ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিজ এলাকায় সংবর্ধিত যুবারা

প্রকাশিত: ১২:০২, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

নিজ এলাকায় সংবর্ধিত যুবারা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গত রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ দলের ক্রিকেটাররা। দেশে ফিরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে বুধবার গণসংবর্ধনা পেয়েছেন ইতিহাস গড়া বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ যুব ক্রিকেট দলের ক্রিকেটাররা। বৃহস্পতিবার তারা ফিরেছেন নিজ নিজ জন্মস্থানে। আর নিজ এলাকায়ও সংবর্ধিত হয়েছে তারা। যুব ক্রিকেট দলের অধিনায়ক আকবর আলীর জন্মস্থান রংপুরে, ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও মিডলঅর্ডার তৌহিদ হৃদয় জন্মস্থান বগুড়ায়, পেস বোলার অভিষেক দাস জন্মস্থান নড়াইলে, পেসার তানজিম হাসান সাকিব জন্মস্থান সিলেটে এবং শাহাদাত হোসেন দীপু জন্মস্থান চট্টগ্রামে গিয়ে মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন। অধিনায়ক আকবরকে রংপুরে অভ্যর্থনা নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ যুব বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক আকবর আলী ফিরেছেন তার গ্রামের বাড়ি রংপুরে। বিশ্বজয়ের পর এটাই তার প্রথম নিজ জেলায় ফেরা। তার শৈশব-কৈশোরের স্বর্ণালি দিনগুলো কেটেছে এই রংপুর শহরের পশ্চিম জুম্মাপাড়া মহল্লায়। আর তাকে বরণ করে নিতে উৎসবের আমেজ ছিল পুরো রংপুরসহ তার নিজ মহল্লায়। আকবর আলীর রংপুরে আগমনে উৎফুল্ল পুরো রংপুরবাসী। বৃহস্পতিবারই ঢাকা থেকে বিমানযোগে দুপুরে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আসেন নায়ক আকবর। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের কর্তারা। পরে সেখান থেকে তাকে কার, মাইক্রো, মোটরবাইকের বিশাল বহরে করে রংপুরে নেয়া হয়। তার নিজ পাড়ায় প্রবেশ পথে নগরীর কৈলাশ রঞ্জন স্কুল গেটের সামনে থেকে ফুল বিছানো গালিচায় ফুলে ফুলে সিক্ত হয়ে মা-বাবার কোলে গিয়ে পৌঁছান আকবর। সেখান থেকে বিকেলে তাকে আনা হয় সংবর্ধনা মঞ্চে। আতশবাজি, মিউজিক্যাল সাউন্ড শো, আর লাল সবুজের পতাকায় বিকেলের পর পশ্চিম জুম্মাপাড়া হয়ে উঠেছে বর্ণিল। সেখানে পাড়া-মহল্লাজুড়ে একটাই নাম উচ্চারিত হচ্ছে ‘আকবর দ্য গ্রেট’। ‘আকবর, আকবর’ স্লোগানে যেমন উচ্ছ্বাসিত রংপুর, তেমন ‘আকবর দ্য গ্রেট’ নামেও আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠেছে রংপুরের। সর্বস্তরের ছোট, বড় বয়সী মানুষের মাঝে আনন্দে উচ্ছ্বাসের দিন এসেছে। সকাল থেকেই আকবরের বাড়ির সামনেই জমায়েত হয়েছেন তারা। আকবরকে সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে রংপুরে নেয়ার পথে মোড়ে মোড়ে হাত উঁচিয়ে ও ফুল ছিটিয়ে সংবর্ধিত করেন রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাজারও মানুষ। আর দুপুরে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত গণসংবর্ধনায় ভালবাসার ফুল, শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদে সিক্ত হন আকবর। সংবর্ধনা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আনোয়ারুল আসলাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট গাফিয়া খানম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম-লসহ অন্যান্য নেতা। বগুড়ায় নিজভূমে দুই বিজয়ীকে বরণ সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বিশ্বকাপ জয়ী বাংলাদেশ যুব ক্রিকেট দলে ছিলেন বগুড়ার গর্বিত দুই বিজয়ী তৌহিদ হৃদয় ও তানজিদ হাসান তামিম। তাদের নিজভূমে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ভালবাসায় বরণ করে নিয়েছে বগুড়াবাসী। বৃহস্পতিবার সকালে সড়ক পথে ঢাকা থেকে বগুড়া পৌঁছুলে নগরীর প্রবেশ দুয়ার বনানীতে তাদের বরণ করে নেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাসহ হাজারও মানুষ। এ সময় শহীদ চান্দু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার জামিলুর রহমান ও কর্মকর্তাগণ দুই ক্রিকেটারকে ফুলের মালা পরিয়ে দেন। এরপর জাতীয় পতাকা উড়িয়ে পুলিশ নিরাপত্তায় তাদের নেয়া হয় শহরের কেন্দ্রস্থল বীরশ্রেষ্ঠ স্কোয়ারের কাছে স্থাপিত মুজিববর্ষ উদযাপনের মুক্ত মঞ্চে। হাজারও ভক্তদের মধ্যে মঞ্চে উঠে হাত নেড়ে মানুষের ভালবাসায় সিক্ত ক্রিকেটারদ্বয় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারা সম্প্রতি প্রয়াত বগুড়ায় তাদের ক্রিকেট কোচ মোসলেম উদ্দিনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ক্রিকেটারদ্বয় বলেন, ‘এই বিজয় বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের। বিশ্বের মানুষের কাছে বাংলাদেশের ক্রিকেট তারুণ্যর বিশ্বকাপে বিজয়ের সাফল্য তুলে ধরতে পেরে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ দল গর্বিত। এই ধারা অব্যাহত রেখে আগামীতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিশ্বকাপে বিজয়ী হতে আত্মপ্রত্যয়ী। বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটার হৃদয়ের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নাংলু পশ্চিমপাড়া গ্রামে। সে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা এনামুল হক ও রেহেনা আক্তার ময়না দম্পতির ছেলে। ক্রিকেটার তানজিদ হাসান তামিমের বাড়ি বগুড়া সোনাতলা উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামে। সে স্বাস্থ্য পরিদর্শক তোজাম্মেল হক ও তাহমিনা বেগম দম্পতির ছেলে ও বগুড়া জেলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাগণ জানান শীঘ্রই বিশ্বকাপ বিজয়ী বগুড়ার দুই বীরকে গণসংবর্ধনা দেয়া হবে। সিলেটে জয়ের মালা পরলেন সাকিব স্টাফ রিপোর্টার সিলেট অফিস ॥ বিশ্বকাপ জয় করে জন্মস্থান সিলেটে ফিরে জয়ের মালা পরলেন তানজিম হাসান সাকিব। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাকিব সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর এসে পৌঁছুলে তাকে ফুল ও ভালবাসায় বরণ করা হয়। এ সময় সিলেট-৩ আসনের সাংসদ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কয়েস, সাকিবের বাবা-মা, স্বজন ও ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন। তবে সাকিবকে সিলেটের মাটিতে অভিনন্দন জানাতে সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থা বা সিলেটের ক্রিকেট সংগঠকদের কেউ বিমানবন্দরে না আসায় সাকিবের মা-বাবার কণ্ঠে ছিল আক্ষেপের সুর। বিমানবন্দর থেকে নগরীর হাউজিং এস্টেটে চাচার বাসায় যান সাকিব। সেখানে কেক কাটা শেষে ফিরে যান গ্রামের বাড়ি বালাগঞ্জে। অভিষেককে বরণ নড়াইলবাসীর নিজস্ব সংবাদদাতা, নড়াইল ॥ জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজাকে দেখে ক্রিকেটে এসেছিলেন অভিষেক দাস। অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে মাত্র দুই ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেও ফাইনালে ভারত অনুর্ধ-১৯ দলের বিপক্ষে বোলিং করার সুযোগ পান এ পেসার। সেই সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন তিনি। বিশ্বকাপ জেতানোর পেছনে দারুণ ভূমিকা পালন করেন অভিষেক। অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেটার অভিষেক দাসকে বরণ করে নিল নড়াইলবাসী। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে নভোএয়ারের একটি ফ্লাইটে যশোর বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান অভিষেক দাস অরন্য। বিমানবন্দরে বাবা অসিত দাস, মা অরুণা দাসসহ পরিবারের লোকজন অভিষেককে মালা পরিয়ে বরণ করেন। তারপর গাড়িতে করে যাত্রা নড়াইলের উদ্দেশে। তাকে বরণ করতে নড়াইল শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে নড়াইল-যশোর সড়কের গাবতলা এলাকায় উপস্থিত হয় শতাধিক মোটর সাইকেল, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার নিয়ে আত্মীয় স্বজন-বন্ধু বান্ধবসহ অসংখ্য অভিষেকপ্রেমী। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা তিনটার দিকে নড়াইল শহরে প্রবেশ করে। শোভাযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জাতীয় ক্রিকেটে ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফী বিন মত্তুর্জা এমপির বাড়িতে যায়। এ সময় মাশরাফির মা হামিদা বেগম বলাকা ও বাবা গোলাম মোর্তজা স্বপনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন অভিষেক। তারা অভিষেককে মিষ্টি খাইয়ে দেন। এ সময় মাশরাফির মা-বাবা অভিষেকসহ অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের জন্য দোয়া কামনা করেন ও শুভেচ্ছা জানান। পরে শোভাযাত্রাটি অভিষেককে নিয়ে তার বাড়ি শহরের বাঁধাঘাট এলাকায় যায় এবং ঐ স্থানে স্থানীয়ভাবে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধনায় অভিষেক বলেন, ‘আপনারা আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন, আমি যেন এর থেকে ভাল কিছু অর্জন করতে পারি। বাংলাদেশকে ভাল কিছু উপহার দিতে পারি সে চেষ্টা আমি করব।’ চট্টগ্রামে ভালবাসায় সিক্ত শাহাদাত স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে এসে ক্রিকেটপ্রেমী ও সাধারণ মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী ক্রিকেট দলের সদস্য শাহাদাত হোসেন দিপু। বৃহস্পতিবার তিনি চট্টগ্রামে আসেন। দুপুরে মহানগরীর শুলকবহর এলাকার বাসায় ফেরার সময় তাকে এলাকাবাসী সংবর্ধিত করে। প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটার শাহাদাতের বাড়ি পটিয়া উপজেলার হাবিলাস দ্বীপ ইউনিয়নের চরকানাই গ্রামে। তবে পিতার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চাকরির সুবাদে ১৯৮৩ সাল থেকে পরিবারটির বসবাস বন্দরনগরীর শুলকবহর এলাকায়। এলাকাবাসীর উচ্ছ্বাসে তিনি নিজেও উচ্ছ্বসিত হন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সকলের লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সে জন্য দু’বছর ধরে পরিশ্রম করেছিলাম। এ সময়ের মধ্যে আমরা ভালও খেলেছি। ইংল্যান্ডে, নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ক্রিকেট খেলেছি। এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছি। ফাইনালে ৫ রানে হেরে গেলেও বিশ্বকাপকে টার্গেট নিয়েই প্রস্তুতি নিয়েছি, যার ফল পেয়েছি।’ মাহমুদুল ও শামীমকে চাঁদপুরে সংবর্ধনা নিজস্ব সংবাদদাতা, চাঁদপুর ॥ অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপ জেতানো দলের অন্যতম দুই সদস্য ছিলেন চাঁদপুরের কৃতী সন্তান মাহমুদুল হাসান জয় ও শামীম হোসেন পাটওয়ারী। বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে নিজেদের এলাকায় পৌঁছেন তারা। চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলার এ দুই কৃতী সন্তানকে সংবর্ধনা দিয়েছে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন। দুপুরে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। দুই খেলোয়াড়কে ফুল দিয়ে বরণ করেন চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। এছাড়াও চাঁদপুর ক্রিকেট উপ-কমিটি, চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতি, চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম, চাঁদপুর ফটো জার্নালিস্ট এ্যাসোসিশেন দুই খেলোয়াড়কে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। পরে শামীম ও জয় উপস্থিত ক্রীড়ামোদীদের উদ্দেশে অনুভূতি প্রকাশ করেন। ঢাকা থেকে বৃহস্পতিবার শামীম ও মাহমুদুল লঞ্চযোগে চাঁদপুরে আসলে সর্বস্তরের জনসাধারণ তাদের লঞ্চঘাটে ফুল দিয়ে বরণ করেন। এ সময় শত শত ক্রীড়ামোদী লঞ্চঘাটে ভিড় জমায়। দুপুরে তাদের নিজ উপজেলা ফরিদগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা প্রদান করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম রোমান ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা। এ সময় এ দুই ক্রিকেটার বলেন, ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জনে আমরা খুবই আনন্দিত। প্রশাসন ও ক্রীড়া সংস্থার তাৎক্ষণিক সংবর্ধনায় আমরা খুবই উৎসাহিত। ভবিষ্যতে আরও ভাল করতে আপনাদের দোয়া চাই।’
×