত্রায় হিমশিম খেতে হয় সেখানে হতদরিদ্র পিতাকে আর্থিক সহায়তা দেয়া এক প্রকার অসম্ভবের পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে। তার ওপর আছে বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়া। পরিণতিতে স্বাস্থ্য সেবায় প্রয়োজনীয় অর্থ সঙ্কুলান এক অনিশ্চিত অবস্থায় গিয়ে ঠেকে। বয়স্ক ভাতা প্রদানের এমন মহৎ কর্মযোগে ষাট পার হওয়া মানুষের জীবনে কিছুটা স্বস্তি এবং প্রশান্তি এনে দিতে পারে। কর্মক্ষমতা হারিয়ে যখন বয়স্করা রোগ, জরা এবং অনিরাপত্তায় ভোগেন সে সময়টুকু সত্যিই বেদনাদায়ক এবং অর্থকষ্টের সীমাহীন দুর্ভোগ। বর্তমান সরকার সাধারণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে যে অতি আবশ্যক এবং প্রাসঙ্গিক কার্যক্রমকে সংযুক্ত করে যাচ্ছে বয়স্ক ভাতা প্রদান সকল মানুষের মাঝে সেটা তারই একটি বৃহৎ কর্মযোগ। সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ হরেক জটিলতা, দীর্ঘসূত্রতা ও দুর্নীতির কোপে পড়তেও বেশি সময় নেয় না। সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদেরও এমন মহৎ কর্মপ্রকল্পে সর্বক্ষণিক নজরদারি করে যাওয়া বিশেষ দায়বদ্ধতা। শুধু তাই নয়, সরকারের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার নিরিখে তা যেন দেশের বয়স্ক গোষ্ঠীর মধ্যে সহজভাবে দেয়া যেতে পারে তেমন ব্যবস্থাও অত্যন্ত জরুরী। সময়ই বলে দেবে কর্মপ্রকল্পগুলো কতখানি মানসম্মতভাবে সবার কাছে পৌঁছে যাবে।
×