নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ সূর্যোদয় সুর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য অবলোকনের সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় আসা পর্যটক দর্শনার্থীর কাছে আকর্ষনীয় ইকোপার্কটির দুই তৃতীয়াংশ সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। এ মুহুর্তে প্রোটেকশনের উদ্যোগ না নিলে আগামি দুই বছরে সম্পুর্ণভাবে নিশ্চিহ্নের শঙ্কা রয়েছে। সিডর আইলার মতো সুপার সাইক্লোন কিংবা বর্ষা মৌসুমের অস্বাভাবিক জোয়ারে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ইকোপার্কটি কয়েক দফায় দফায় বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে অভ্যন্তরীন মনোরম সাজানো লেকটির ছোট ছোট স্থাপনা। লেকটির সেতু, ঘাটলা, গোলঘর, শোভাবর্ধনের বাগান, বেঞ্চি, স্থায়ী ছাতা সব সাগর গিলে খেয়েছে। কুয়াকাটায় আসা পর্যটকরা এখানে এসে খুঁেজ পেতো প্রকৃতির বর্ণিল সুন্দরকে। যদিও এখন এটি শ্রীহীন হয়ে গেছে। তারপরও প্রতিদিন শত শত পর্যটক দর্শনার্থী কুয়াকাটার ইকোপার্কের খন্ডিত অংশের ঝাউবাগানে ঘুরে বেড়ায়।
কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দুরে পূর্বদিকে সৈকত লাগোয়া ইকোপার্কের অবস্থান। চারদিকে ঝাউবাগানে ঘেরা ছিল। কিছুটা পর পর দেয়া ছিল একটু বিশ্রামের জন্য বেঞ্চি। তার উপরে ছিল বিশাল সিমেন্টের স্থায়ী ছাতা। ইকোপার্কটির গহীন অরন্যের মাঝখান দিয়ে একাধিক চলার পথ ছিল। ছিল ছোট্ট ছোট্ট বক্স কালভার্ট। এরই মধ্যে ছিল বিশাল মনোরম লেক। লেকের মাঝখান দিয়ে চলচলের কাঠের ব্রিজ ছিল। যা পেরিয়ে যেতে যেতে দুইপাড়ের সীমাহীন সুন্দরের বিভিন্ন প্রজাতির বনজ, ফলজ, সৌন্দর্য বর্ধনকারী গাছের সমাহার দেখার সুযোগ ছিল। স্বচ্ছ টলমলে পানির মধ্যে বনবিভাগের ফাইবার প্যাডেল বোট ব্যবহার করত। দুইদিকেই ছিল বাঁধানো ঘাট। লেকের মধ্যে ছোট্ট টং ঘর ছিল। ইচ্ছে করলে পিকনিক পার্টির বহর ব্যবহার করতে পারত ইকোপার্ক এরিয়া। এসব এখন গল্পের মতোই রয়ে গেছে আগের দেখা পর্যটক-দর্শনার্থীর কাছে। কালের সাক্ষীর মতো ছোট ছোট স্থাপনার খুটিসহ স্ট্রাকচার বেলাভূমে দাঁিড়য়ে আছে। এসবও কোন এক উত্তাল ঢেউ কিংবা জলোচ্ছ্বাস গিলে খাবে। যাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে।
পর্যটক দর্শনার্থীকে আকৃষ্ট করার পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে কুয়াকাটায় ইকোপার্ক করা হয়। বনাঞ্চল ছাড়াও রয়েছে বিশাল বনভূমি ইকোপার্কের এরিয়ায় ছিল। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের বন অধিদফতরের উদ্যোগে প্রাথমিক পর্যায়ে দুই কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করা হয়। প্রথম দফায় ২০০৬-২০০৭ অর্থ বছরে ২১টি ধাপের মধ্যে ২০টির কাজ সম্পন্ন করতে করা হয়। পরবর্তী ধাপে করা হয় কাঠের ব্রিজ । ওই সময়ে প্রধান ফটক নির্মাণ, মেঠোপথ প্রশস্থ করণ, বক্স ও পাইপ কালভার্ট, ভূমির উন্নয়ন, গোল ঘর ও জেটি নির্মাণ, ফিডার রোড, কার পার্কিং সুবিধা, পিকনিক সেড, টিকেট কাউন্টার, এপ্রোচ রোড, বিশুদ্ধ পানির সংস্থান, অভ্যন্তরীণ পানি সরবরাহ, সিটিং বেঞ্চ, লেক-পুকুর খনন ও বাইরের বিদ্যুতায়ন। এছাড়া ম্যানগ্রোভ ও ননম্যানগ্রোভ এবং শোভা বর্ধনকারী বাগান, বন্য প্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়নে বাগান সৃজনসহ ৪৭ হেক্টর বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির লক্ষাধিক গাছের চারা রোপণ করা হয়। এর বাইরে এক হাজার ৬শ’ ৬৭টি নারিকেল চারাও লাগান হয়। এসব এখন শুধু হারানো এবং স্বপ্নের অতীত।
প্রথমবারে সিডর, পরবর্তীতে আইলায় বিধ্বস্ত হয়ে ইকোপার্ক এরিয়া অনেকটা শ্রীহীন হয়ে যায়। এরপরে ইকোপার্কটি রক্ষায় বিশেষ কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় সাগরের অব্যাহত ভাঙ্গন সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেয়। ভাসিয়ে নেয় ইকোপার্কের ঝাউবাগান, লেকসহ সবকিছু। এখন শ্রীহীন হয়ে গেছে অপার সম্ভাবনার কুয়াকাটার সৌন্দর্যমন্ডিত ইকোপার্ক। বনবিভাগ মহীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আযাদ বলেন, কুয়াকাটা ইকোপার্কটি রক্ষায় এবং সৌন্দর্যবর্ধনসহ প্রয়োজনী উদ্যোগ নেয়ার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়।
সাগরে বিলীন পর্যটকদের প্রিয় স্পট কুয়াকাটা ইকোপার্ক ॥ দুই তৃতীয়াংশ নেই
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: